আরবের ফুজেইরাহে ‘বাংলাদেশ ডে’

রৌদ্রকরোজ্জল বিস্তীর্ণ দুর্গম হাজের পর্বতমালা,পার্বত্য উপত্যকা, দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত আর প্রাচীন ঐতিহ্যের দুর্গ নিয়ে সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে ‘এমিরেটস অব ফুজেইরাহ’।

‌জাহাঙ্গীর কবীর বাপপি, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2017, 06:59 AM
Updated : 23 March 2017, 07:00 AM

‘গালফ অব ওমান’- এর পূর্ব উপকূলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্ষুদ্রতম একটি অঙ্গরাজ্য এই ফুজেইরাহ। সমুদ্র তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে এই নয়নাভিরাম আরব‍্য জনপদটি। এখানে বিভিন্ন পেশায়,ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়,সেবা ও আতিথেয়তাসহ নানা ক্ষেত্রে সুনামের সাথে কাজ করছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

‘লি মেরিডিয়ান আল আকাহ বিচ রিসোর্ট’-ফুজেইরাহ’র অভিজাত একটি পাঁচ তারকা হোটেল। এখানে কর্মরত বাংলাদেশিরা এই স্বাধীনতার মাসে তার লাল সবুজের দেশকে প্রবাসের মাটিতে তুলে ধরতে এক বর্ণাঢ্য আয়োজন করে। স্থানীয় সময় গত রোববার রাতে ‘বাংলাদেশ ডে’ নামে এ আয়োজনে মেতে ওঠে তারা।
দেশের নিসর্গ খচিত ম্যুরাল, মনোরোম আলোকসজ্জা,দেশের গানের তালে তালে দেশি- বিদেশিদের অংশগ্রহণে নাচসহ দেশিয় সংস্কৃতির নানা আয়োজনে মুখর ছিল হোটেল কর্মী ও পরিবার-পরিজনরা। নিজ দেশকে বিশ্ব সভায় তুলে ধরার উদ্যোগ নেন বাংলাদেশিরা। তাতে অনুপ্রেরণা যোগান লি মেরিডিয়ান গ্রুপের বৃটিশ মহা ব্যবস্থাপক প্যাট্রিক অ্যান্টাকি।

হোটেলের ৩৬টি দেশের কর্মীর মাঝে আবহমান বাংলার শৌর্য বীর্যের গৌরব গাঁথা,তার সংস্কৃতি-ঐতিহ্য, পোশাক-পরিচ্ছদ,নানা ধরনের ভর্তা,পান্তা-ইলিশ,বিভিন্ন পদের বিরিয়ানী,পায়েসসহ ২০টিরও বেশি রসনাবিলাসী খাদ্য সম্ভার সবার মাঝে এক নতুন বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দেয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইউএইতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। পুরো আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন হোটেলের ডিরেক্টর অব ইঞ্জিনিয়ারিং মোহাম্মদ মাসুদুল হক। লি মেরিডিয়ান গ্রুপের বৃটিশ মহা ব্যবস্থাপক প্যাট্রিক অ্যান্টাকিসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও বাংলাদেশি কর্মীরা রাষ্ট্রদূত ও তার স্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেন। ঘোড়সওয়ার পরিবেষ্টিত গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্যের পালকিতে করে তাদের বয়ে আনা হয় মূল হোটেল ভবন থেকে ভেন্যুতে।
রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন। বাংলাদেশিরা আমিরাতের তৃতীয় বৃহত্তম কম্যুনিটি হিসেবে দেশটির উন্নয়নে ব্যপক অবদান রেখেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে তুলে ধরার জন্য আয়োজক ও হোটেল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রদূত এবং ভবিষ্যতে এখানে আরও বাংলাদেশি কর্মীর কর্মসংস্থান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

মহা ব্যবস্থাপক প্যাট্রিক অ্যান্টাকি বলেন, “এদেশে প্রায় দুইশ’টি দেশের মানুষ বাস করে। আমাদের হোটেলেই আছেন ৩৬টি দেশের কর্মী। অথচ আমরা একে অন্যের দেশ সম্পর্কে জানি না। বহুদিন আগে আমাদের কেরালার বন্ধুরা নিজেদেরকে উপস্থাপনের পর শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইনও একই উদ্যোগ নেয়। আমি চাইলাম বাংলাদেশিরাও একই চ্যালেঞ্জ নিক। আজ সে চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ সম্পর্কে আমাদের জানার সুযোগ করে দিল।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা ইউএই’তে একটি বহুজাতিক পরিমণ্ডলে বসবাস করছি। আমাদের কম্যুনিটিগুলোর মধ্যে কালচারাল শেয়ারিং-এর মাধ্যমে আমরা সমঝোতা বৃদ্ধি করতে পারি।”

সাউদ আফ্রিকান হেড অব এক্সিকিটিভ অফিস জ্যানেট মুন্সুমি বললেন তার অভিজ্ঞতার কথা। তিনি এ ধরনের একটা বাংলাদেশি কম্যুনিটির অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে দাবি করেন। বাংলাদেশি সংস্কৃতি আর বাংলাদেশকে আরও ভালভাবে জানতে পারলেন বলে জানালেন তিনি।

ঘানার রুম ডিভিশন কোর্ডিনেটর লুইজা নাতাশা মাডেল তো বাংলাদেশি খাবার জীবনে প্রথমবারের মত খেয়ে ভক্ত হয়ে গেছেন বলতে গেলে। বাংলাদেশের মানুষ,খাবার, সংস্কৃতি- সবই তার ভালো লেগেছে বললেন তিনি।

‘ঝর ঝর ঝরিছে বারিধারা’- এই গানের সাথে তাল মুদ্রা মিলিয়ে সাবলীল নাচছিলেন ইউক্রেনের মেয়ে মার্গারিটা ফেদোরোভা। তন্ময় হয়ে দেখছিলাম সে নাচ,আর অনুষ্ঠান শেষে কয়েকটি নাচে অংশ নেওয়া এই বিদেশিনী মিডিয়া কর্মীদের কাছে এসে দাঁড়াতেই কথা বললাম তার সাথে। জিজ্ঞেস করলাম-আপনি কীভাবে একটা বাংলা শব্দ না বুঝেও এভাবে নাচলেন?

উত্তরে মার্গারিটা হেসে জানালেন, তিনি এই গানগুলো নির্বাচন করে এর রিদম আর মুদ্রাগুলো অনুসরণ করেছেন। মার্গারিটার মত পোলান্ড,রাশিয়া,উজবেকিস্তান,ফিলিপাইনের মেয়েরাও বাংলাদেশি সহকর্মীদের সাথে তাল মিলিয়ে নেচে-গেয়ে আনন্দ করেছিলেন।

হোটেলের ৩৬টি দেশের কর্মীদের মধ্যে লাল-সবুজের বাংলাদেশের পতাকা, দেশি-বিদেশি অংশগ্রহণকারীর পরিবেশনায় বাংলাদেশি পোশাকে নাচ, গান,নানা উপাদানের ভর্তা,পান্তা-ইলিশসহ দেশি খাবার-দাবার,মিষ্টান্ন সামগ্রী- সবার মন কাড়ে। আর আয়োজকরাও একটি অনন্য উচ্চতার বাংলাদেশকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরতে পেরে তৃপ্ত হন।

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি

এই লেখকের আরও পড়ুন

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!