ব্রেকফাস্ট সারার পর সকাল নয়টায় কিরণ আমাদের ছোট্ট একটি ট্যুরিস্ট বাসে তুলে দিল। আমরা ছাড়া আরও জনা বিশেক ট্যুরিস্ট আছেন। এই বাসেই শুরু হল আমাদের পোখারায় গ্রুপ ট্যুরিস্ট স্পট ভ্রমণ।
প্রথমে পোখারার অন্যতম প্রাচীন ‘বিন্ধ্যাবাসিনী মন্দির’ দর্শনে গেলাম। অনেক উঁচু একটি পাহাড়ের উপর এটি অবস্থিত। তারপর যাওয়া হল ‘সতি নদী’ দেখতে। হিমালয়ের বরফগলা পানিই এই নদীর উৎস। স্থানীয়রা এই নদীর পানিকে পবিত্র মনে করেন। স্থানীয় এবং ভারতীয় ট্যুরিস্টদের বোতলে করে পানি সংগ্রহ করতে দেখা গেল।
এরপর যাওয়া হল ‘ব্যাট কেইভ’ দেখতে, বাংলায় যাকে বলা যায় ‘বাদুড়ের গুহা’। গুহা কর্তৃপক্ষ টর্চ লাইট দিয়ে দিল সবাইকে। সিঁড়ি বেয়ে অনেকদূর পর্যন্ত নামতে হল। অন্ধকার গুহায় টর্চলাইটের আলোয় আমাদের ছায়ার নাচানাচি, পায়ের আওয়াজের প্রতিধ্বনি, মাথার ওপরে গুহার ছাদে বাদুড়ের ঝুলে থাকা আর মাঝে মাঝে মাথার পাশ দিয়ে বাদুড়ের ওড়াউড়ি- এক ভৌতিক আবহ তৈরি করেছিল। রিশান ভয় পেয়ে কোলে উঠে গেল। দেশে ফিরে আসার বেশ কিছুদিন পর পর্যন্ত তার বাদুড়ভীতি ছিল।
এরপর যাওয়া হল ‘মহেন্দ্র গুহা’ দেখতে। এটিও একটি প্রাকৃতিক পাহাড়ি গুহা। গুহার ভেতরে বেশ কয়েকটি জায়গায় গণেশমূর্তি, শিবলিঙ্গ এবং কালীমূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। এই গুহা দেখা শেষ হলে গাইড দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে বললেন।
আমরা দু’টি নেপালি থালি অর্ডার দিলাম। নেপালি থালি হল নেপালি রীতির খাবার। বড় একটি স্টিলের থালায় একটু ভাত, একটু পাপর ভাজা, মুচমুচে করল্লা ভাজা, একটু আচার, একটু শাক, একটু সব্জি, মাছ ভাজা আর আলাদা ছোট ছোট বাটিতে মুরগির কারি, ডাল আর দই। এই হল নেপালি থালি। দেশিয় রান্নার সাথে মিল আছে, তাই তৃপ্তি সহকারেই খাওয়া হল। দুটি থালিতেই আমদের চারজনের পেটভরে খাওয়া হয়ে গেল। দামও বেশি নয়।
এরপর যাওয়া হল ‘ডেভিস ফল’, একটা জলপ্রপাত। উৎস সেই একই, হিমালয়ের বরফগলা পানি। এরপর যাওয়া হল ‘গুপ্তেশ্বর মহাদেব কেইভ’ দেখতে। এটি একটি প্রাচীন মন্দির এবং গুহা। ততক্ষণে আমরা কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়ায় আর গুহায় নামলাম না। বেলা তিনটার দিকে হোটেলে ফিরলাম। শেষ হল পোখারায় গ্রুপ সাইট সিয়িং।
আধ ঘণ্টার মধ্যে ফ্রেশ হয়ে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় ট্যাক্সিতে রওনা দিলাম সারাংকোট-এর উদ্দেশ্যে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এক হাজার সাতশ’ মিটার উচ্চতায় এই স্থান থেকে সূর্যাস্ত দেখা যায়, এক নজরে পাখির চোখে পোখারা শহর দেখা যায় এবং হিমালয়ের অন্নপূর্ণা, ধলগিরি এবং মানাসলুর প্যানারোমিক দৃশ্য এবং ফেউয়া লেকের নৈসর্গিক দৃশ্য দেখা যায়।
সর্বোচ্চ চূড়ায় যখন পৌঁছলাম, আমি আর আমি নেই। আক্ষরিক অর্থেই হতভম্ব হয়ে গেলাম! অপরূপ, অপার্থিব! ভয়ঙ্কর ও বিশাল সে সৌন্দর্য! আর কত ক্ষুদ্র আমরা! তুষারআবৃত শুভ্র হিমালয় তখন গোধূলি আলোয় স্বর্ণালি রঙ ধারণ করছে ধীরে ধীরে! হিমালয়কে মনে হচ্ছিল স্বর্ণের পাহাড়! কি তার রূপ! পাগল করা সৌন্দর্য! যত দেখি তত বিমোহিত হয়ে যাচ্ছিলাম।
অনেকক্ষণ পর খেয়াল হল ঠাণ্ডায় কাঁপছিলাম। অনেক ঠাণ্ডা, নিচের তুলনায় দ্বিগুণ মনে হল। যতটা পারলাম বিভিন্ন এঙ্গেলে ছবি তুললাম। কিন্তু যতই তুলি, ক্যামেরায় কি আর সে বিশাল আর ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য ধারণ করা যায়?
(চলবে)
লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি
এই লেখকের আরও পড়ুন
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash.bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |