ফাগুন এসেছে বন-এ বনে

ভেবেছিলাম বন নিয়ে আর কোন কথা হবে না। আপনাদের ইউরোপ সফরে নিয়ে যাব। কিন্তু তা আর হলো কই? বন যে আমাকে ছাড়তেই চায় না!

অমৃতা পারভেজ, জার্মানির বন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2017, 03:47 AM
Updated : 24 April 2017, 05:58 AM

বন এ এখন বসন্ত ফিরে এসেছে। অপরূপ সাজে সেজেছে ছোট্ট এই শহরটি। চারপাশে এখন কচি সবুজ পাতা আর ফুলের ছড়াছড়ি। আর এসবের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আল্টস্টাডের চেরিকুজ্ঞ দেখা।

২০১৩ সালে যখন প্রথম জার্মানিতে আসি, তখনই অনলাইন এক ম্যাগাজিনে পড়েছিলাম, বিশ্বের অন্যতম ১০টি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি বন-এর এই চেরিকুঞ্জ। যদিও আমি নিশ্চিত, বিশ্বে এর চেয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে। বিশেষ করে জাপানে চেরি উৎসবের কাছে এ কিছুই না। তবে চেরি ফুলের দেখা পাওয়াটা আমার জন্য ততটা সহজ ছিল না। কেন? সেই কথাই বলছি শুনুন..।

লেখকের বন্ধু ঋতিকা

২০১৩ সালের আগস্টে বন-এ আসায় চেরি ফুলের মৌসুম শেষ হয়ে ফলের মৌসুমও প্রায় শেষের দিকে। তাই সেইবার চেরি ফুলের দেখা মেলেনি। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়। দিনটা বেশ ভালো, অর্থাৎ রোদ উঠেছে। তাই খাওয়ার পর হাঁটতে বেরিয়েছি অফিসের পেছনে নদীর ধারে এবং পাশের একটা পার্কে। সেখানে গিয়ে দেখি, লেকের ধারে একটা গাছ গোলাপি ফুলে নুয়ে পড়েছে। সঙ্গে ছিলেন সহকর্মী রুনু আপা।

তিনি বললেন- আরে দেখেছো, চেরি গাছটা কি অপূর্ব লাগছে! তখন আমি প্রথম চিনলাম, এটা চেরি গাছ। তিনি বললেন- তুমি বন-এ স্টাড হাউজের কাছে যে চেরি ফুলের প্রচুর গাছ আছে সেখানে যাওনি?

আমি বললাম- না তো, কেন? তিনি বললেন- বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এ সময় এই ফুল দেখার জন্য পর্যটকরা এখানে আসেন।

আমি বললাম- তবে তো আজই যেতে হয়। কিন্তু সেদিন কী কারণে জানি যাওয়া হলো না। পরের দুই দিন আবহাওয়া ভীষণ খারাপ। বাতাস-বৃষ্টি।

লেখকের সাথে তার ভারতীয় বন্ধু অপূর্বা

এরপর শুক্রবার দিন অফিস শেষে বন্ধু ঋতিকাকে নিয়ে চললাম আল্টস্টাডে। কিন্তু যা দেখলাম তাতে হতাশ হতে হলো। গত দুই দিনের ঝড়-বৃষ্টিতে সব ফুল গাছের তলায় লুটাচ্ছে। গোলাপি পাপড়িতে পথ পুরো ঢাকা। মনটা বড়ই খারাপ হলো। এ বছরই আমার কনট্রাক্ট শেষ হওয়ার কথা। তাই মন খারাপটা আরও বাড়লো, কারণ আমি আর বন-এ থাকছি না। কিন্তু অক্টোবরে ঠিক হলো, আমি ইচ্ছে করলে পরের বছর মে পর্যন্ত থাকতে পারি। অতএব এবার ২০১৫ সালের এপ্রিলের অপেক্ষা।

এবার আমি আর ঋতিকা এপ্রিল মাসের একেবারে এক তারিখে আল্টস্টাডে গিয়ে হাজির। গিয়ে দেখি- গাছ কুঁড়িতে ভর্তি, তবে ফুল এখনো ফোটেনি। এর ঠিক দু’দিন পরেই ছিলো রবিবার, অর্থাৎ অফিস ছুটি। আমরা বেলা ১১টায় গিয়ে দেখি আল্টস্টাডের পুরো রাস্তার গাছগুলো গোলাপি হয়ে আছে। থোকা থোকা ফুল। চেরি যে এত অপূর্ব হতে পারে, ধারণাই ছিলো না! আমি ঋতিকাকে মডেল বানিয়ে বেশ কিছু ছবি তুললাম। দেখলাম, অনেক দেশ থেকে সত্যিই চেরি দেখতে এসেছে মানুষজন।

লেখকের ভারতীয় বন্ধু অপূর্বা

লেখকের ভারতীয় বন্ধু অপূর্বা

এ সময়টাতে ওই সড়কের আশেপাশে কিছু মৌসুমী রেস্তোরাঁ এবং স্ট্রিট মার্কেট বসে। অনেকে আয়েশ করে সেসময় রেস্তোরাঁয় বসে চা-কফিতে চুমুক দেন আর চেরির সৌন্দর্য উপভোগ করেন। তবে এটা ঠিক, এই ফুলের কোন ঘ্রাণ নেই। চোখ ভরে দেখতে পারবেন, কিন্তু মন ভরে সুগন্ধ নিতে পারবেন না।

২০১৫ সালের পর ২০১৭ সালে এসে আবারও সুযোগ হলো চেরি দেখার। এবার সঙ্গী আরও বেড়েছে। ঋতিকা, বিনিশ আর অপূর্বা সাথে। ভারতের মেয়েরা যে শাহরুখ খানের বেশ ভক্ত, তাদের ছবি তোলার নানা অঙ্গভঙ্গি দেখেই বোঝা যায়। আর অপূর্বা হলো পুরাই ‘ফিল্মি’ যাকে বলে। সে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার অনুরোধ করে আমাদের অতিষ্ট করে তুললো।

 যাই হোক, বসন্তের প্রায় এক মাস চলে যাচ্ছে। আবহাওয়া আবারও খারাপ হতে শুরু করেছে। বন আবারও কিছুটা নির্জীব। তাই চেরির ছবিগুলোই কেবল মনে করিয়ে দিচ্ছে, বসন্ত এসে গেছে....

(চলবে)...

লেখক: এডিটর অ্যান্ড মডারেটর, ডয়চে ভেলে, বাংলা বিভাগ

ছবি: অমৃতা পারভেজ

ইমেইল: amrita.modak81@gmail.com

অমৃতা পারভেজের আরও পড়ুন

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!