জাপানি টিভির শক্তি!

ঢাকায় থাকতে টেটসুয়া নামে আমার একজন সিনিয়র জাপানি বন্ধু ছিলেন। তিনি মানবিক বিভাগের ছাত্র। ১৯৯৬ সাল, আমি সবে বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করেছি।

শাহজাহান সিরাজ, জাপানের নিগাতা থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Feb 2017, 12:21 PM
Updated : 2 Feb 2017, 01:40 PM

বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়াতে, বিজ্ঞানের জটিল বিষয় নিয়ে উনার সঙ্গে আলোচনায় আমি বেশ বাহাদুরি করতে চাইতাম। যখনই বিজ্ঞানের কোন বিষয় বলতাম, উনি ক্ষীণস্বরে বলতেন – আমি বিষয়টি জানি।

আমি একদিন বললাম, তুমি তো মানবিকে পড়েছো, বিজ্ঞানের সব বিষয় শিখলে কীভাবে? তিনি বলতেন –এনএইচকের টিভি প্রোগ্রাম থেকে। এনএইচকে টিভি থেকে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেশি শিখেছি।

এ তথ্য জানার পর থেকেই জাপানি টিভি অনুষ্ঠান দেখার আগ্রহ আমার বেড়ে যায়।

জাপানে আসার আগে, জাপানি জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে যাদের ধারণা কম, তারা নিশ্চিত পথে পথে কালচারাল শক পাবেন, প্রথম দিকে! ভিন্নতার ক্লান্তিতে হয়তো কারো ঘুম আসবে, কিন্তু ভুল ধরতে পারবেন না। প্রায় সব ক্ষেত্রে ভিন্নতার মতো, জাপানি টিভি ও ভাষা-কমিউনিকেশনেও বিদেশিদের অভিযোগ অনেক। প্রথম প্রথম টিভি’র অনুষ্ঠান দেখতে বিরক্তিকর হলে, কয়েকদিন যাবার পর গা সয়ে যায়। একটু গভীরভাবে দেখলে প্রায় সবাই মুগ্ধ হয়। আমিও হয়েছি।

কিন্তু আমার বেলায়, অন্যদের মতো ঢালাও অভিযোগের ঘটনা ঘটেনি। জাপান আসার ১০ বছর আগে থেকেই, ঢাকায় জাপানিদের সঙ্গে আমার মেলামেশা ছিল।  জাপানিদের চরিত্র, স্বভাব ও জীবন; বিশেষ করে মিডিয়া-রেডিও-টিভি সম্পর্কে জানতাম। এনএইচকে’র অনুষ্ঠান আমাকে মুগ্ধ করতো তখন থেকেই।

জাপানের টিভিতে অ্যানিমেশন

২০০৫ সালে জাপানে এসে আমি জাপানি টিভি মুগ্ধ হয়ে দেখতাত। ভিন্নতা ও মৌলিকতা আবিষ্কারের চেষ্টা করতাম। রিয়েলিটি শো, গল্প-উপন্যাসের মতো করে ধারাবিবরণী স্টাইলে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা, লিখিত ক্যারেকটার স্লাইড প্রেজেন্টেশন দিয়ে বিষয় বুঝানো, আমার হৃদয় জয় করেছে।

সবচেয়ে বেশে আনন্দিত হই আমি এনএইচকের টিভি প্রোগামগুলো দেখে। এটি একটি অলাভজনক ও সরকারি প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশের বিটিভির মতো। বিনামূল্যে দেখা যায়। প্রায় সব জাপানিদের বাড়িতে এক বা একাধিক টিভি আছে। সবাই এনএইচকে কম-বেশি দেখে। এনএইচকে কোন বেসরকারি পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন প্রচার করে না।

খরচ পায় টিভি লাইসেন্স ফি ও সরকারি বরাদ্দ থেকে। সরকারি টাকায় চললেও, অনুষ্ঠানের গুণগতমান ও প্রচারে কোন হেলাফেলা নাই। দায়বদ্ধতা পুরাপুরি। কোন অনুষ্ঠান কেন, কোন উদ্দেশ্যে প্রচার করা হবে কর্তৃপক্ষকে তা জেনে ও মেনে তৈরি করতে হয়।  

গুণগত মান নিয়ে টিভি কর্তৃপক্ষকে সাবধান থাকতে হয় সব সময়। শুধু মালিকপক্ষ থেকে না, দর্শকপক্ষ থেকেও কোন ভুলের অভিযোগ আসলে সর্বনাশ! পরের দিন সমালোচনা হবে!

টিভিতে রান্নার রিয়েলিটি শো

গ্রাফিক্স, টেকনোলজির ব্যবহার ও সর্বোপরি স্টরি-টেলিং এর অসাধারণ আয়োজন যাতে সরকারি-বেসরকারি সব টিভি চ্যানেলে। উদ্দেশ্যমূলক ভুল বা দায়িত্বহীনতায় কোন প্রচার সমাজে কুপ্রভাব পড়লে, সেই চ্যানেল বর্জনের হিড়িক পড়ে যায়। সরকারি টিভির লোকজনেরও চাকরি চলে যায়। যা বাংলাদেশে অকল্পনীয়। তাই চাকরি ও ব্যবসা হারানোর ভয়ে টিভিওয়ালারা তটস্থ থাকেন।

উন্নত গ্রাফিক্স, জেন স্টাইলিশ সরলীকরণ বেকটপে, দক্ষ ও তথ্যবহুল উপস্থাপনা জাপানি টিভি অনুষ্ঠানের সাধারণ গুণ। জাপানি টক শো, আলোচনা, বিশ্লেষণ, এমনকি ভেরাইটি শোতেও ইনফেগ্রাফিক স্টাইলে প্রেজেন্টশন দিয়ে, ছবি দেখিয়ে দেখিয়ে, সবার উপযোগী করে বিষয় উপস্থাপন করা হয়। ফলে সব দর্শকই অনুষ্ঠানটি দেখার পর বিনোদনের সাথে সাথে জটিল বিষয়টি বুঝে ফেলেন, শিখে ফেলেন। অন্যকে শেখানোতে জাপানিদের কার্পণ্য নেই! বরং টিভিতে ভালোভাবে শেখাতে পারলে সমাজে 'সেনসে' অর্থাৎ শিক্ষক হিসাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায়। ব্যবসা হারানো পরিবর্তে আরও জমজমাট হয়। 

জাপান মুক্তসংস্কৃতি ও পুঁজিবাদী দেশ হলেও বিদেশি সংস্কৃতি, মিডিয়া ও পণ্য এর বাজার দখল করতে পারেনি। এর মূল কারণ, গুণগতমান ও নিজস্বতার দাপট। বিদেশি কোন কিছু জাপানে বাজারজাত করতে হলে, জাপানিদের পছন্দসহ, অঘোষিত মানদণ্ড রক্ষা করতে হয়! না করতে পারলে, বিনিয়োগের পথেই ব্যবসা মারা যায়। চাপাবাজি ও হেলাফেলার সুযোগ এখানে নেই। টিভি অনুষ্ঠানতো পরের কথা; ম্যাগডোনাল্ডস, কেএফসি, কোকাকোলার মত বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলোকেও তাদের পণ্য এবং সেবা জাপানিদের মতো করে সাজাতে হয়।

জাপানের টিভিতে সম্প্রচারিত একটি স্ট্রিট শো

অবাক করার বিষয়- শিশুকিশোররা জেগে থাকে, এমন সময় এনএইচকে বা বহুল প্রচারিত টেরিস্টোরিয়াল কোন টিভি চ্যানেলেই, শিশুদের মানসিক ও চারিত্রিক ক্ষতি হয় এমন অনুষ্ঠান প্রচার করে না। বড়দের বিনোদনের অনুষ্ঠানগুলো সাধারণত প্রচার হয় রাত ৯টার পর বা বিশেষ চ্যানেলে, যখন শিশুরা ঘুমায়। জাপানি শিশু-কিশোররা সাধারণত রাত ৯টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল সাড়ে ৭টায় স্কুলে যেতে হয়।

জাপানি শিশুরা ঘুম থেকে উঠেই টিভি দেখতে বসে যায়। বাড়ির কাজ বাকি না থাকলে, শিশুরা সাধারণত সকালে বই নিয়ে বসে না। টিভি দেখে আরাম করে, সকালের নাস্তার করেই দলবেঁধে স্কুলে চলে যায়। টিভির শিক্ষামুলক অনুষ্ঠানগুলো ৫ বছরের শিশুদের এত আনন্দের যে অনেক সময় শিশুরা সবভুলে শুধু টিভি দেখতে চায়। প্রায়শঃ স্কুলে যেতে গড়িমসি করে, বিলম্ব করে । রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত শিশুকিশোররা, বিশেষত রাত ৮টা পর্যন্ত বেশ মজমা করে টিভি দেখে। বেশি স্মার্টফোন ব্যবহারে বাবা-মা সর্তক থাকলেও, বেশি টিভি দেখাতে বাবা আতঙ্কিত থাকেন না। সকালে ও বিকালে প্রোগ্রামে সাধারণত সংক্রামিত রোমান্টিকতা, ছ্যাবলামি এবং 'ভালগারিজম' থাকে না। হিন্দি বা ইংরেজি চ্যানেল, সিনেমারও নাচ-গানের প্রতাপ এখানে নেই। শিশু-কিশোরদের মনে কুমন্ত্রণা জাগায় এমন আপত্তিকর কোন অনুষ্ঠান হলে, স্কুলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। শিক্ষক-শিক্ষিকারা বাবা-মাকে 'না দেখতে দেওয়ার' নির্দেশনা দেন। সমালোচনা হলে টিভি চ্যানেলগুলো অনুষ্ঠান বন্ধ বা সময়সূচি পরির্বতনে বাধ্য থাকে।

আমিতো দেখে অবাক – হিন্দি ছবি তো দূরের কথা, এখানে বিবিসি-সিএনএনেরও প্রতাপ নেই। অনেক প্রদেশে নানাভাবে খুঁজেও পাইনি। অল্প খরচে বা বিনামূল্যে এখানে বিদেশি চ্যানেল দেখা যায় না। এখানে বিদেশপ্রেম কম। মানুষ বিদেশি চ্যানেলের সংবাদ বিশ্বাস করে না, তেমন দেখে না। মিডিয়াতে দলপ্রীতি নাই বললেই চলে। সরকারি গণমাধ্যমেও নেতা-নেত্রীর, মন্ত্রী-মিনিস্টারের অপ্রয়োজনীয় মুখ দেখা যায় না। সরকারি গণমাধ্যমের সহজ-সরল-সত্য সংবাদের উপর মানুষের আস্থা অনেক। সুনামির সময়ও নাকি, মানুষ এনএইচকে দেখতো। বিবিসি- সিএনএন ইত্যাদিকে গণ্ডগোলের গণমাধ্যম মনে করে পাশ কেটে যেত, গুরুত্ব দিত না। তাছাড়া, জাপানের রমরমা ব্যবসার সুযোগ কম বলে বিদেশি চ্যানেলগুলো বেশি ফোকাসও করে না।

জনপ্রিয় একটি ভ্যারাইটি শো

আধুনিক ব্রডকাস্টিং প্রযুক্তিতে জাপানি টিভিতে স্টেশন সুসজ্জ্বিত। তবে এরা টেকনোলজি ব্যবহারের অগ্রদূত হলেও বেশ সনাতনী। সামাজিক ও ব্যবসায়িক ফিজিভিলিটি যাচাই ছাড়া, যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়া কোন টেকনোলজি বা অনুষ্ঠান এরা বানায় না। ব্যবসার বাইরে কোন উদ্যোগ টেকসই হবে- জাপানিরা এই তত্ত্বে একেবারেই বিশ্বাস করে না। তাই এখানে অলাভজনক কমিউনিটি টিভি বা কমিউনিটি রেডিও নেই, জনপ্রিয়তা পায়নি। তবে ব্যবসায়িক আদলে লোকাল ক্যাবল টিভি ও লোকাল এফএম রেডিও বেশ জনপ্রিয়।

এখানে স্মাটফোন, পাসোকন (ল্যাপটপ), এইচডি-টিভি, হাইভিশন সবখানেই টিভি দেখা যায়। প্রচারের উপর ভিত্তি করে জাপানি টিভি তিন ধরনের- ১. চিগিডিজি ( ফ্রিটুএয়ার ), ২. সিএস/ বিএস ডিজিটাল(স্কাইপা) ৩. হিকারি ইন্টারনেট টিভি।

চিগিডিজি ছাড়া সব টিভিতেই কম-বেশি মানি পেমেন্ট করতে হয়। সিএস টিভিতে সেটবক্স সাধারণত মাসিক ৪৩ ডলার (৩৫০০ইয়েন) ও হিকারি টিভিতে সাধারণত মাসিক ২৪ ডলার (২৭০০ইয়েন)।

এখানে পাইরেসি নাই। বেআইনিভাবে ডাউনলোড করে জমজমাট ব্যবসাতো দূরের কথা, কেউ ব্যক্তিগতভাবে শেয়ার করাকেও অপরাধ মনে করেন। মাসিক ৫০০ ডলার (৪০০০-৫০০০ ইয়েন) দিয়ে বিশ্বখ্যাত সাম্প্রতিক মুভি দেখা যায়। অনলাইন মিউজিক ক্লাব ও ফিল্ম ক্লাবের মেম্বারশিপের মাধ্যমে তরুণ-তরুণীরা ইচ্ছামাফিক উপভোগ করে। ‘স্টেচুয়া’ ও ‘জিইউকোকান’জাপানের বিখ্যাত অডিও-ভিডিও ক্লাব।

জাপানি টিভি পিকচার, গ্রাফিক্স যথাসম্ভব ঝকঝকে, এইচডি। গল্প বলায় ও উপস্থাপনায় এরা পুরাপুরি জাতীয়তাবাদী। ইলেকট্রনিক যন্ত্রের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র ও লোকজ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। কোন কিছুই হেলনা বা ফেলনা না। সবকিছুই গুরুত্বপূর্ণ, এই মনোভাব তাদের গল্প, অ্যানিমেশন ও নির্মাণ কৌশলেও স্পষ্ট! সাধারণকে অসাধারণ বানানোর চেষ্টা জাপানি টিভি, মুভি ও অ্যানিমেশনকে বিশ্বখ্যাত করছে। এখানে নাটক-সিনেমার পাশাপাশি বিশাল বাজেটের অ্যানিমেশন মুভি ও অনুষ্ঠান তৈরি হয়। টিভি কোম্পানিগুলো প্রোগ্রাম কিনে প্রচার করে। এনএইচকে শিশু-কিশোরদের অ্যানিমেশন মুভি প্রচারে চ্যাম্পিয়ান, সারা দেশে জনপ্রিয়।

গেইমের পাশাপাশি অ্যানিমেশন মুভি থেকে জাপান সারা বিশ্ব থেকে বিশাল রেমিটেন্স আয় করে। ড্রাইমন, নিনজা হাতুরি, ইয়ামতো, এসট্রোবয়, নারুতো, পকোমন, ব্লিচ, ড্রাগন বল ইত্যাদি জাপানি বিশ্বখ্যাত টিভি অ্যানিমেশন।

১৯২৬ সালে জাপানে প্রথম টিভি’র পরীক্ষামূলক হলেও পুরাপুরি ব্রডকাস্টিং শুরু করে ১৯৫৩ সালে। ১৯৫৯ সালে শুরু হয় এনএইচকে এডুকেশনাল টিভি। ২০০৩ সালে জাপানে চালু হয় এইচডি টিভি (টকিও, ওসাকাওনাগোয়া), যা এখন সারাদেশে মেইনস্ট্রিম ও জনপ্রিয়।

সব নাগরিককে মাসিক ২০ ডলার অর্থাৎ ২৩০০ ইয়েন টিভি ফি দিতে হয়। এই বিশাল টাকা দিয়ে, বিশেষ গুরুত্বের সাথে নরম ধরণের শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানে প্রচারের কারণে কতিপয় অতি-আধুনিক নাগরিক প্রতিবাদ করেন। কিন্তু এনএইচকে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান বন্ধ করেনি। বরং চালু করেছে আলাদা নতুন চ্যানেল 'এনএইচকেইটিরিভি'। ২০১৫ সালে এনএইচকে ‘এডুকেশনাল মিডিয়া’ প্রচারের ৫০ বছর পূর্তি পালন করে।

ড্রামা, রোমান্স, কমেডি, হরর, সাইন্স ফিকশনের চেয়ে দৈনন্দিন জীবন, রান্না, খাবার, কৃষি, প্রোডাক্ট রিভিও, সমাজ-ভাবনা, ঐতিহাসিক নাটক, গান এবং অ্যানিমেশন জাপানে জনপ্রিয়। বিশ্বভ্রমণ, ভ্যারাইটি শো, আশ্চর্য অভিজ্ঞতা, সেলিব্রেটির জীবন ও পছন্দ, স্পোটর্স, স্টাফ জোকারদের পারফর্মেন্স, গেইম শো ইত্যাদি জাপানি টিভির মেইনস্ট্রিম বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান।  জাপানি টিভিগুলো ভাড়া করা শিল্পী-পারফরমারদের চেয়ে নিজস্ব স্টাফদের উপর নির্ভরশীল। ফলে অনুষ্ঠান ও সবকিছুতেই নিজস্ব ব্র্যান্ডিং সহজে গড়ে উঠে। খরচ কম হয়, নামিদামী শিল্পীদের বাহাদুরির পিছনে টিভি কোম্পানীগুলোকে ঘুরতে হয় না, ঘুরে না। বরং শিল্পীরা ব্যবসা জমজমাট করার জন্য টিভিতে আসতে উন্মুখ থাকেন।

১৯৫৫ সালে ক্যাবল টিভি শুরু হয় প্রথম সিবুকাওয়া, গুনমা প্রদেশে। স্যাটেলাইট টিভি শুরু হয় ১৯৭৪ সালে। ১৯৮০ সালে ক্যাবল টিভি পার্বত্য অঞ্চলে পেরিয়ে সারাদেশে জনপ্রিয়তা লাভ করে। কিন্তু পাইরেসি ও কপিরাইটে কড়াকড়ি থাকার কারণে, বাংলাদেশের মত বিদেশি প্রোগ্রামের গড্ডলিকা প্রবাহ এখানে শুরু হতে পারেনি।

আর্ট ও নিজস্ব মৌলিকতা জাপানি টিভি অনুষ্ঠানের অনন্য বৈশিষ্ট্য। যে আর্ট মানুষকে আনন্দ দেয় না, হৃদয় স্পর্শ করে না, ব্যবসায় সফলতা আনে না, তাকে জাপানি টিভি কোম্পানিগুলো আর্ট মনে করে না। সাধারণ ভাবনা- সব অনুষ্ঠানই শিল্পিত যদি তা দর্শকদের প্রয়োজন মেটায়, জনপ্রিয়তা পায়। তাই ব্যবসা ও সুনাম ধরে রাখার জন্যও টিভি ও ব্রডকাস্টিং কোম্পানিগুলো, অনুষ্ঠান বানানোর আগে দর্শকদের পছন্দ ও প্রত্যাশা নিয়ে গবেষণা করে। ফলে প্রায় সব অনুষ্ঠানই জনপ্রিয়তা পায়। টিভি কোম্পানী গুলো দেওলিয়া হওয়ার ভয়ের পরিবর্তে, মানুষকে শেখায়, মানুষকে আনন্দ দেয়, জমজমাট ব্যবসা করে।

জনশ্রুতিতে আছে- জাপানিরা টিভির শিক্ষামুলক অনুষ্ঠানের কারণে, শিশুকাল থেকে একতা, সততা ও বিনয় মূল্যবোধ শিখে। প্রতিদিন আনন্দের সাথে নীরবে ধারাবাহিক শিক্ষার কারণে জাপানে আজ এসেছে প্রগতি। প্রায় সব নাগরিকের চরিত্র মানবিকতায় উন্নত। ছেলে-মেয়েকে জাপানি সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য আমি দেশান্তরী হয়েছি। বাংলাদেশ জাপানের মতো মিডিয়া-শিক্ষার সুপ্রভাবে উন্নত হোক।

লেখক: মাল্টিমিডিয়া ডিজাইনার, ফটোগ্রাফার ও লেখালেখি করেন।

ইমেইল: siraj@machizo.com

ছবি : শাহজাহান সিরাজ

এই লেখকের আরও পড়ুন