সবার জন্যে ভালোবাসা

‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স ডে’ দিনে দিনে হয়ে উঠেছে, ভ্যালেন্টাইন ডে। আমরা যাকে ভালোবাসা দিবস বলে থাকি। ভালোবাসার জন্যে আবার নির্দিষ্ট দিনক্ষণ হয় নাকি!

আশরাফুন নাহার লিউজা, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2017, 05:35 AM
Updated : 7 March 2017, 05:48 AM

এমন বিস্ময়ের ঘোর না কাটতেই কখন যেন দিনটিকে গভীরভাবে আমিও উপলব্ধি করতে শুরু করেছি। প্রতিবারই উদযাপন করি, এবারও যেমন করেছি। হাজার কাজের ভিড়ে একটি দিন হোক না, কেবলই ভালোবাসার কথা ভাববার।

পৃথিবী জুড়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ পালিত হয়। যদিও অধিকাংশ দেশেই এই দিনে কোন সরকারি ছুটি থাকে না। কর্মব্যস্ত মানুষ কাজের ফাঁকেই দিনটিকে নিজেদের করে নেন। থাকে বাহারি নানা আয়োজন আর উপহারের পসরা। নানান রকমের কার্ড আর চকলেট। থাকে পুতুলের সমাহার। বেশিরভাগের মোড়ক থাকে লাল হার্ট শেইপে।

ফুলের চাহিদা থাকে অনেক। সবমিলিয়ে ভালোবাসাময় রঙিন হয়ে ওঠে দিনটি। গোটা যুক্তরাষ্ট্রে দিনটি পালিত হয় মহা-আয়োজনে। বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে, শপিংমল সব জায়গাতেই উৎসবের ছোঁয়া লেগে যায়। বিশেষ করে হৃদয়ের লাল রঙে রাঙিয়ে তোলা হয় সব জায়গা। ভালো লাগায় ভরে ওঠে মন।

পেছনে ফিরলে দেখা যাবে ভ্যালেন্টাইন ডে’র ইতিহাস কিন্তু অনেক পুরনো। ২৬৯ সালের দিককার কথা। ইতালির রোমে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন খ্রিস্টান পাদ্রি ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তখনকার রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাঁকে বন্দি করেন। তখন রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। বন্দি অবস্থায় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন একজন কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। সেই থেকে দিনে দিনে জনপ্রিয় ওঠেন তিনি। ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠেন সম্রাট। তার জন্যে ঘোষণা করা হয় মৃত্যুদণ্ড। সেই দিনটি ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। কষ্টের সেই দিনটিই আজ ভালোবাসা দিয়ে মানুষের অন্তরাত্মা জয় করার দিন।

এবার জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে সেই দিনটিই ভালোবাসা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেল। ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও প্রথম জুলিয়াস ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন ডে হিসেবে ঘোষণা করেন। একজন পাদ্রি ও চিকিৎসকের প্রতি সম্মানের দিনটি পরে হয়ে ওঠে সার্বজনীন। আজকের দিনে পৃথিবীজুড়ে মানুষ দিনটি মহাসমারোহে পালন করে। যদিও কালক্রমে প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসার বিষয়টিকে মূখ্য করে তোলা হয়েছে, তবে দিনটি সবার। সবার প্রতি সবার ভালোবাসার দিন, সম্মান জানানোর দিন, নানাভাবে প্রতীকী প্রতিবাদেরও দিন।

এই যেমন নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারের ভাস্কর্যটির কথাই ধরা যাক। সময়োপযোগী প্রতীকী প্রতিবাদের চেতনা থাকায় একটি স্কাল্পচার এবার দৃষ্টি কেড়েছে সবার। অনেক মানুষকে ভিড় করতে দেখা গেছে এই ভাস্কর্যটিকে ঘিরে। কিন্তু কী ছিল সেই ভাস্কর্যের বিষয়বস্তু? কী তার তাৎপর্য?

গত নয় বছর ধরে টাইমস স্কয়ার আর্টস ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষে বিভিন্ন নকশাকারক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ‘হার্ট শেইপ’ ডিজাইন আহ্বান করে থাকে। যার মধ্য থেকে একটি বেছে নেওয়া হয় চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। মাসখানেকের জন্যে সেই ভাস্কর্যটি টাইমস স্কয়ারে স্থাপন করা হয় দর্শনার্থীদের জন্যে।

এবার যে ভাস্কর্যটি নির্বাচিত হয়েছিল তার শিরোনাম ‘উই ওয়্যার স্ট্রেনজার্স ওয়ান্স ঠু’। এই ভাস্কর্যে অভিবাসীদের অবদানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। নানান কারণে দেশটিতে অভিবাসীরা যখন চাপের মুখে, তখন এটি যেন অভিনব এক প্রতিবাদ।

এমনিতেই টাইমস স্কয়ারে প্রতিদিন হাজারও মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। গত এক মাসে সেই মানুষদের বেশিরভাগেরই দৃষ্টি ছিল প্রতিযোগিতায় বিজয়ী আরবান ডিজাইন ফোরামের ভাস্কর্যটির প্রতি। ৭ ফেব্রুয়ারি সেখানকার ফাদার ডাফি স্কয়ারে ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়। ৫ মার্চ পর্যন্ত সেটি সেখানে রাখা হয়। ৩৩টি মেটাল দণ্ড দিয়ে তৈরি ভাস্কর্যটির একটি প্রান্তে দাঁড়ালে ‘হার্ট শেইপ’ এর মতো দেখা যায়। কালো দণ্ডগুলোয় লাল ও গোলাপি রঙের আধিক্য। প্রতিটি দণ্ডে নিউ ইয়র্কে বসবাসকারি বিভিন্ন দেশের অভিবাসীর সংখ্যা নির্দেশ করা হয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে বোঝানো হয়েছে, এই শহরটি গড়ে উঠেছে অভিবাসীদের রক্ত-ঘাম আর ভালোবাসায়। ফলে কতভাবেই না এখন ভালোবাসার দিনটিকে উদযাপন করছে মানুষ। তারই একটি চমৎকার উদাহরণ এই স্কাল্পচারটি। ভালোবাসা তো সবার জন্যেই।

লেখক: ইয়োগা আর্টিস্ট,লেখক ও উপস্থাপক।

ইমেইল: Leuza.yoga@gmail.com

আশরাফুন নাহার লিউজার আরও লেখা

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash.bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!