প্রবাসীর স্বদেশ ভাবনা: এক টাকায় লাইফ ইন্স্যুরেন্স

ইন্স্যুরেন্স নিয়ে লেখার জন্য এই লেখা নয়। এ নিয়ে মাথা ঘামানোর জন্য অনেক দক্ষ এবং বিশেষজ্ঞ আছেন। তবে একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে যা বুঝি, তা হলো জীবনবীমা কী এবং কী জন্য এই বীমা করা দরকার?

সুজিত দেবনাথ, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2017, 11:51 AM
Updated : 17 Feb 2017, 01:07 PM

জীবনবীমা করলে কার লাভ হবে, তা অনেকে শিক্ষার অভাবে জানেন না বা বোঝেন না। অথবা কেউ কেউ জেনেও খামখেয়ালিপনা করে থাকেন; কারণ এর সাথে কিছু অর্থসংশ্লিষ্ট ব্যাপার জড়িত। তাই এটাকে কীভাবে জনবান্ধব এবং সহনশীল পর্যায়ে নিয়ে আসা যায়, সেই উদ্দেশ্য আমার এই লেখার চেষ্টামাত্র।             

বিশ্ব ব্যাংকের তথ্যমতে, বাংলাদেশে এখনও প্রায় ২ কোটি লোক দারিদ্রসীমার নিচে বাস করছে। দারিদ্রসীমার কিছু উপরে কিংবা তার আশেপাশে ঘোরাঘুরি করা লোকের সংখ্যাও নেহায়েত কম না। ধরে নেওয়া যায়, দেশের মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ এর আওতায় পড়ে। কিন্তু এরা কারা? এরা আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল ব্যক্তি, যেমন- দিন মজুর, কৃষক, ড্রাইভার ও হেল্পার, সিকিউরিটি গার্ড,কনস্ট্রাকশন লেবার, ফেরিওয়ালা, ফুটপাতের ব্যবসায়ী, গার্মেন্টস শ্রমিক এবং অন্যান্য শিল্প-কারখানায় জড়িতসহ আরও অনেকে।

যাদের ঘাম ঝরানো হাত দিয়ে দেশের উন্নয়নের চাকা প্রতিনিয়ত ঘুরছে, তাদের জীবন ক্ষণে ক্ষণে অস্থিরতার বৃত্তে ঘুরছে। এসব খেটে খাওয়া মানুষগুলো জীবন বাজি রেখে সকালে ঘর থেকে বের হয় জীবিকার উদ্দেশ্যে। ড্রাইভার সকালে গাড়ি নিয়ে বের হয়, কিন্তু সে জানে না রাতে ফিরে এসে তার ছোট শিশুর মলিন মুখখানি দেখবে কিনা। সুউচ্চ দালানে কর্মরত সদ্য কিশোর থেকে যৌবনে পা রাখা ছেলেটিও জানে না, বাসায় ফিরে আবার মায়ের অপেক্ষারত চেহারা দেখবে কিনা। গার্মেন্টসের মেয়েটিও জানে না, বাসায় কখন ফিরবে। বিদেশে কাঠ-ফাটা রোদে কর্মরত শ্রমিকটির বাবাও জানে না, আজ তার ছেলে কেমন আছে?

এদের প্রত্যেকের ওপর তার পরিবারের চার-পাঁচজনের ভরণ-পোষণ নির্ভর করে। আর এই উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটির কিছু হলে পরিবারটির পথে বসার অবস্থা তৈরি হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এদের পাশে দাঁড়ানোর বেলায় কাউকে দেখা যায় না। তাই বলে হতাশ হবার কিছু নেই। দেশের সরকার কিছু পদক্ষেপ নিলে এবং সহযোগিতার হাত বাড়ালে, এদের জন্য আর্থিকভাবে সামান্য হলেও কিছু ব্যবস্থা করা সম্ভব।

একদিন কথার ছলে ইন্স্যুরেন্স পলিসি নিয়ে কথা বলছিলাম আমার এক ভারতীয় কলিগের সাথে। তার কথার সূত্র ধরে বলছি কীভাবে তা করা সম্ভব। এজন্য পাশ্চাত্যের কথা না বলে বরং আমাদের পাশের দেশের কথা বলি।

ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী লাইফ ইনস্যুরেন্স পলিসি স্কিম নিয়ে বছর দেড়েক আগে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন যার সুফল এখন সে দেশের আপামর জনগণ পাচ্ছে।

তার মধ্যে একটি পদক্ষেপের কথা না বললেই নয়। সেটি হচ্ছে নরেন্দ্র মোদির 'প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা'।   

পলিসি প্ল্যান:   মাসিক ১ রুপি হারে বাৎসরিক ১২ রুপি। হ্যা, বছরে ১২ রুপি মাত্র।

কাভার:  ২ লাখ রুপি ( দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু এবং শারীরিক অক্ষমতা)

যারা এর আওতায়:  বয়স ১৮-৭০, যদিও সবার জন্য উন্মুক্ত তবে উপরোক্ত (যাদের নাম উল্লেখ করেছি) লোকদের প্রাধান্য দেওয়া হয়

যা লাগবে:  ব্যাংকে সেভিংস অ্যাকাউন্ট (জিরো ব্যালেন্সেও চলবে)

এই ইন্স্যুরেন্স পলিসি দেখে এটা বোঝা যায় যে, কোন দেশের সরকারের স্বদিচ্ছা থাকলে হতদরিদ্র থেকে শুরু করে সবার জন্য ভাল কিছু করা যায়। ১২০ কোটির দেশে যেটা সম্ভব হয়েছে, সেটা ১৬ কোটির দেশেও অসম্ভব কিছু না।

পৃথিবী বিরামহীন গতিতে এগিয়ে চলছে। তাই এই বিরামহীন ট্রেনে সবাইকে নিয়েই এগোতে হবে। কাউকে পেছনে ফেলে রেখে দেশকে এগোনো যাবে না। আজ থেকে দশ বছর আগেও আমাদের সমাজের একটি বিশেষ অংশ ছাড়া কেউ ইনকাম ট্যাক্স দিত না আর এখন বাৎসরিক ইনকাম নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলেই সবাইকে ট্যাক্সের আওতায় পড়তে হয়। তাই রাজস্ব খাতে প্রতিনিয়ত রেভিন্যু বাড়ছে।

সরকারেরও জনগণের প্রতি কিছু দায়বদ্ধতা আছে। সরকার যদি সপ্তাহে ১ টাকা হারে বাৎসরিক ৫২ টাকার লাইফ ইনস্যুরেন্স পলিসি সবার জন্য বাধ্যতামূলক করে, তাহলে কি তা বাড়াবাড়ি হবে? ভেবে দেখার বিষয়, এখন তো এক টাকা দিয়ে একটা লজেন্সও কিনতে পাওয়া যায় না। পলিসি কাভার কত হওয়া উচিৎ, তা বিশেষজ্ঞের মতামত সাপেক্ষে নির্ধারণ করা যেতে পারে। কিন্তু আগে তো কাজ শুরু করতে হবে। আর তা শুরু করার জন্য আমাদের সরকারের কাছে এই বার্তা পোঁছাবে কে?

সেদিন হয়তো দূরে নয় যেদিন অল্প চাওয়া-পাওয়া আর সীমিত আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বেঁচে থাকা এই মানুষগুলোর মনের কথা সমস্বরে ধ্বনিত হয়ে একদিন সরকার প্রধানের কানে গিয়ে পৌঁছাবে। তাই আমরা স্বপ্ন দেখি, দেশকে নিয়ে দেশের মানুষকে নিয়ে সামনে এগিয়ে চলার।     

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি

ইমেইল: sujcee@gmail.com

এই লেখকের আরও পড়ুন

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ, আড্ডা, আনন্দ বেদনার গল্প, ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!