এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকেই শুরু হয় ভাপ্পু’র তোড়জোড়। রঙ-বেরঙের পোশাক, মুখোশ, সাদা টুপি পরে আর নানা সাজে সেজে ঘুরে বেরায় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ভুভুজেলা আর বাঁশির সঙ্গে, উচ্চ শব্দের ভ্রাম্যমাণ সাউন্ড সিস্টেমে গান বাজানোর দৃশ্য চলতি পথেই চোখে পড়ে নিয়মিত বিরতিতে। নানা ধরনের ‘গ্রিল্ড পার্টি’ তো আছেই।
বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনা করলে পহেলা বৈশাখের রঙিন আয়োজনের সঙ্গে এই উৎসবকে খানিকটা মেলানো সম্ভব। তবে তাদের জমকালো আয়োজন বৈশাখকে হার মানাবে তা বললে অত্যুক্তি হবে না।
একই দিনে পালঅন করা হয় বলে কেউ কেউ ভাপ্পু দিবসের আয়োজনকে কেউ কেউ ভুল করে 'মে দিবস' পালনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন।
ফিনল্যান্ডে ভাপ্পু দিবস পালন করা হচ্ছে ১৮৯০ সাল থেকেই বসন্ত উৎসব হিসেবে। তবে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে মে দিবসের সঙ্গে ভাপ্পু দিবসের কোনও যোগসূত্র পাওয়া যায়নি।
অউলু বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়ান্নির কাছে জানতে চেয়েছিলাম ভাপ্পু দিবসের তাৎপর্য।
গায়ে চড়ানো পোশাক দেখিয়ে বললেন, “এই যে আমার গায়ের পোশাক দেখছো, এর মধ্য দিয়ে আমি কিন্তু আমার পছন্দ, অপছন্দ, স্বকীয়তা ফুটিয়ে তুলেছি। আমরা ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে এভাবে নিজেদের প্রকাশ করি।”
তবে ভাপ্পুর ইতিহাসটা জানা গেল না ইয়ান্নির কাছে, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রির দৌড়ে রয়েছেন।
এর সঙ্গে ধর্মীয় একটি উপলক্ষের যোগসূত্র থাকার কথাটিও স্মরণ করিয়ে দিলেন তিনি।
ফিনিশ ন্যাশনাল এজেন্সি ফর এডুকেশনের গবেষক ইয়েন্স নারগেরের ভাষ্য- “নবম শতাব্দিতে পহেলা মে সেইন্ট ওয়ালবার্গ (সেইন্ট ওয়ালপুর্গা) নামে এক নারী যাজককে ধর্মীয় নেতা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই নারীর ধর্মীয় নেতা হিসেবে আবির্ভাবের দিনটিকে ঘিরে পরবর্তীতে উৎসব হিসেবে পালন শুরু করে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা। ফিনল্যান্ড এবং আশেপাশের কয়েকটি দেশে যা ভাপ্পু উৎসব নামে পরিচিত।”
৩০ এপ্রিল বিকাল ৫টায় ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকির কাউপ্পাতরিতে লাখো মানুষের উপস্থিতে ব্যালটিক সাগরকন্যা হাভিস আমান্ডার একটি নগ্ন মূর্তিকে স্নান করিয়ে তার মাথায় পরিয়ে দেওয়া হয় সাদা টুপি। একই সঙ্গে নিজেরাও ঐতিহ্যবাহী ‘সাদাটুপি’ পরে নেন।
রাতব্যাপী চলে খোলা আকাশের নিচে উৎসব, ভোজন, হালকা অ্যালকোহলের উন্মাদনা। পহেলা মে বিকাল অবদি চলে এই উৎসবের হোলি খেলা। বিকেলে আয়োজন করা হয় শোভাযাত্রা, যাতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ জড়ো হন।
আর এই শোভাযাত্রায় একাকার হয়ে যায় ভাপ্পু ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবসের জয়গান।
ই-মেইল: ahasan.khairul@gmail.com
লেখক: সাংবাদিক, ফিনল্যান্ডের অউলু বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ প্রকৌশল শিক্ষার্থী।
এই লেখকের আরও পড়ুন
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |