মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরের ৪ নম্বর কনফারেন্স কক্ষে সংস্থাটির আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফর জেনারেল অ্যাসেম্বলি অ্যান্ড কনফারেন্স ম্যানেজমেন্ট পোলার্ড এ মন্তব্য করেন।
তিনি মাতৃভাষার উন্নয়নে বছরজুড়ে নিরলসভাবে কাজ করায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ ভবনে প্রথমবারের মত বাংলাদেশ, হাঙ্গেরি, মরিসাস, পেরু ও ভানুয়াতুর স্থায়ী মিশন এ আলোচনার আয়োজন করে।
জাতিসংঘ, ইউনেস্কো এবং নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র কার্যালয়ের সহায়তায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
তিনি একুশে ফেব্রুয়ারিকে সারাবিশ্বের সকল নাগরিকের সত্য ও ন্যায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রেরণার দিন অ্যাখ্যা করেন।
ভাষা ও সংস্কৃতিগত বৈচিত্র্যই মানুষের শক্তি মন্তব্য করে একে ধরে রাখার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে ঢাকায় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির বেদনাদায়ক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, "বিশ্বের সব ভাষার প্রতি দরদের কারণেই বাংলাদেশ সেগুলো সংরক্ষণ ও গবেষণার জন্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছে।"
জাতিসংঘে হাঙ্গেরির স্থায়ী প্রতিনিধি কাতালিন আনামারিয়া বোগায়া বলেন, "শিক্ষা, অভিব্যক্তির প্রকাশ এবং পারস্পারিক আদান প্রদানের জন্য মাতৃভাষা অপরিহার্য। এর মাধ্যমে সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে সংরক্ষণ করা সম্ভব।"
হাঙ্গেরি তাদের ভূখণ্ডের ১৩টি ভাষা সংরক্ষণে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
মারিশাসের স্থায়ী প্রতিনিধি জগদিস ধর্মচান্দ কোজুল বলেন, "মাতৃভাষা সংহতি ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়।"
দিবস উদযাপনের মাধ্যমে দেশগুলো ‘বৈচিত্রের একতা’ উদযাপন করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে পেরুর স্থায়ী প্রতিনিধি গুস্তাভো মেজা-কুয়াদ্রা বলেন, "মাতৃভাষা হচ্ছে দেশের শেকড়।একে সংরক্ষণ করা মানে সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করা, যার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব।”
দেড় শতাধিক ভাষাসমৃদ্ধ ভানুয়াতুর স্থায়ী প্রতিনিধি ওডো ট্যাভি বলেন, "সফল গণতন্ত্রের জন্য ভাষা অতি গুরুত্বপূর্ণ।
“বহুভাষা সংরক্ষণ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মাধ্যমে আমরা প্রাজ্ঞ ও প্রগতিশীল সমাজ বিনির্মাণ করতে পারি,” বলেন তিনি।
তিনি জানান, জাতিসংঘের উদ্যোগে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা ৫০০টি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। এছাড়া ইউএন রেডিও ৬০টি ভাষায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি পিটার থমসন, ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা ও নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়োর লিখিত বাণী পড়ে শোনানো হয়।
আলোচনা সভার পর যুক্তরাষ্ট্রের শ্রী চিন্ময় সেন্টারের শিল্পীরা গেয়ে শোনান একুশের কালজয়ী গান- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’।
এরপর জাতিসংঘ কনফারেন্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও লার্নিং সেন্টার ফর মাল্টিলিঙ্গুয়ালিজম অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গান ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, জাতিসংঘের বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি ছাড়াও অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাঙালি ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।