অল্প কিছুদিনের জন্য পাইওনিয়ার এমআরটি (মেট্রোরেল ট্রান্সপোর্ট) স্টেশনের কাছাকাছি একটি বাসায় উঠেছি আমরা। বাসা আর এমআরটি স্টেশনের মাঝে শুধু একটি স্টেডিয়াম। অর্থাৎ বাসা থেকে এমআরটি'র দূরত্ব খুবই কম।
আগের বাসাগুলোতে দূরে কোথাও যেতে হলে, বিশেষ করে বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা সেরাঙ্গুনের দিকে যেতে হলে বাসা থেকে বাসে করে এমআরটি স্টেশনে যেতে হতো। কিন্তু এখানে তার আর প্রয়োজন হয় না। দুই মিনিট পায়ে হেঁটে গেলেই এমআরটি স্টেশন।
বাসায় এসে ঘরের জানালা খোলার পরেই চোখে পড়লো জানালার পাশেই দুটি বড় বড় আম গাছ। থোকায় থোকায় কাঁচা আম ঝুলে আছে গাছে। তারপরেই ছোট-খাটো একটি স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামের সীমানা প্রাচীর পার হলেই মেট্রোরেলের লাইন। দেখতে ঢাকার উড়াল সড়কের মতো। মেট্রোরেলের বিশেষত্ব হলো, এই উড়াল সড়কের উপরে বাস-ট্রাক বা কারের পরিবর্তে চলে ট্রেন।
আসলে অভিজ্ঞতা খুব উপকারি একটা জিনিস। অভিজ্ঞতা না থাকলে, অহেতুক অনেক বিপত্তির জন্ম হয়। এই যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে মেট্রোরেল যাওয়ার কথাই ধরুন। এ বিষয়টি নিয়ে আন্দোলন তো কম হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পক্ষের শিক্ষার্থীদের আশঙ্কা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে মেট্রোরেল গেলে ক্যাম্পাসে শব্দ দূষণ হবে, শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে। তাদের তো এমন আশঙ্কা হবেই, কারণ মেট্রোরেল ধারণাটা বাংলাদেশে একেবারেই নতুন। শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই হয়তো কখনও মেট্রোরেলে চড়েনি। ফলে এই ট্রেন কীভাবে চলে, কতটুকু শব্দ করে, তা বোঝা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। বাংলাদেশে বর্তমানে ব্রিটিশ আমলের যে ট্রেন এবং রেলপথ চালু আছে, তা দেখে যে কারো মনে হতেই পারে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর দিয়ে মেট্রোরেল গেলে শব্দদূষণ হবে, পরিবেশ দূষণ হবে।
আমি বরাবরই ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে মেট্রোরেলের পক্ষে ছিলাম। কারণ, দূর থেকে আসা শিক্ষার্থীরা সহজেই এসে ক্লাস করতে পারবে তাহলে। সিঙ্গাপুরেও দেখেছি মেট্রোরেলের স্টেশনগুলো জনগুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনার পাশেই লাগানো। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে রিকশা চলবে, অটো চলবে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু মেট্রোরেল গেলেই সমস্যা!
যাই হোক, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেখে আমি নিজেও একটু আশঙ্কা বোধ করছিলাম, যদি সত্যিই মেট্রোরেলের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে শব্দ দূষণ হয়, কম্পন হয়, পরিবেশ নষ্ট হয়, তখন কী হবে? কিন্তু এবার সিঙ্গাপুরে এসে আমাদের এই নতুন বাসায় ওঠার পরে আমার সেই আশঙ্কাটাও কেটে গেল।
আমাদের বাসার এত কাছেই মেট্রোরেল, প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর ট্রেন যাওয়া-আসা করছে, অথচ আমরা কিছু টেরই পাচ্ছি না! কারণ, সাধারণ ট্রেনের মতো এই ট্রেন প্লাটফর্মে আসার আগে বা প্লাটফর্ম ত্যাগ করার আগে একশ' হাত দূর থেকেই হুইসেল বাজায় না। আর তাছাড়া এই ট্রেন খুব দ্রুত চলে বলে, কখন ট্রেন এলো আর কখন চলে গেল, টেরই পাওয়া যায় না।
ধ্রুব একটা আশঙ্কা নিয়ে বলেছিল, “ঢাকার মেট্রোরেল কি আর সিঙ্গাপুররে মতো করে রক্ষণবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করা হবে?”
আক্ষরিক অর্থেই আমি বিশ্বাস করি, পদ্মা সেতু হলে যেমন বাংলাদেশের আমুল পরিবর্তন হবে, তেমনি মেট্রোরেল হলে, ঢাকারও চেহারা বদলে যাবে। তবে নানামুখী আশঙ্কা তো আছেই। ফেসবুকে প্রায়ই দেখি লোহার পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে দালান বানানো হচ্ছে, মেট্রোরেলের ক্ষেত্রেও যদি সেরকম অবহেলা হয় বা নিম্নমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো হয়, তবে তা কিন্তু আমাদের সকলেরই গলার কাঁটা হয়ে উঠবে, সবচে বেশি ভুক্তভোগি হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আশা করি, ঢাকার মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
লেখক: ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক
ই-মেইল: rokeya.lita@hotmail.com
এই লেখকের আরও লেখা
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |