নিউ ইয়র্ক, টেক্সাস, লস অ্যাঞ্জেলেস, ভার্জিনিয়াসহ বিভিন্ন শহরে হওয়া এসব বিক্ষোভ থেকে অভিযান দ্রুত বন্ধ ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবি জানানো হয়।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, আদালতের স্থগিতাদেশের পরও ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বিভাগ ট্রাম্পের অভিবাসীবিরোধী আদেশ পালনে অতিউৎসাহী হয়ে ঢালাও গ্রেপ্তার করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গত সোমবার থেকে শুরু করে শুক্রবার পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, অ্যারিজোনা, ইলিনয়, জর্জিয়া, নিউ ইয়র্ক, নর্থ ক্যারোলিনা, ফ্লোরিডা, নিউ জার্সি ও মিনেসোটায় বৈধ নথিবিহীন অভিবাসীদের গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান চলে।
এতে অন্তত ৭০০ জনকে আটক করে বন্দীশালায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন মানবাধিকার ও স্বেচ্ছাসেবক সংস্থাগুলো দাবি করছে।
ঢালাও এ গ্রেপ্তার অভিযানকে অনেকেই ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের ধারাবাহিকতা বললেও দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ বলছে, এটি নিয়মিত কর্মসূচি।
“এটি বিশেষ কোনো কর্মসূচি নয়। চলমান প্রক্রিয়ারই একটি স্বাভাবিক অংশ। অবৈধ অভিবাসীর মধ্যে যারা গুরুতর অপরাধে লিপ্ত এবং যাদের বিরুদ্ধে বহুদিন আগেই ইমিগ্রেশন কোর্ট থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ জারি রয়েছে, কেবলমাত্র তাদেরকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।”
ঢালাও গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে অবস্থান জানিয়ে শনিবার নিউ ইয়র্কের ওয়াশিংটন স্কয়ার পার্কে বিক্ষোভ করে ‘আইসিই ফ্রি-এনওয়াইসি’।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘নো ব্যান, নো রেজিস্ট্রি অ্যান্ড হোয়াইট সুপ্রিম্যাসি’; ‘নো ট্রাম্প, নো কেকেকে, নো ফ্যাসিস্ট ইউএসএ’সহ ট্রাম্পের অভিবাসীবিরোধী অবস্থানের সমালোচনা করে নানান স্লোগান দেন।
আয়োজকদের দাবি, কেবল অপরাধী বা আদালতের নির্দেশে বহিষ্কৃতদেরই নয়; ইমিগ্রেশন অফিসে হাজিরা দিতে যাওয়া অনেক অভিবাসীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া দেশিজ রাইজিং আপ অ্যান্ড মুভিংয়ের (ড্রাম)সংগঠক কাজী ফৌজিয়া বলেন, “পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী যারা ফেডারেল প্লাজার ইমিগ্রেশন অফিসে হাজিরা দিতে কিংবা কোনো ডকুমেন্ট নবায়ন বা জমা দিতে গিয়েছিলেন তাদের অনেককেও ভবন থেকে বেরিয়ে আসার পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
অপরাধী বা বহিষ্কারের আদেশ নেই এমন অভিবাসীদের গ্রেপ্তারে অন্যরাও হতভম্ব ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে বলে দাবি করেন তিনি বলেন, “শুনেছি নিউ জার্সির এলিজাবেথ ডিটেনশন সেন্টারে শুক্রবার পর্যন্ত যে ৬০ জনকে নেওয়া হয়েছে তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে।”
ওয়াশিংটন স্কয়ার পার্কের এ বিক্ষোভে সিটি কাউন্সিলের স্পিকার মেলিসা মার্ক ভিবেরিটো বলেন, “আমি এখানে এসেছি ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যায় পদক্ষেপের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে।”
সিটি মেয়রের ইমিগ্রেশন অফিসের সহকারী কমিশনার কবিতা পাউরিয়া-স্যাঞ্চেজ বিক্ষোভে যোগ দিয়ে মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়োর সংহতি পৌঁছে দেন।
“ব্লাসিয়োর অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে এই বিক্ষোভের প্রতি। আমরা আপনাদের বিক্ষোভে শরিক হতে পেরে গৌরববোধ করছি। এই বিক্ষোভ নিউ ইয়র্কে বসবাস করা ৩০ লাখ অভিবাসীর মনোভাবের প্রকাশ।”
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকাণ্ড নিউ ইয়র্ক ও আমেরিকার চেতনা পরিপন্থি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পাবলিক অ্যাডভোকেট লেটিসা জেমস এ বিক্ষোভকে পাঁচ দশক আগের ‘সিভিল রাইটস মুভমেন্টের’ সঙ্গে তুলনা করেন।
সিটি কম্পট্রলার স্কট স্ট্রিঙ্গার বলেন, নিউ ইয়র্কের অর্থনীতিতে অভিবাসী সমাজের অবদান সবচেয়ে বেশী।
“অভিবাসীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার অর্থ হবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে স্থবিরতার দিকে ঠেলে দেয়ার সামিল।”
বিক্ষোভে কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন্স-কেয়ার’র সদস্যরাও অংশ নেন।
সংগঠনটির নিউ ইয়র্ক চ্যাপ্টারের নির্বাহী পরিচালক আফাফ নাসের জানান, আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন ও হিয়ার টু স্টে নেটওয়ার্কের সঙ্গে মিলে তারা গ্রেপ্তার অভিযানে ক্ষতিগ্রস্তদের আইনী সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিক্ষোভকারীরা পরে মিছিল নিয়ে কাছাকাছি একটি ডিটেনশন সেন্টারে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। এ সময় অন্তত ছয়জনকে আটক করা হয় বলেও স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়।
এদিকে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের যুক্তরাষ্ট্র চ্যাপ্টার শনিবার এক বিবৃতিতে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের এ ঢালাও গ্রেপ্তারের সমালোচনা করে বলেছে, এ ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে গভীর সংকটে ফেলেছে।
নিউ ইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোয়ালিশনও তাদের বিবৃতিতে অভিবাসীদের হয়রানির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
আর কংগ্রেসনাল হিউম্যান রাইটস ককাস জানিয়েছে, তারা এ ঢালাও ধরপাকড়ের বিষয়ে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের পরিচালক থমাস ডি হম্যানের সঙ্গে কথা বলবেন।