অবৈধদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্রুত বহিষ্কারের নির্দেশনায় শঙ্কায় প্রবাসীরা

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসী কমাতে নতুন এক নির্দেশনা জারি হয়েছে, যেখানে অভিবাসন মর্যাদা নেই এমন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের পরপরই দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বলা হয়েছে।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2017, 11:28 AM
Updated : 22 Feb 2017, 11:43 AM

মঙ্গলবার দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিষয়ক মন্ত্রী জন কেলি এ ‘কঠোর নির্দেশনা’ জারি করেন।  

নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি নতুন করে আরও ১০ হাজার এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

গত মাসের শেষ দিকে এক নির্বাহী আদেশে ১২০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর সিরিয়ার শরণার্থীদের জন্য পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকার কথা বলা হয়।

সেইসঙ্গে মুসলিমপ্রধান সাত দেশ ইরাক, ইরান, সিরিয়া, লিবিয়া, সুদান, সোমালিয়া ও ইয়েমেনের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে ৯০ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

ট্রাম্পের এ আদেশের ফলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ ভিসা থাকার পরও বিশ্বের বিভিন্ন বিমানবন্দরে ওই সাত দেশের নাগরিকদের আটকে দেওয়া হয়। এমনকি দ্বৈত নাগরিকরাও ওই নিষেধাজ্ঞায় আওতায় পড়ে যায়। তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় এবং বহু জায়গায় বিক্ষোভ হয়।

পরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আদালত ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে।

অভিবাসী ঠেকাতে এই সপ্তাহে ট্রাম্প আরেকটি নির্বাহী আদেশ দেবেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম নিশ্চিত করেছে। তার আগে নতুন এ নির্দেশনা লাখ লাখ বাংলাদেশিসহ সোয়া কোটি অবৈধ অভিবাসীকে বহিষ্কারের ঝুঁকিতে ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটিকে দেওয়া নতুন এ নির্দেশনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে অভিবাসী ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলো।

তারা ট্রাম্প প্রশাসনকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘নীতি-নৈতিকতার পরিপন্থি’ এ ধরনের নির্দেশনা প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানিয়েছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কেলির নতুন নির্দেশনা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লস এঞ্জেলেসে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইস) সদস্যরা রাস্তায় নেমে পড়ে।

তাদের অভিযানের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর প্রবাসী বিভিন্ন কম্যুনিটিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির দুই শীর্ষ নেতা সিনেটর চাক শ্যুমার ও কংগ্রেসওম্যান ন্যান্সি পেলসি পৃথক বিবৃতিতে নতুন এ নির্দেশনার সমালোচনা করেছেন। 

তারা একে ‘অ-আমেরিকান’ অভিহিত করে বলেছেন, এমন নির্দেশনা দিয়ে আমেরিকার বর্ণাঢ্য ঐতিহ্যে চিড় ধরানো হচ্ছে।

নির্দেশনার সমালোচনা করে নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো বলেন, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরের সামাজিক সম্প্রীতি হুমকির মুখে পড়ল।

“সন্ত্রস্ত লোকজন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী দেখলেই আত্মগোপনে যাবেন। ফলে অপরাধীদের কোন তথ্য পুলিশ সহজে আর পাবে না।”

আমেরিকায় জন্ম নেওয়া ছেলে-মেয়ের সামনে থেকে তাদের মা-বাবাকে ধরে নিয়ে নিজ দেশে ফেরত পাঠালে ‘পারিবারিক বিভক্তি’ বাড়বে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

নতুন নির্দেশনার প্রতিবাদ জানিয়ে ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন ল’ সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক মেরিলেনা হিসক্যাপি বলেছেন, এর মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন ‘সুযোগের অপব্যবহার’ করে ‘মানুষের শ্বাস কেড়ে নিচ্ছে’।

এভাবে আইনের শাসনের পথ রুদ্ধ করে ফেলা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের এটর্নি লি গেলান্টও। গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, এর ফলে ট্রাম্প প্রশাসন যখন খুশি যাকে-তাকে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সীমানার বাইরে ছুড়ে ফেলতে পারবে।

“সভ্য সমাজে এটি কতটা গ্রহণযোগ্য? এ নির্দেশনার বিরুদ্ধে আমরা আইনি লড়াই চালাব।”

একই সংগঠনের অভিবাসন অধিকার বিষয়ক প্রকল্পের পরিচালক ওমর জারোয়েট বলেছেন, “বিচারাধীন একটি বিষয়ের নিষ্পত্তি হবার আগেই নতুন নির্দেশনা দিয়ে পরিস্থিতিকে জটিল করার চেষ্টা চলছে। তবে আমরা কখনই অ-আমেরিকান কর্মতৎপরতাকে প্রশ্রয় দেব না।”

পিউ রিসার্চ সেন্টার ও সরকারী নথি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে এক কোটি ২৫ লাখের মত অবৈধ অভিবাসী আছেন। এদের বেশিরভাগেরই বাস লস এঞ্জেলস, নিউ ইয়র্ক, প্যাটারসন, আটলান্টা, মিয়ামি, ফোর্ট লডারডেল, ডেট্রয়েট, শিকাগো, ভার্জিনিয়া, মেরিল্যান্ড, ফিলাডেলফিয়া, বস্টন, দেলওয়ারে, ডালাস ও হিউস্টনে।

নতুন এ নির্দেশনা ও গ্রেপ্তার আতঙ্গে শহরগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্যও স্থবির হয়ে পড়েছে বলে কম্যুনিটি নেতারা জানিয়েছেন।

ইমিগ্রেশনের এটর্নি ও মানবাধিকার কর্মীরা এ সময় অভিবাসীদের সতর্ক হয়ে চলাফেরা করার অনুরোধ জানিয়েছেন।