মিশন দারফুর: খোবুজ আর বেত!

পাউরুটি যখন ‘খোবুজ’ আর ডিম যখন ‘বেত’, তখন চেনা পরিচিত এই দুই খাদ্যের অবস্থা তাদের নামের মতোই বিতিকিচ্ছিরি!

মোহাম্মদ আশিকুর রহমান, সুদানের দারফুর থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2017, 05:45 AM
Updated : 17 Feb 2017, 11:53 AM

‘খোবুজ’ আমাদের পরিচিত পাউরুটি থেকে দেখতেও ভিন্ন,তৈরি প্রণালীও ভিন্ন। আর খেতেও ভিন্নরকম! লাঠি বিস্কুটের আকৃতি, মানে গোলাকৃতি। আকারেও প্রায় এক হাত, মানে ১৮ ইঞ্চি প্রায়। এটা আমাদের পরিচিত পাউরুটি আর টোস্টের মাঝামাঝি ধরনের শক্ত। তৈরি হয় আগুনে ছেঁকে। যার ফলে এতে আদ্রতার লেশমাত্র নেই। যাই হোক বদনাম বহুত হলো, এবার আসি ‘খোবুজ’ সাহেবের সাথে পরিচয়ের ইতিহাস।

সুদানে আসার পর ( ২১ আগস্ট'১৬) আমাদের ১৮ সদস্যের দলের সকলের থাকার সু-বন্দোবস্ত হলো রাজধানী খার্তুমের বিখ্যাত ‘সুদান গেস্ট হাউজ’-এ। দেশের নামে পরিচালিত অতিথিশালা শুধুই নাম সর্বস্ব!

সিঁড়ি বেয়ে চারতলার ১২৫ নম্বর ছোট্ট এক খুপড়ির মতো একটি কক্ষে তিনজনের একজন হয়ে অতিথি সেবা নিতে উঠে পড়লাম। নাহ্, সিট ভাড়া বেশি না। প্রতিদিন সকালের নাস্তা আর রাতের খাবার সমেত সর্বসাকুল্যে ২৫ ইউএস ডলার। প্রাকৃতিক কর্ম সারিবার জন্যে কমন টয়লেট!

পরদিন সকালের নাস্তায় খোবুজ সাহেবের সাথে একান্ত ঘনিষ্ঠ পরিচয়। তিনি নাস্তার প্লেটের এমাথার বাহিরে থেকে ওমাথার বাহির অবধি অবস্থান নিয়া সগৌরবে নিজেকে জাহিরে ব্যস্ত। আমি তো উনাকে দেখিয়া প্রথমে ঠিক ঠাহর করিতে পারিলাম না, কে উনি? কি উনার পরিচয়? এদিক-ওদিক চক্ষু মেলিয়া দেখিলাম, উনার সহোদরেরা আমার সকল সঙ্গীর প্লেটেই একজন করিয়া শায়িত আছেন। দু-একজন বাদে সকলের চক্ষুর অবস্থাই আমার মতোই প্রশ্নাতুর।

খোবুজ সাহেবের সহিত ওই একই প্লেটে সহ-অবস্থানে আছেন ডিম্ব সাহেব, দু’টি কলা, একটা কেক, একটু জেলি বক্স ও উটের দুধের ইয়োগার্ট এবং চায়ের জন্যে এক প্যাকেট গুঁড়ো দুধ। ক্লাসে যাবার তাড়া থাকায় হতবিহ্বলতা কাটিয়ে খোবুজ সাহেবের সাথে মোলাকাত করিয়া গলধঃকরণে দুই পাটি দন্ত দিয়া সম্ভাষণ জানাইলাম।

কামড় দিয়েই উপলব্ধি করিলাম আমার দন্তরা কিঞ্চিত বিমূঢ় হইয়া গিয়াছেন! মুখের ভেতরের অংশ আর বাহিরের অংশ, কেউ কারে নাহি ছাড়ে অবস্থা! এ যেন ফেবিকলের মজবুত জোড়া, ছোটেই না। বাঘে-মহিষে যুদ্ধ! শেষ পর্যন্ত জয় হইলো ছোট্টবেলায় কয়লা দিয়া মাজা আমার দন্তের। কিন্তু দন্ত বাবুদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা! শেষ অবধি উনাকে সর্বশেষ করিয়া তবেই ছাড়িলো আমার দন্তবাহিনী । এই হলো খোবুজের সাথে আমার প্রথম পরিচয়।

দুপুরে ‘খোবুজ’ আর ‘বেত’ দিয়ে লাঞ্চ। এছাড়া আর নাকি কোনও গত্যন্তর নাই! বার্গার শুনে যে দ্রুততায় লাঞ্চে গিয়েছিলাম, প্রায় একই দ্রুততায় মিইয়ে গেলাম বার্গারের তৈরি প্রণালী ও উপকরণ দেখে! খোবুজের সাথে পেঁয়াজ-মরিচহীন ডিম ভাজা। তবে সকালের নাস্তার খোবুজের সাথে উনার আকৃতিগত বৈসাদৃশ্য দেখে কিছুটা আশ্বস্ত হলাম। উনি গোলাকৃতির। স্বাদে, গন্ধে আর কাঠিন্যে সকালের নাস্তার খোবুজ থেকে ভিন্ন স্বাদের এবং কিছুটা নরম। তো হয়ে যাক- খোবুজ আর বেত।

লেখক: সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী হিসেবে কর্মরত

ইমেইল: ash.pol2000@gmail.com

এই লেখকের আরও পড়ুন

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ, আড্ডা, আনন্দ বেদনার গল্প, ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!