মালয়েশিয়ায় চাইনিজদের 'মোরগ বছর'

জায়গায়-জায়গায় জমকালো আকাশ ছোঁয়া নানান রঙের আতশবাজি ফুটিয়ে মহাউৎসব উদযাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হলো চাইনিজ নিউ ইয়ার। চীন দেশের মতো মালয়েশিয়ায়ও ২৮ জানুয়ারি চাইনিজ নতুন বছর শুরু।

রফিক আহমদ খান, মালয়েশিয়া থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Jan 2017, 10:50 AM
Updated : 28 Jan 2017, 11:10 AM

'বানর বছর' শেষে আনন্দ উৎসাহের সাথে বরণ করা হলো 'মোরগ বছর'কে। চাইনিজ সালগুলো নির্দিষ্ট বারটি প্রাণীর নামে হয়। সে হিসেবে নতুন বছর হচ্ছে 'মোরগ বছর'।

মালায়ু (মুসলিম) সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশে চাইনিজরা দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি। মালয়েশিয়ায় চাইনিজদের সবচেয়ে বড় উৎসব 'চাইনিজ নিউ ইয়ার'। মানে তাদের নতুন বর্ষবরণ 'কং সি ফা চাই'। 'কং সি'অর্থ 'টাকা আসুক'। আর 'কং সি ফা চাই' অর্থ 'নতুন বছর আপনার জন্য সমৃদ্ধি বয়ে আনুক' বা 'শুভ নববর্ষ'।

শুধু মালয়েশিয়ায় নয়, মূলত চীন, সিঙ্গাপুর, হংকং, তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়াসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে-ছিড়িয়ে থাকা চাইনিজদের প্রাণের উৎসব 'কং সি ফা চাই' (Gong xi fa cai)। মালয়েশিয়ায় সবচেয়ে বড় ছুটিও মেলে এই চাইনিজ নিউ ইয়ারের সময়। সরকারিভাবে দুইদিন ছুটি হলেও চাইনিজরা তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখে এক-দুই সপ্তাহ।
৭৬ লক্ষ মালয়েশিয়ান-চাইনিজ মেতে উঠেছে 'কং সি ফা চাই'উৎসবে। চারিদিকে চলছে 'রুস্টার ড্যান্স'। মালয়েশিয়ার বড়-বড় শপিংমলগুলো সেজেছে লালে-লালে। চাইনিজদের উৎসবে লাল রঙের ব্যবহার বেশি। চাইনিজদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকেও লাল রঙের ছড়াছড়ি। চাইনিজদের বিশ্বাস 'লাল'রঙ সৌভাগ্যের প্রতীক।

নিজেদের বছরের সেরা উৎসব ও লম্বা ছুটি থাকায় এই উৎসবে অধিকাংশ চাইনিজ শহর ছেড়ে চলে যায় গ্রামের বাড়িতে। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আনন্দে পালন করে 'কং সি ফা চাই'। দুই হাত জড়ো করে একটু মাথা নুয়ে একজন আরেকজনকে বলেন, 'কং সি ফা চাই'। একজন আরেকজনের সুখি ও সমৃদ্ধ নতুন বছর কামনা করে।

চাইনিজ নারী-পুরুষ যাদের বিয়ে হয়েছে, তারা ছোটদের 'আমপাও' (বখশিস) দেয়। সম্পর্ক বুঝে এই বখশিস পাঁচ-দশ রিংগিত থেকে কয়েকশ' বা হাজার রিঙ্গিতও হয়। আমপাও (বখশিস) হিসেবে কত রিঙ্গিত দিল তা কিন্তু দেওয়ার সময় বোঝা যায় না।

বখশিস দেওয়ার জন্য আছে বছরের প্রতীক প্রাণীর ছবিওয়ালা লাল রঙের প্যাকেট। যেমন এ বছরের প্যাকেটের গায়ে আছে মোরগ-মুরগীর ছবি। এই প্যাকেটে বখশিসের নোট দিয়ে মুখ আটকিয়ে দেওয়া হয়। পরে প্যাকেট খুললেই জানা যায় বখশিস হিসেবে কত রিঙ্গিত পেল।

চাইনিজ নিউ ইয়ার উদযাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে 'অরেঞ্জ' বা 'কমলা'। মানুষকে কমলা উপহার দিলে 'সৌভাগ্য' আসে-এমনই বিশ্বাস চাইনিজদের। চাইনিজ নিউ ইয়ার শুরু হওয়ার দুই-তিন সপ্তাহ আগে থেকে চাইনিজদের যে কোনও প্রতিষ্ঠানে কমলা থাকবেই। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ক্রেতাদের হাতে দুই-একটা কমলা ধরিয়ে দেবে তারা। পাইকারি ব্যবসায়িরা তাদের ক্রেতাদের দেয় এক-দুই প্যাকেট কমলা। প্রতি প্যাকেটে ২০-২৫টা কমলা থাকে।

মালয়েশিয়ায় ফলের মধ্যে সারা বছর মাল্টা দেখা গেলেও কমলা তেমন দেখা যায় না। কিন্তু সারা বছর একটা কমলাও যে খায়নি, সেও চাইনিজ নিউ ইয়ারে অনেকগুলো কমলা খায়। চাইনিজ মালিকের কাজ করে এমন বিদেশিদেরও তারা প্যাকেটভরা কমলা উপহার দেয়।

প্রতি বছরই প্যাকেটগুলো থাকে লাল রঙের। যারা মালায়ু বা তামিল মালিকের কাজ করে,  তারাও তাদের বন্ধু-বান্ধব যারা চাইনিজ মালিকের কাজ করে তাদের থেকে কমলা পায়। যদিও বোনাসের ভাগ পায় না! চাইনিজ মালিকেরা তাদের অধীনে যারা কাজ করে কম-বেশি সবাইকে বোনাস দেয়। বন্ধ আর বোনাস- যার দুটি একসাথে আছে,  তার আনন্দ অনেক!

মালয়েশিয়ায় বছরের অন্যতম আনন্দঘন সময় উদযাপিত হয় এই 'কং সি ফা চাই'উৎসবে। চাইনিজদের পাশাপাশি কম-বেশি সবাই আনন্দময় সময় কাটায় এই উৎসবে। মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরাও বাদ যায় না চাইনিজ নিউ ইয়ারের আনন্দ-উৎসব থেকে। সবাইকে চাইনিজ নিউ ইয়ারের শুভেচ্ছা-'কং সি ফা চাই'।

লেখক: মালয়েশিয়া প্রবাসী।

ইমেইল: rafiq.akhan80@gmail.com

এ লেখকের আরও পড়ুন

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ, আড্ডা, আনন্দ বেদনার গল্প, ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!