বিভিন্ন গুজবের মধ্যে বিমানবন্দরে বাংলাদেশিদের আটক, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়াদের হয়রানি ও গ্রিন কার্ডধারী এক পরিবারকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কথাও ছড়িয়ে পড়েছে।
২৮ জানুয়ারি জারি করা ওই নির্বাহী আদেশের ফলে আগামী চার মাস আর কোনো শরণার্থী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ পাবে না। সিরীয় শরণার্থীদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত।
এর বাইরে ইরাক, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান এবং ইয়েমেন থেকে আগামী ৯০ দিন কেউ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পাবে না। ট্রাম্পের ভাষায় এটি ‘এক্সট্রিম ভেটিং মেজার্স’।
বুধবারও নিউ ইয়র্কের জেএফকে এয়ারপোর্টে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভের সময় এক বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে বলে গুজব রটে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন কৌসুঁলি ও অধিকারকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব গুজবের কোনো সত্যতা মেলেনি। ওই আদেশ জারির পর থেকে জেএফকে এয়ারপোর্টে কাজ করছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিউইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোয়ালিশনের পরিচালক হ্যালাম টাক।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এ যাবত আমরা আইনগত সহায়তা দিয়েছি ২৩৬ জনকে, যাদের মধ্যে ৭১ জনকে হেনস্থার প্রক্রিয়া চলছিল, কয়েক জনকে ডিটেনশন সেন্টারেও নেওয়া হয়েছিল।
‘নো ব্যান জেএফকে’ নামে নিউইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোয়ালিশনের এই কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন শিফটে অ্যাটর্নিসহ মোট ৫০০ জন স্বেচ্ছাসেবী এয়ারপোর্টে কাজ করছেন।
দেশিজ রাইজিং আপ অ্যান্ড মুভিং (ড্রাম) নামে নিউইয়র্কভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সংগঠক কাজী ফৌজিয়া বলেন, “গুজবে আমার কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। আজো জেএফকে এয়ারপোর্টে বিক্ষোভকালে এক বাংলাদেশিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে আমাদেরকে জানানো হয়েছে। অথচ জেএফকে এয়ারপোর্টে কোনো বিক্ষোভ/মানববন্ধন হয়নি। এভাবেই গুজব ছড়ানো হচ্ছে।”
এফ-১ ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে আসা একটি ফ্লাইটে করে এয়ারপোর্টে অবতরণের পর একজনকে আটক করে চরম হেনস্তা করা হয় বলে মঙ্গলবার এক ফেইসবুক পোস্টে জানান সোস্যাল জাস্টিস অ্যাটর্নি ইমান বোকাডম।
ওই ব্যক্তি অনবরত কাঁদছেন এবং তিনি ইংরেজি ভাল বুঝেন না বলে জানিয়ে বোকাডম বলেন, “আমরা তার জন্য প্যারোলে শুনানির সুযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি ইমানের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও বুধবার মধ্য রাত পর্যন্ত ফোনে বা মেইলে জবাব পাওয়া যায়নি।
তবে যারা গ্রীণকার্ড বা নাগরিকত্ব পেয়েছেন তাদের বিচলিত বা উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের বাংলাদেশি আইনজীবী মঈন চৌধুরী, ম্যানহাটানের ল ফার্মের আইনজীবী মোহাম্মদ এন মজুমদার ও অশোক কর্মকার।
ট্রাম্পের এই নিষেধাজ্ঞার ফলে নির্দিষ্ট ৭টি দেশসহ মোট ২০ দেশের নাগরিকেরা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন বলে নিউইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোয়ালিশনের লিগ্যাল ইনিশিয়েটিভ পরিচালক ক্যামিলি ম্যাকলার জানান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মুসলিম রাষ্ট্রের বাইরের লোকজনও ভিকটিম হচ্ছেন। তবে এর মধ্যে বাংলাদেশ নেই।”
অন্য দেশেগুলোর মধ্যে তুরস্ক, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, ফ্রান্স, আলজেরিয়া, জর্দান, চীন, মালয়েশিয়া, কাতার, সেনেগাল, সুইজারল্যান্ড, মিশর ও গিনির নাগরিকরাও রয়েছেন বলে জানান তিনি।
তবে সংগঠনটির আরেক পরিচালক হ্যালাম বলেন, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে একাধিক আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারির পর ‘বর্ডার অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট’ এজেন্টদের তৎপরতা হ্রাস পেয়েছে।