সৌদির চিঠি: ঈদ মানে ভেসে ওঠে স্বদেশের মুখ

সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে।

মো. শফি উল্লাহ, সৌদি আরব থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2017, 01:47 PM
Updated : 25 June 2017, 01:47 PM

সৌদি আরবে রিয়াদ , জেদদা ,দাম্মামসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহরে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে উদযাপিত হচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর।

রোববার ফজরের নামাজ আদায়ের পরপরই দলবেধে ঈদের জামাতে অংশ নিতে রওনা হন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

রিয়াদে ঈদের প্রধান জামাত ধীরা জাতীয় মসজিদে সকাল সোয়া ৫টায় অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের খুতবায় বিশ্ব মুসলিম উম্মার সুখ, শান্তি ও উন্নতি কামনা করেন সৌদি গ্র্যান্ড মুফতি, যা সৌদি আরবের প্রতিটি মসজিদে শোনানো হয়। 

জাতীয় মসজিদের ভেতরে প্রথম সারিতে ঈদের নামাজ আদায় করেন সৌদি আরবের বেশ কয়েকজন আমির এবং শেখ ।

প্রবাসী বাংলাদেশিরাসহ অন্যান্য সকল মুসলিম নামাজ শেষে চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

ফজরের নামাজ আদায়ের পর মুসুল্লিরা ঈদের নামাজের আগ পর্যন্ত মসজিদের ভেতরেই জিকিরে মগ্ন থাকেন।

প্রবাসে ঈদের অনুভুতি কেমন জানতে চাইলে তরুণ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, “প্রবাসে ঈদের আনন্দ বলতে কিছু নেই।  বন্ধুদের সঙ্গে ঈদের নামাজ পড়ে আসার পর, ঘুমছাড়া আর কিছুই নেই।

“ঘুম থেকে উঠে দেশে ফোন করে পরিবার পরিজনের সঙ্গে কথা বলা।”

এদিকে, ঈদুল ফিতর উদযাপনের সময় যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে সৌদি সরকার।

দীর্ঘ ২৫বছর সৌদিতে অবস্হানরত আল হকার কোম্পানির জহিরুল ইসলাম বলেন, “ঈদের সময় কোম্পানির কাজ বেশি থাকায় দেশে যেতে পারিনা । দেশে সবার সাথে ঈদ করতে ইচ্ছা করে।”

দেশে ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদ দেখার জন্য অগণিত মুসলিম আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবেন।  

শাওয়ালের চাঁদ দেখতে পাওয়া মানে রাত পোহালে ঈদ। পবিত্র কোরআন নাজিল ও মাগফিরাতের মাস রমজান শেষে ঈদের চাঁদ দেখামাত্র ছোট-বড়, ধনী-গরিব প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ে বইবে আনন্দের ঝরনাধারা।

ধ্বনিত হবে ‘আজকে খুশির বাঁধ ভেঙেছে, ঈদ এসেছে ভাই ঈদ এসেছে/শাওয়ালের চাঁদ ওই উঁকি দিয়েছে, ঈদ এসেছে ভাই ঈদ এসেছে।’

ঈদ মানে আনন্দ, আর এই আনন্দটা তখনই পরিপূর্ণ হয় যখন তা পরিবারের সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া যায়।

আর যারা প্রবাসে থাকেন, ঈদ তাদের  জন্য এক ভিন্ন অনুভূতি নিয়ে আসে। কারণ, প্রবাসে অনেকেই পরিবার-পরিজন, প্রিয়তম স্ত্রী, মমতাময়ী মা, প্রিয় বাবা, স্নেহের সন্তান, আদরের ভাইবোন ছাড়া ঈদের দিনটি অতিবাহিত করি। আর তাই ঈদের দিনটা এখানে অনেকটাই আনন্দ-বেদনায় মিশ্রিত একটা দিন। প্রবাসীদের মনটা থাকে দেশে আর দেহটা থাকে বিদেশে।

বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশেই প্রবাসীদের পরিবারবিহীন একাকি থাকতে হয়। আর জীবনসংগ্রামের এই চ্যালেঞ্জ নিয়েই প্রবাসীরা ঈদ উদযাপন করেন। টেলিফোনে অথবা স্কাইপে, ভাইবারে বা ম্যাসেঞ্জারে প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলেন। অনেকেই হয়তো মরুভূমির মরীচিকায় নিজের দুঃখটাকে মিশিয়ে দিয়ে কাজেও যান।

ঈদ এলেই প্রবাসী বাংলাদেশিদের মনের ক্যানভাসে যে চিত্রটি ফুটে ওঠে, তা হলো স্বদেশের মুখ। কেমন আছেন স্বজন? প্রবাসে ঈদের আনন্দ মানেই হচ্ছে এক ধরনের তীব্র শূন্যতা।

কথাটি সব প্রবাসীই স্বীকার করবেন একবাক্যে। তার কারণ হচ্ছে, ঈদের দিনটি এলেই এক ধরনের নস্টালজিয়া মনটাকে ভারি করে তোলে। ফেলে আসা সেই শহর কিংবা গ্রাম, সেই আড্ডা, সেই মধুর স্মৃতি, মা-মাতৃভূমির টান বুকের পাঁজরে দোল খেয়ে যায়। আহা! সোনার আলোয় ভরা সেই দিনগুলো ।

প্রতিবছর ঈদ আসে হাসি, আনন্দ আর ভালবাসা নিয়ে। ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয় রিয়াদের বাথায় বসবাসকারী কর্মীদের, তাদের জীবনে ঈদের আনন্দ একটি সোনালি স্বপ্ন। প্রভাসী অন্যান্য সবার মধ্যে ঈদের যে ব্যাপক প্রস্তুতি দেখা যায় তার বিন্দুমাত্রও স্পর্শ করে না তাদের। 

কারণ বাথাসহ বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা গুলোতে ঈদের ছুটিতে সকল বাংলাদেশি একত্রিত হয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান , দোকানপাট সব খোলা থাকে এসময়।

ঈদ আনন্দের আসল ভাগিদার হচ্ছেন যারা এক মাস রোজা রেখে অভুক্ত থাকার কষ্টকে অনুভব করেছেন, তারাবিসহ সব নামাজ, ইবাদত-বন্দেগি এবং ইসলামের অনুশাসন পালন করেছেন, তাদের জন্য এই ঈদ আনন্দ বেশি উপভোগের, উচ্ছ্বাসের ও শান্তির।

বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশ হলো সৌদিআরব। দেশটিতে প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!