সৌদি আরবে চাহিদার অতিরিক্ত বাংলাদেশি, বাড়ছে বেকারত্ব

পরিবারের অভাব-অনটন দূর করতে একটু স্বচ্ছলতার আশায় নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশিরা আসেন সৌদি আরব। তারা সবাই কি শেষ পর্যন্ত সুখের দেখা পান?  

মো. শফি উল্লাহ, সৌদি আরবের রিয়াদ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2017, 12:07 PM
Updated : 17 April 2017, 12:07 PM

অনেকেই কাজের সন্ধানে এসে ঘুরছেন সৌদি আরবের বিভিন্ন শহরে। কিন্তু তারা পারেননি তাদের পরিবারে সুখের হাসি ফুটাতে। অনেকে পূর্ব নির্ধারিত কোনো কাজই পাননি। আবার যারা কোনোমতে একটি কাজ পেয়েছিলেন, তারা পাচ্ছেন না কাজের যথাযথ পারিশ্রমিক।

ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেক বাংলাদেশি শ্রমিকরা। অথনৈতিক মন্দায় সৌদি আরবের অনেক কোম্পানি তাদের কর্মী ছাটাই শুরু করছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক সৌদি কর্মী নিয়োগ হচ্ছে। এতে প্রবাসী শ্রমিকের চাহিদা দিন দিন কমছে।

রফিকুল ইসলাম নামে এক যুবক বলেন, “অনেক আশা নিয়ে সৌদি আরব এসেছিলাম। কিন্তু গত তিন মাস যাবত বেকার। নতুন হওয়ায়, ভাষা না জানায় অনেক কোম্পানি নিতে চায় না। অথচ লোন নিয়ে সৌদি আরব এসেছি।”

অনেক ভুক্তভোগী জানান, কোম্পানির অবজ্ঞা-অবহেলায় পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না তারা। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে হুমকি-ধমকিসহ তাদেরকে শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছে। অনেকে কপিল বা মালিকের লাভ দিতে না পেরে অবৈধ হয়ে যাচ্ছেন। অনেকে নিরুপায় হয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

সৌদি আরব বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকতা বলেন, যদি দেশ থেকে যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চুক্তিপত্র নিয়ে কেউ আসেন তাহলে বেকার থাকতে হয় না । এছাড়া শ্রমিকদের সমস্যাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সমাধানের চেষ্টা করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৌদি আরবে কর্মী যাওয়ায় জনপ্রতি এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তবে শ্রমিকরা প্রায় ছয় থেকে সাত লাখ টাকা খরচ করে সৌদি যাচ্ছেন।

গত বুধবার রাতে সৌদি আরব এসেছেন নারায়ণগঞ্জের আবু সোহেল। সোহেল জানান, তিনি সাত লাখ টাকার বিনিময়ে ক্লিনার হিসেবে সৌদি আরব এসেছেন। জমি বিক্রি ও স্থানীয়ভাবে ঋণ নিয়ে এ টাকা জোগাড় করেছে তার পরিবার। সোহেলের ভিসার মেয়াদ মাত্র দুই বছর। এই অল্প সময়ে সাত লাখ টাকা পরিশোধ করে আরও আয় সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক কোনো জবাব দিতে পারেননি এ তরুণ।

বাংলাদেশের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর হিসাবে, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বিদেশ যাওয়া মোট কর্মী সাড়ে ৮১ হাজার জন। এর মধ্যে সৌদি আরব গেছেন ৪২ হাজার ২৭২ জন, যা মোট কর্মী রপ্তানির প্রায় ৫২ শতাংশ।

ফেব্রুয়ারিতে মোট কর্মী বিদেশ গিয়েছেন ৮৫ হাজার জন। এর মধ্যে সৌদি আরবে গেছেন ৫২ হাজার ২৫৬ জন, যা মোট কর্মীর সাড়ে ৬১ শতাংশ। মার্চ মাসে এক লাখ ৬ হাজার ৫০১ জন, এর মধ্যে সৌদি আরব গেছেন ৬৬ হাজার ৮২৮ জন, যা মোট কর্মীর প্রায় ৬৩ শতাংশ।

জানা গেছে, কর্মী রপ্তানিতে দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষে থাকা ওমান ও কাতারকে পেছনে ফেলে ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকেই শীর্ষস্থান দখল করেছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। সেই নভেম্বরে শীর্ষে থাকা সৌদি আরবে কর্মী এসেছিলো ২৭ হাজার ৭৮৪ জন।

২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে সেটি আকাশছোঁয়া গতি পায়। ২০১৭ সালের প্রথম তিন মাসে গত এক বছরের চেয়ে বেশি কর্মী রপ্তানি হয়েছে। জানুয়ারি থেকে মার্চে মোট কর্মী এসেছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৩৫৬ জন।

অতিরিক্ত কর্মী আসার বিষয়টি ‘উদ্বেগজনক’ জানিয়ে দূতাবাসের এক কর্মকতা বলেন, “এখনই কারণ অনুসন্ধান করে কারগরি প্রশিক্ষণ ও শ্রমিকদের দক্ষ করতে হবে। তবুও যদি কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকে, তাহলে এত কর্মী আসা বন্ধ করতে হবে।

“এর সঙ্গে মুনাফালোভী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো দায়ি থাকতে পারে। অনেক পেশায় চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও অনেকে কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি করে বা ভুল বুঝিয়ে সৌদি আরবে কর্মী নিয়ে আসেন।”

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!