সুদান বসে নেপাল ভ্রমণের স্মৃতিচারণ : মাউন্ট কিনেয়িতি থেকে মাউন্ট এভারেস্ট (পর্ব-দুই)

১৬ নভেম্বর, প্রিয়ন্তী আর রিশানকে অনেক কষ্টে ঘুম থেকে তুলে ব্যাগ গুছিয়ে ভোর ৬টায় নীচে নামলাম। নীচেই রেস্টুরেন্টে কিরণ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। আধা ঘণ্টার মধ্যে ব্রেকফাস্ট সেরে নিতে বলল।

আনোয়ার সাত্তার, দক্ষিণ সুদান থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 March 2017, 08:07 AM
Updated : 3 March 2017, 11:06 AM

বুফে ব্রেকফাস্ট। টোস্ট, কেক, ডিম, মাশরুমের কারি, বাটার, মার্জারিন, বিফ বেকন, রোস্টেড ক্যাপসিকাম ও আলু, মিক্সড ফ্রুট, দই, ফলের জুস আর চা- কফি। বেশ রাজসিক ব্রেকফাস্ট। ঘুমকাতুরে বাচ্চারা তেমন কিছুই খেতে পারলো না।

পোখারা রওনা

ব্রেকফাস্ট সেরে ১০ মিনিটেই পৌঁছে গেলাম পোখারা বাস স্ট্যান্ডে। ট্যুরিস্ট বাসে পোখারার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হল সকাল ৭টায়। ৭-৮ ঘণ্টা লাগে পোখারা পৌঁছাতে।

পাহাড়ি খরস্রোতা সবুজাভ নদী বাঘমতি

ভূমিকম্পপ্রবণ কাঠমান্ডু শহরে পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে ঝুঁকিপূর্ণভাবে যেভাবে দালান তৈরি করা হয়েছে, দেখে আঁতকে উঠলাম। যে কোন মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পই এখানে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাতে পারে। ঘণ্টাখানেক চলার পর পাহাড় ঘিরে, পাহাড় বেয়ে নামতে উঠতে শুরু করল বাস। আমাদের অনেক নীচে পাহাড়ের গা বেয়ে গাড়ির ওঠা-নামা দেখে রোমকূপে শিহরণ অনুভব করলাম।

একটু পর নিজেদের বাসকে সেখানে আবিষ্কার করলাম, আমাদের অনেক উপরে যেখানে একটু আগে আমরা ছিলাম। গাড়ি চলাচল দেখলাম শিহরিত হয়ে। চোখের সামনে হাজির বরফে ঢাকা অন্নপূর্ণা। দূর থেকে যেন সে আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে। আমাদের চলার সাথী হল পাহাড়ি খরস্রোতা নদী ‘বাঘমতি’। নদীর পানি সবুজাভ সুন্দর। এই নদী আমাদের পোখারা পৌঁছানোর কাছাকাছি পর্যন্ত সঙ্গ দিয়ে গেল।

বাঘমতি নদীর তীরে যাত্রা বিরতি

চারপাশে বড় বড় উঁচু পাহাড়, দূরে বরফে ঢাকা অন্নপূর্ণা, পাহাড় ঘিরে বাসের ওঠা-নামা, রাস্তা থেকে কয়েকশ’ ফিট নীচে  খরস্রোতা বাঘমতি নদী। কিছু জায়গায় রাস্তা  এমন খাড়াভাবে নীচে নেমে নদীতে মিশেছে যে শিউরে উঠছিলাম। পুরোটা পথ মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে ছিলাম। শিহরণ জাগানো মুগ্ধতা!

যাত্রার দুই ঘণ্টা পর বাঘমতি নদীর তীরে একটা রেস্টুরেন্টে যাত্রা বিরতি। হালকা কিছু খাবার খেয়ে কিছু ছবি তুলে আবার যাত্রা শুরু হল।

ফেউয়া লেক

যাত্রার সাড়ে ৮ ঘণ্টা পর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে পোখারা পৌঁছালাম। পোখারা বাস স্ট্যান্ডে আমাদের জন্য বিলাবং হোটেলের মালিক এবং ম্যানেজার রাজ শ্রেষ্ঠ গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল। হোটেলে পৌঁছে আধা ঘণ্টা পরই বেরিয়ে পড়লাম কাছেই পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ‘ফেউয়া লেক’ দর্শনে।

পরদিন প্যাকেজভুক্ত গ্রুপ সাইট সিয়িং, তাই নিজেদের মত ঘোরার সুযোগ হবে না। পাঁচ মিনিটের হাঁটাপথে পৌঁছে গেলাম ফেউয়া লেক। চারপাশে বড় বড় পাহাড়, পাহাড়ের পাদদেশে লেক। পাহাড়ের ছায়ায় লেকের সবুজাভ টলটলে পানি, দূরে বরফাচ্ছাদিত হিমালয়ের অন্নপূর্ণা। সব মিলিয়ে স্নিগ্ধ আর কাব্যিক সৌন্দর্য!

ফেউয়া লেকে নৌবিহার

রাঙ্গামাটির পাহাড় আর লেকের সৌন্দর্যের সাথে মেলানোর চেষ্টা করছিলাম আমরা। দুই জায়গার সৌন্দর্য দুই রকম। এখানকার লেক বেশ বিস্তৃত ও প্রশস্ত রাঙ্গামাটির তুলনায়, পাহাড়গুলো ও বেশ সু-উচ্চ।

দু’টি ডিঙ্গি নৌকার ওপর কাঠের পাটাতন, তার ওপর বেঞ্চ বসিয়ে বিশেষ নৌযান যা বৈঠা দিয়ে চালানো হচ্ছিল। ইঞ্জিনের বিকট আওয়াজ থেকে মুক্ত, শান্ত, স্নিগ্ধ এখানকার পরিবেশ। নৌযানে চড়ার আগেই লাইফ জ্যাকেট পরতে হল সবার।

বেগনাস লেক, পেছনে বরফাচ্ছাদিত পাহাড়

লেকের মাঝে ছোট্ট দ্বীপের মত একটি মন্দির। নৌকারোহীরা সবাই নামল সেখানে। মন্দিরটি বেশ নামকরা বোঝা গেল, অনেক নেপালি ট্যুরিস্টও এসেছিল দূর-দূরান্ত থেকে এই মন্দির দর্শনে। মন্দিরে ঘণ্টা বাজিয়ে, কিছু ছবি তুলে ফিরে আসলাম। এরই মধ্যে সূর্যি মামা বিশ্রামে চলে গেছেন চারদিকে অন্ধকার করে।

বেগনাস লেক

লেকের পাড়েই একটি রেস্টুরেন্টে চিকেন ফ্রাইড রাইস আর নেপালের ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় খাবার ‘মমো’ (অনেকটা আমাদের সমুচার মত) দিয়ে রাতের খাবার সারা হল। এখনকার সব রেস্টুরেন্টের বিশেষত্ব হচ্ছে, ফ্রি ওয়াই-ফাই সুবিধা।

নেপালি জনপ্রিয় খাবার ‘মমো’

রেস্টুরেন্টের বাইরে মেন্যু বই রাখা আছে। রেস্টুরেন্টের ভেতরে না ঢুকেও বাইরে থেকে মেন্যু ও দাম দেখে পছন্দ হলে ঢোকা যায়। আর প্রতিটা রেস্টুরেন্টে আলাদা জায়গায় বার সুবিধা আছে। একটি ট্যুরিস্টবান্ধব পরিবেশ পোখারা জুড়ে। হোটেলে ফিরে রাত ১০টার মধ্যে ভ্রমণক্লান্ত সবাই শুয়ে পড়লাম।

চলবে...

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি

এই লেখকের আরও পড়ুন

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash.bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!