আবুধাবিতে ভিসা বন্ধের বলি সাড়ে তিনশ’ প্রবাসী

সাড়ে চার বছরেরও বেশি সময় ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধের বলি হচ্ছেন আবুধাবির পশ্চিমাঞ্চলের বিদা যায়েদ ও লিওয়ার সাড়ে তিনশ’ বাংলাদেশি শ্রমজীবি।

জাহাঙ্গীর কবীর বাপপি, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2017, 09:57 AM
Updated : 29 April 2017, 05:48 AM

এই শ্রমিকেরা আবুধাবি পশ্চিমাঞ্চল পৌরসভার হয়ে কাজ করা আল দাফরা সেচ কোম্পানির কর্মচারি। নগরের সৌন্দর্য বাড়ানো ও বাগান পরিচর্যার কাজ করেন এই প্রবাসী বাংলাদেশিরা। হালকা ও ভারি যন্ত্রচালক, ট্র্যাক্টর চালক, সেচ-কর্মী ও বাগানের মালিসহ নিজ নিজ পেশায় এদের বেশিরভাগই দক্ষকর্মী।

কিন্তু ৩১ মার্চ পৌরসভার সঙ্গে তাদের কোম্পানির চুক্তির মেয়াদ উত্তীর্ণ হতে যাচ্ছে। আর তাতে ১ এপ্রিল থেকে তারা কর্মহীন হয়ে পড়বেন। কোম্পানিতে কর্মরত ভারতীয়, পাকিস্তানি, মিশরি, নেপালি ও সুদানি শ্রমজীবিরা ইতোমধ্যে পৌরসভার  নতুন কার্যাদেশপ্রাপ্ত কোম্পানি ওয়েস্টার্ন বিচ-এ তাদের ভিসা ট্রান্সফার করতে শুরু করেছেন। কিন্তু আমিরাতে বাংলাদেশিদের সব ধরনের নতুন ভিসা ইস্যু ও ভিসা ট্রান্সফার বন্ধ থাকার কারণে বাংলাদেশিরা তা করতে পারছেন না। কোম্পানির সঙ্গে বর্তমান চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে তারা দেশে ফিরে যাওয়ার আতঙ্ক নিয়ে একেকটি দিন কাটাচ্ছেন।

অথচ কাজের ক্ষেত্রে যোগ্যতা, নিষ্ঠা ও দক্ষতায় বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি অন্যান্য বিদেশি কর্মীদের চেয়ে ভালো। এখানে কর্মরত বেশির ভাগ প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমজীবিরই আমিরাতে দশ-বিশ বছর বা কারও কারও ত্রিশ বছরও নিজ পেশায় কাজ করার বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে। এমনকি নতুন কোম্পানিও যোগ্যতা অনুযায়ী বাংলাদেশিদের তাদের প্রতিষ্ঠানে কাজ দিতে ইচ্ছুক।  

কোম্পানির সুপারভাইজার সিলেট বিয়ানীবাজারের বাসিন্দা ইমদাদুল ইসলাম খান আটত্রিশ বছর ধরে আমিরাত প্রবাসে আছেন। তিনি আটাশ বছর কাজ করেছেন আবুধাবি পৌরসভায়, পরে আল দাফরা সেচ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সেখানে কাজ করছেন। তিনি বলেন, “দেশে যেয়ে কি করব? সংসার কী করে চলবে আর এ বয়সে কে দেবে কাজ? দেশ’র লাগি আমরা অছল।”

ঊনিশ বছর ধরে প্রবাসে আছেন কোম্পানির ফোরম্যান নোয়াখালী বেগমগঞ্জের জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, “আমাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কারণে নতুন কোম্পানি আমাদের সবার কর্মসংস্থানে সম্মত থাকলেও বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ থাকার কারণে দেশে ফিরে যেতে হবে।”

পেশায় গার্ডেনার চট্রগ্রাম সন্দ্বীপের আশরাফুল আলম বলেন, “এক হাজার দিরহাম কামাইলে দেশত দেড় হাজার দিরহাম হাডান লাগে, খরছা ফাতি বাড়ি গেছে।”

সিলেট বিয়ানীবাজারের এক বাসিন্দা উটের জকি হিসেবে এ দেশে আসেন। তিনি এখন ‘মাকিনা’ (বাগানে ঔষধ ছিটানোর মেশিন) চালান। তিনি বলেন, “আমি দেশঅ যাইতাম নাই, বহুত খর্জ আছে।” তিনি স্পষ্ট জানালেন- ‘খাল্লিবাল্লি’ (অবৈধ) হয়ে থেকে যাবেন, তবু দেশে ফিরে যাবেন না।

নোয়াখালী সোনাইমুড়ির জামাল হোসেন এর কথায়, “ভাই আমাদের তো একটা সাইনবোর্ড আছে, আমরা বিদেশে থাকি। দেশে তো কেউ আমাদের কাজও দিতো না।” 

সংযুক্ত আরব আমিরাতে সব সময়ই দক্ষ জনশক্তির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সেখানে কেবল ভিসা সংকটের কারণে এভাবে এই প্রান্তিক শ্রমজীবি মানুষগুলোকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। এটা একদিকে যেমন তাদের পরিবার পরিজনদের জন্য দুর্ভোগ বয়ে আনবে, তেমনি অন্যদিকে তা দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি

এই লেখকের আরও পড়ুন

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com । সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!