‘প্রবাসী লেখকদের ঠকান কিছু প্রকাশক’

শোনা যায় যে, বাংলাদেশে তরুণ এবং প্রতিষ্ঠিত লেখকরাও টাকা দিয়ে বই করেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রতারিত হন প্রবাসীরা।

জাহাঙ্গীর বাবু, সিঙ্গাপুর থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2017, 03:44 AM
Updated : 4 March 2017, 10:41 AM

কারণ, সবাই মনে করেন প্রবাসীদের অনেক টাকা। প্রবাসীরাও সরল বিশ্বাসে প্রকাশকের হাতে বা দেশে থাকা বন্ধুর কাছে না জেনে না বুঝে টাকা তুলে দেন।

অনেকেই প্রশ্ন করেন, ‘বই প্রকাশ করতে কত খরচ হয়েছিলো?’ বই প্রকাশ করতে প্রকাশকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর বিগত বছরগুলোতে যারা আঁধারে ছিলেন, ২০১৭ সালে এসে এখন পরিষ্কার। এখন সবাই জেনে গেছে, বই প্রকাশ করতে কিছু অসাধু প্রকাশক কীভাবে প্রবাসী শ্রমিকের কাছ থেকে বিরাট অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। প্রবাসীরাও খোঁজ-খবর না নিতে পেরে বা অন্ধ বিশ্বাসে বোকা হয়ে যান।

আমার লেখা চারটা বইয়ের প্রথমটির বিশ কপির মতো সাহিত্য পরিষদের বন্ধুরা কিনে নিয়েছিলো। বন্ধু শরীফ ও মনির এই উদ্যোগ নিয়েছিলো। এখন প্রথম বইয়ের গোটা পাঁচেক, আর অন্যগুলোর পঞ্চাশ বা ষাট কপি করে আছে হয়তো। কিন্তু বাংলাদেশে প্রকাশনী সংস্থা থেকে দু’চারটা বিক্রি হয়েছে কিনা সে খবর নেওয়ার তাগিদ অনুভব করিনি।

কারণ মনের আনন্দের জন্যই বইগুলো লিখেছি ও প্রকাশ করেছি হয়তো। বিক্রি হলো কিনা সেটা জানার ইচ্ছা জাগেনি। আমার লেখা আমার সরল-সাবলীল, নিত্য জীবনের ব্যবহারিক শব্দগুলোর সমাহার মাত্র। নামের আগে কবি, গল্পকার বা উপন্যাসিক ইত্যাদি লেজুড় জুড়ে বই প্রকাশ করতে চাইনি। নিজ হাতেও কখনও এই কাজ করিনি। আমিতো লিখি নিজের জন্যই।

কিন্তু ওই যে আড়াইশ’ কপি করে বই প্রকাশ করলাম, প্রশ্ন আসতে পারে- সেগুলো তাহলে কোথায়? উত্তর হলো কিছু নিজের কাছে রেখে বাকিগুলো সব উপহার দিয়েছি। উপহার দিয়েছি সাজিয়ে রাখতে বইপড়ুয়া বা গুণীজনের আলমিরায়। কিন্তু ফেইসবুকে কারো ইনবক্সে যাইনি। বইমেলায় বা বইমেলার বাইরে রাস্তায় হাত ধরে, কলার ধরে বলিনি, ‘প্লিজ!’।

ধর্মীয় বই নয় বলে ধার্মিকরা পড়বেন না, চেতনার বই নয় বলে চেতনাধারীরা পড়বেন না। না পড়ুন। কিন্তু কী লিখেছি আমি জানি। তবে যা বলি সত্য বলি, যা লিখি সত্য লিখি। জীবন থেকে নিয়ে লিখি। আমার লেখা কিংবা লেখার উদ্দেশ্য নিয়ে কোন কপটতা নেই।

অনেকে ভাবেন প্রবাসে থাকি বলে আমার অনেক টাকা। কিন্তু আমি শ্রমিক মানুষ, একবেলা একসেন্ট বাজেটের বাইরে গেলে পরের বেলায় না খেয়ে ব্যাকআপ দিতে হয়। কিন্তু এই আমি-ই এতোদিন নিজের, সন্তানদের, পিতামাতার, স্ত্রীর বাজেটের পকেট কেটে বই করেছিলাম অমরত্বের লোভে। এই লোভটা ভাইরাস। এই লোভ শেষ হয় না। বইয়ের গন্ধ, শব্দ ভ্রূণের জন্মস্বাদ বইয়ের পাতায় পাতায় পাগল করে তোলে।

বই প্রকাশ করার পর ফেইসবুকে দু’একবার বই নিয়ে পোস্ট দিয়েছি। কিন্তু নিজের প্রোফাইল পিকচারে বইয়ের ছবি রাখা ছাড়া কাউকে বিব্রত করিনি। জোর করে বা যেচে গিয়ে কাউকে বলিনি নিজের বইয়ের কথা। কিন্তু পুরো বইমেলা জুড়ে অনেকেই দেখি নিজের বইয়ের কথা প্রায় জোর করে সবাইকে জানিয়েছেন।  আমার এখন মনে হয়, লেখা প্রকাশের জন্য বই প্রকাশের চেয়ে অনলাইনই উত্তম।

নিজের পকেটের টাকা খরচ করা ছাড়া যদি বই প্রকাশ না হয়, যদি টাকাওয়ালা কবি-লেখক ছাড়া অন্যদের কবি হওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে আমাদেরও কিছু করার আছে।  প্রবাসে বসে বই প্রকাশ করতে গিয়ে কিছু টাউট বাটপারকে বা কোন কপট বন্ধুকে সুযোগ দেওয়ার মানে হয় না। নিজের টাকায় বই প্রকাশ বন্ধে সংগঠন করার সময় এসেছে।

অসাধু প্রকাশক, সুবিধাবাদী কবি-লেখক-সম্পাদক প্রকাশকদের বিরুদ্ধে এক  হওয়ার সময় এসেছে। সাহিত্যভণ্ডদের, কালোবাজারী, পদক ব্যবসায়ী ও প্রবাসীদের সঙ্গে প্রতারণাকারীদের আমরা ঘৃণা কর।

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash.bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!