বাংলাদেশি পরিচয় পেলে এখনও জাপানিরা জানতে চায় ওই হামলার কথা, নিহত ৭ জাপানির কথা।
প্রবাসীরাও বলছেন, বছরজুড়েই জাপানে আলোচনায় ছিল গুলশানে হামলার ভয়ঙ্কর সেই রাত; বাংলাদেশে জঙ্গি পরিস্থিতি এবং তা দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের খবরও ফলাও করে প্রচার হয়েছে জাপানি গণমাধ্যমে।
প্রবাসীদের ভাষ্য, বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে এখনও পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয় জাপান, যে কারণে এখনও ওঠেনি জাপানিদের বাংলাদেশ ভ্রমণে সর্তকর্তা; নিরাপত্তার অজুহাতে পেছাচ্ছে ব্যবসায়িক লেনদেনও।
আলোচনায় আছে জাপান প্রবাসী বাংলাদেশি সাইফুল্লাহ ওজাকির নামও, যাকে বাংলাদেশে জঙ্গি কার্যক্রমের অন্যতম প্রধান অর্থদাতা হিসেবে সন্দেহ করছে পুলিশ।
বিদেশিদের কাছে আকর্ষণীয় ঢাকার গুরশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে গত বছর ১ জুলাই রাতে হামলা করেন পাঁচ জঙ্গি। তাদের রুখতে গিয়ে বোমা হামলায় নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা।
উৎকণ্ঠার রাত পেরিয়ে সকালে সেখানে কমান্ডো অভিযানে হামলাকারী পাঁচ তরুণ ও ক্যাফের এক পাচক নিহত হন। ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনের লাশ।
নিহত সাত জাপানি হলেন- নাকা হিরোশি, সাকাই ইউকু, কুরুসাকি নুবুহিরি, ওকামুরা মাকাতো, শিমুধুইরা রুই, হাসিমাতো হিদেকো ও কোয়ো ওগাসাওয়া। আহত হন ওয়াতানাবে নামে আরেক জাপানি। এরা সবাই বাংলাদেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সম্পৃক্ত ছিলেন।
ওই ঘটনার পর থেকে বছরজুড়ে জাপানিদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের।
“আমাদের মনে এখনও শঙ্কা রয়েছে। ওই ঘটনার পর পরই আমার নিজের কর্মস্থলে বেশ কয়েকবার জাপানি সহকর্মীদের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তখন বছরব্যাপী বাংলাদেশের জঙ্গি হামলার বিষয়ে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ তুলে ধরতে হয়েছে,” বলেন সাইমুম সাহাদাত সায়েম নামের এক প্রবাসী।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গুলশানের ঘটনার পর প্রবাসী বাঙালিদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডও জাপানি গোয়েন্দা নজরদারিতে ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে।
“জঙ্গি দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সফলতার চিত্র জাপানি গণমাধ্যমগুলোতে ফলাও করে প্রচার করায় আমাদের প্রতি কিছুটা আস্থা বেড়েছে।”
ঘটনার পর থেকেই জাপান সরকারও বারবারই বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে। দেশটির সরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাইকাও বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
গুলশানে হামলার ঘটনার পর প্রথম দিকে অনেকেই ভয়ে ভয়ে সময় কাটিয়েছেন বলে জানান প্রবাসী পি আর প্লাসিড।
“অনেকেই সেসময় কর্মক্ষেত্রে, রাস্তাঘাটে লজ্জা আর ভয়ের মধ্যে সময় কাটিয়েছে। এখন ওই ভয়ের কথা আর কাউকেই বলতে শুনি না। অনেকেই যেন ভুলে গেছে এক বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা।”
তবে জঙ্গি হামলার কারণে জাপানিরা বাংলাদেশে বিনোয়োগ থেকে কিছুটা সরে এসেছে বলে মনে হচ্ছে তার।
“ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে জাপানের অনেক ব্যবসায়ীর সাথে সরাসরি কাজ করেছি। আগামীতেও তাদের নিয়ে দেশে কাজ করার কথা ভেবেছিলাম। ওরা কেউই এখন আর আমাদের দেশে যেতে এবং কোনো ধরনের ইনভেস্ট করার কথা ভাবছে না। বাংলাদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রেও অনেকের আর আগের মত আগ্রহ দেখছি না।”
পি আর প্লাসিডের সঙ্গে একমত নন রবীন্দ্র গবেষক প্রবীর বিকাশ সরকার।
“বাংলাদেশ তো আর ইচ্ছে করে তো জাপানিদের মারেনি। এটা চলমান বিশ্ব পরিস্থিতির একটা ঘটনামাত্র। প্রবাসী বাংলাদেশিরা এই ঘটনায় যথেষ্ট সচেতন এবং তারা ঘটনার বিভিন্ন দিক স্মরণে রেখেছে বলে মনে করি।”