বিপুল ভোটে জয় টিউলিপের

দুই বছর আগে যেখানে এক হাজার ভোটে জিতেছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক, এবার সেই ব্যবধান ১৫ হাজারে নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে ঢুকতে চলেছেন বঙ্গবন্ধুর নাতনি।

তৌফিক ইমরোজ খালিদী, যুক্তরাজ্য থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2017, 04:20 AM
Updated : 9 June 2017, 02:40 PM

বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনে টিউলিপের মতো জিতেছেন আরও দুই বাংলাদেশি নারী রুশনারা আলী ও রূপা হকও।

তিন কন্যাই লেবার পার্টির প্রার্থী ছিলেন। ভোট গণনায় লেবারদের দুই বছর আগের চেয়ে ভালো ফল দেখা যাচ্ছে, তবে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের আভাসই দেখা যাচ্ছে।

৩৫ বছর বয়সী টিউলিপ প্রার্থী হন লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে। ২০১৫ সালে নিজের প্রথম নির্বাচনে রক্ষণশীলদের শক্তিশালী প্রার্থীকে ১ হাজার ১৩৮ ভোটে হারিয়েছিলেন টিউলিপ। পরে তিনি বিরোধী দলনেতা জেরমি করবিনের ছায়া মন্ত্রিসভারও সদস্য হয়েছিলেন।

টিউলিপ গতবার পেয়েছিলেন ২৩ হাজার ৯৭৭ ভোট; তার প্রতিদ্বন্দ্বী রক্ষণশীল দলের প্রার্থী পান ২২ হাজার ৮৩৯ ভোট।

শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ এবার ভোট বাড়িয়ে পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৪৬৪টি; অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোট কমে হয়েছে ১৮ হাজার ৯০৪টি। বৃহস্পতিবার রাতে ভোট গণনার পুরো সময় মা ছাড়াও স্বামী ক্রিস পার্সি, ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও ছোট বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী টিউলিপের পাশে ছিলেন। 

এবার যুক্তরাজ্যে ভোটারদের সংখ্যা বেড়েছিল, যাদের অধিকাংশই তরুণ; এতে স্পষ্ট তরুণদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি।

জয়ের পর টিউলিপ বলেন, “আমি ওয়েস্টমিনস্টারে হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্নের হয়ে সরব হব, হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্নে ওয়েস্টমিনস্টারের হয়ে নয়।”

আগাম নির্বাচনে এই জয়ের পর ব্রেক্সিট নিয়ে দর কষাকষির দিকেও নজর রাখবেন বলে জানান এই পার্লামেন্ট সদস্য।

সৈয়দ নাহাস পাশার ক্যামেরায় ভোট গণনার সময় মায়ের সঙ্গে টিউলিপ

শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ও শফিক সিদ্দিকীর মেয়ে টিউলিপ লন্ডনের মিচামে জন্মগ্রহণ করেন। টিউলিপের শৈশব কেটেছে বাংলাদেশ, ভারত ও সিঙ্গাপুরে। লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে পলিটিক্স, পলিসি ও গভর্মেন্ট বিষয়ে তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গ্রেটার লন্ডন এবং সেইভ দ্য চিলড্রেনের সঙ্গে কাজ করেন টিউলিপ, যিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টির সদস্য হন।

২০১০ সালে ক্যামডেন কাউন্সিলে প্রথম বাঙালি নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হন টিউলিপ। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে স্থানীয় পার্টির সদস্যদের ভোটে টিউলিপ হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে লেবার পার্টির হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার টিকেট পান।

লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসন থেকে প্রার্থী হয়ে গতবার মাত্র ২৭৪ ভোটে জেতা টিউলিপের মতোই প্রথম পার্লামেন্ট সদস্য হয়েছিলেন কেমব্রিজের ডিগ্রিধারী রূপা।

রূপা হক পেয়েছেন বিশাল জয়

দুই বছরের ব্যবধানে এবার ১৩ হাজার ভোটে জিতেছেন রূপা। তিনি পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৩৭ ভোট; তার প্রতিদ্বন্দ্বী রক্ষণশীল দলের প্রার্থী পান ১৯ হাজার ২৭২ ভোট।

১৯৭২ সালে ইলিংয়ে জন্ম নেওয়া রূপা হক ১৯৯১ সালে লেবার পার্টির সদস্য হন।

তিনি কেমব্রিজে পড়েছেন রাজনীতি, সামাজিক বিজ্ঞান ও আইন বিষয়ে। কিংস্টন ইউনিভার্সিটিতে পড়িয়েছেন সমাজ বিজ্ঞান, অপরাধ বিজ্ঞান, গণমাধ্যম ও সংস্কৃতি অধ্যয়নের মতো বিষয়। পার্লামেন্ট সদস্য হওয়ার আগে তিনি ডেপুটি মেয়র হিসাবে স্থানীয় কাউন্সিলেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০০৪ সালে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রার্থী হয়েছিলেন রূপা। এছাড়া ২০০৫ সালে চেশাম ও এমারশাম আসন থেকে তিনি লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পেলেও নির্বাচিত হতে পারেননি।

রুশনারা আলীও জিতেছেন বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন ও বো আসন থেকে; এটা তার তৃতীয় জয়।

রুশনারা পেয়েছেন ৪২ হাজার ৯৬৯ ভোট; তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রক্ষণশীল দলের প্রার্থী পেয়েছেন ৭ হাজারের কিছু বেশি ভোট। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বাঙালি বংশোদ্ভূত আজমল মাশরুর ৩ হাজার ৮৮০ ভোট পেয়েছেন।

রুশনারা আলী ‍নির্বাচিত হলেন টানা তৃতীয় বার

সর্বশেষ নির্বাচনে প্রায় ২৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন যুক্তরাজ্যে পার্লামেন্টে প্রথম বাংলাদেশি নারী রুশনারা। এবার ব্যবধান আরও বাড়ালেন তিনি।

সিলেটের বিশ্বনাথে ১৯৭৫ সালে জন্ম নেওয়া রুশনারা মাত্র সাত বছর বয়সে বাবা-মার সঙ্গে লন্ডনে পাড়ি জমান। দর্শন,রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ডিগ্রিধারী রুশনারা পরামর্শক সংস্থা ইয়ং ফাউন্ডেশনের সহযোগী পরিচালক।

ব্রিটেনের তরুণ রাজনীতিবিদদের মধ্যে প্রভাবশালী রুশনারা আলী অক্সফোর্ডে লেখাপড়া করেছেন ফিলসফি, পলিটিক্স ও ইকোনমিক্স (পিপিই) বিষয়ে। লেবার পার্টির ছায়া সরকারে শিক্ষা ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

এই নির্বাচনে মোট ১৪ জন বাঙালি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন; এর মধ্যে আটজনই লেবার পার্টির হয়ে; বাকিদের চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী, লিবারেল ডেমোক্রেট ও ফ্রেন্ডস পার্টির হয়ে লড়েন একজন করে।