মধুর শৈশবের এপারে দাঁড়িয়ে

শৈশব  আমাদের সবার জীবনের সোনালী একটি অধ্যায়।  জীবনের পরিমাপে শৈশবের স্থান তাই সবার উপরে।

রিফাত নওরিন, যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2017, 11:14 AM
Updated : 15 Jan 2017, 11:15 AM

সেই বাল্যকালের অনুভূতি, প্রথম অ-আ  পড়া, মায়ের হাতে ভাত খাওয়া, ভাই-বোনদের সাথে দুষ্টুমিতে ভরা এক শৈশব। এসব এখনও বড়ই  মধুর স্মৃতি হয়ে আছে আমার মনে।

নিশ্চিন্তে সকালে ঘুম থেকে উঠে মায়ের হাতের তৈরি চা-রুটি খেয়ে স্কুলে যাওয়া, স্কুল থেকে এসে পড়া তৈরি করে খেলতে যাওয়া, আর সন্ধ্যাবেলায় রূপকথার রাজকন্যার গল্প শুনে ঘুমাতে যাওয়া- অফুরন্ত আনন্দে মন ভাসানো দিনগুলি আমার!

বিদেশ- বিভূঁইয়ের জীবনে এখনকার দিনগুলি কাটে আমার বাচ্চাদের শৈশব দেখে। ভীষণ ব্যস্ততায় ভরা তাদের জীবন।  প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা স্কুল করে ক্লান্ত আমার বাচ্চারা ঘুমিয়েই বিকালটা পার করে দেয়।  তাদের জীবনের আকর্ষণ সুপারহিরো, ডাইনোসর, শার্ক- এইসব ঘিরে।

এই বয়সেই যদি আমি বলি, বাবারা একটা গল্প বলো। তখন ঘুরে-ফিরে তারা বলে, "মাম্মি, এতবড়ো ডাইনোসর ছিল।" তারপর যথাক্রমে ডাইনোসর থেকে গল্প শুরু হয়ে সুপারহিরোতে গিয়ে শেষ হয়।

মনে পড়ে আমাদের ছোটবেলা কেটেছিলো ঠাকুরমার ঝুলি আর রূপকথার গল্প পড়ে। প্রতিটা গল্প পড়তে পড়তে মুখস্থ হয়ে যেত। যখন নানু বাড়ি যেতাম, তখন প্রতি রাতেই হতো গল্প বলার আসর। প্রধান বক্তা আমিই থাকতাম, এক ঝাঁক  কাজিনদের নিয়ে চলতো আমাদের গল্প বলার আসর।

খুব ছোটবেলা থেকে আমি প্রচুর বই পড়তাম। গল্প-কবিতা, রূপকথা আর প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়া আমার পুরোনো অভ্যাস।  যখন আমি পড়তাম কাজলা দিদির কথা, তখন আমি আবেগে ভাসতাম। যখন পড়তাম গড়াই নদীর তীরে, তখন যেনো আমার মানসপটে ভেসে উঠত নদীর ধারের একখানা ঘর, বড় মায়ায় সাজানো সেই ঘর।

আমার বাচ্চাদের দেখে ভাবি, তাদের সুপারহিরোময় জীবনে কখনও এই অনুভূতি আসবে না। তারা কখনো বুঝতে পারবে না, বাশঁবাগানের মাথার উপর চাদঁখানা দেখতে কতটা সুন্দর! যতো চেষ্টাই করি না কেন, আবেগ কি তারা আনতে পারবে? সময় যে বদলাচ্ছে ...!

আমার শুধু মনে হয়, এর চেয়ে ঢের ভালো ছিল আমাদের বৌ-ছি খেলার সবুজ মাঠ, গল্প বলার আসর, মুগ্ধতা নিয়ে  প্রকৃতিকে ভালবাসা।

হাজারও দামে যদি কেনা যেত, তবে আমি হয়তো আমার শৈশবে ফিরে যেতাম। আমি আবারও বাঁচতে চাইতাম সেই সময়ে, যেখানে হয়তো নিশ্চিন্তে আমি আবারও মাথা দুলিয়ে পড়তাম-

         "আমি হবো সকাল বেলার পাখি

    সবার আগে কুসুমবাগে উঠব আমি ডাকি।"

লেখক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি

এই লেখকের আরও পড়ুন

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ, আড্ডা, আনন্দ বেদনার গল্প, ছোট ছোট অনুভূতি,  দেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!