কানাডার অভিবাসী আটক কেন্দ্রে শিশুদের দুর্বিষহ জীবন

নিরাপত্তাজনিত হুমকি না থাকলেও শুধু পরিচয় নিম্চিত না হওয়ায় কিংবা ভ্রমণের কাগজপত্রে ত্রুটির কারণে কানাডার অভিবাসী আটক কেন্দ্রে দিনের পর দিন অপরাধীদের মতো বন্দিজীবন কাটাতে হচ্ছে শিশুদের। 

মনজুর মাহমুদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2017, 10:47 AM
Updated : 16 Jan 2017, 10:47 AM

প্রতিদিন বাইরে খেলা শেষে শিশুদের তল্লাশী করে আটক কেন্দ্রে ঢুকতে দেয় রক্ষীরা। এমন কানাডার বিভিন্ন অভিবাসন আটক কেন্দ্রে গড়ে আড়াইশ শিশুকে এমন কড়া নজরদারির মধ্যেই থাকতে হচ্ছে অভিভাবকদের সঙ্গে।

টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত ‘নো লাইফ ফর আ চাইল্ড’ শীর্ষক এক গবেষণায়অিভিবাসন আটক কেন্দ্রগুলোতে শিশুদের এমন দুর্বিষহ জীবন যাপনের চিত্র উঠে এসছে।

গবেষণায় বিভিন্ন কেন্দ্রে ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত আটক থাকা শিশু-নারী ছাড়াও আইনজীবী, চিকিৎসক, সমাজকর্মী এবং মানবাধিকার কর্মীদের সাক্ষাৎকার বক্তব্য নেওয়া হয়।

টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

গবেষণায় কানাডায় অভিবাসী শিশুদের আটকাবস্থার বিষয়ে বলা হয়েছে, আটক থাকা অবস্থায় তারা স্কুল শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি উদ্বেগ ও বিষন্নতায় ভুগছে। এছাড়া পুষ্টিকর খাবারের অভাব, সীমিত চলাফেরা এবং অপর্যাপ্ত বিনোদন ব্যবস্থার মধ্যে শিশুরা বেড়ে উঠছে। ফলে তাদের স্বাভাবিবক মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

অধিকাংশ শিশু আটক কেন্দ্রে মায়ের সঙ্গে থাকে এবং খুব কম সময়ই বাবাকে কাছে পায়। পারিবারিক এ ধরনের বিচ্ছিন্নতা শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, যা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার অনুকূল নয় বলে গবেষণায় বলা হয়েছে।

টরন্টোর একটি অভিবাসী আটক কেন্দ্র

বিশেষজ্ঞদের মতামত উদ্ধৃত করে এতে বলা হয়েছে, আটকাবস্থা থেকে মুক্ত হওয়ার পরও পরবর্তী জীবনে অনেকে মানসিক সঙ্কট থেকে বের হয়ে আসতে পারে না এবং তাদের মধ্যে আত্মহত্যার চিন্তা দানা বাঁধে।

অভিবাসীদের মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ফ্রাঙ্কোস ক্রেপে শিশুদের এ করুণ জীবন-যাপন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে কানাডার রাজনীতিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমাকে কি এটাই মেনে নিতে হবে যে, এদেশে আমার সন্তানও এরকম অবস্থার শিকার হতে পারে?”

জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক রেডক্রস এবং মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী ও চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন এ ধরনের নিপীড়ন বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে।

“এ ধরনের আটকাবস্থা কোনোভাবেই শিশুর জন্য মঙ্গলজনক নয় এবং এ কারণে তাদেরকে আটক রাখার বিষয়টা এড়িয়ে চলা উচিৎ-আন্তর্জাতিক আইনে এটা স্বীকৃত বিষয়। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এ আইনটি কানাডা মেনে চলছে না,” এমন অভিযোগ তুলে গবেষণায় অবিলম্বে শিশুসহ এসব পরিবারকে মুক্তি দিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

টরন্টোর একটি অভিবাসী আটক কেন্দ্রে প্রতিবাদ সমাবেশ

টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মসূচির পরিচালক স্যামের মুস্কাতি বলেন, “নিরাপত্তার প্রশ্নে শিশুসহ এসব পরিবারগুলোকে আটক রাখার সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এমনিতে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষগুলোর জীবনে এ অবস্থার নেতিবাচক প্রভাব বর্ণনাতীত। তার ওপর সঙ্কট বাড়িয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পথ আরও বেশি কঠিন করে তোলা হয়।”

গতবছরের একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধু অন্টারিওর আটক কেন্দ্রগুলোতে দুই শতাধিক অভিবাসী সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এবং আরও প্রায় ৫০০ অভিবাসী বিভিন্ন কেন্দ্রে আটক আছে।

গত বছর এপ্রিল ও মে মাসে দু’টি ভিন্ন ঘটনায় সীমান্ত নিরাপত্তা সংস্থার হেফাজতে অন্টারিওতে দুইজন এবং মে মাসে এডমুন্টনে ২৪ বছর বয়সী এক অভিবাসী মারা যায়। আটক কেন্দ্রগুলোতে অনিশ্চিত ও মানবেতর জীবনযাপন অবসানের দাবিতে গত জুলাই মাসে প্রায় ৬০ জন অভিবাসীর দীর্ঘ অনশনে সমালোচনার মুখে পড়ে ফেডারেল সরকার।

তবে জননিরাপত্তা মন্ত্রী রালফ গুডেল যতটা সম্ভব এ পরিস্থিতি এড়ানোর চেষ্টা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, শুধু শেষ উপায় হিসেবে কারাগারে শিশুদের এভাবে আটক রাখা হচ্ছে।