সিঙ্গাপুরে আমার কাজ করার অনুমতি নেই। তাই, লেখালেখির পাশাপাশি এসব ফ্রিল্যান্স কাজই ভরসা।আমি ওই প্রজেক্টে কাজ করার ব্যাপারে আমার আগ্রহের কথা জানালাম।
বিষয়টি কিন্তু এমন নয় যে, এখানে আমার কাজ করার অনুমতি নেই বলেই আমি এই প্রজেক্টে কাজ করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছিলাম। আমার আগ্রহের সবচেয়ে বড় কারণটি হলো, এই প্রজেক্টের মাধ্যমে আমি এমন কিছু কাজ করে যেতে পারবো, যার সুফল ভোগ করবে সিঙ্গাপুরে কর্মরত আমার দেশের অভিবাসী শ্রমিকরা।
সমস্যা হলো, বাংলাদেশ থেকে যেসব শ্রমিক সিঙ্গাপুরে কাজ করতে এসেছেন, তাদের বেশিরভাগই ইংরেজি বোঝে না। কাজেই যখন ওই এনজিওর সেবাদানকারিরা রোগীর সাথে কথা বলে উপসর্গ জানার এবং রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করেন, তখন বেশ সমস্যায় পড়তে হয় তাদের। কারণ সেবাদানকারিরা বাংলা বোঝেন না, ওদিকে বাংলাদেশি শ্রমিকরা ইংরেজি বোঝেন না। ফলে যে ভাষাগত সমস্যাটা হয়, তা সমাধানই এই প্রজেক্টের উদ্দেশ্য।
এনজিওটির সাথে আলাপ করে ফ্রান্তিশেক একটি বুকলেট বানানোর পরিকল্পনা করলো। রোগীর রোগ নির্ণয়ের সময় চিকিৎসকদের যেসব শব্দ এবং বাক্য ব্যবহার করতে হয়, সেগুলোই বাংলায় অনুবাদ করে দিতে হবে এবং ট্রান্সলিটারেশন করতে হবে যেন সেবাদানকারিরাও এই বাংলা শব্দ ও বাক্যগুলো ব্যবহার করতে পারে। আমার কাজটা খুব সহজ- অনুবাদ এবং ট্রান্সলিটারেশন করা।
মূল কাজটি করেছে মূলত ফ্রান্তিশেকের শিক্ষার্থীরাই। এরা হলেন- জাইনাব, ক্রিস্টি, জোয়ি এবং লিন।এরা সবাই নানইয়াং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা নিয়ে অনার্স পড়ছে।‘পৃথিবীর ভাষাসমূহ’ নামক একটি কোর্সের অংশ হিসেবে তারা এই প্রজেক্টে কাজ করেছে। এরা প্রত্যেকেই দুরন্ত, পরিশ্রমী এবং কাজের ব্যাপারে ভীষণ মনোযোগী। চারজন মিলে যার যার কাজ ভাগ করে নিয়েছে তারা।
শুধু রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা বিষয়ক তথ্যই নয়, হাসপাতালে গিয়ে সেবা নেওয়ার আনুষঙ্গিক বিষয়সমূহও লিপিবদ্ধ করা হলো এই বুকলেটে। এমনকি হেল্থসার্ভের ক্লিনিকগুলোতে যেতে হলে কোন বাসে উঠতে হবে, কোন স্টপেজে নামতে হবে-সবই রয়েছে এখানে।
সিঙ্গাপুরের মত একটি দেশে যেখানে চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল একটি বিষয়, সেখানে বিনামূল্যে সেবা দেওয়ার জন্য এতো সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ! এই প্রজেক্টের একজন হতে পেরে গর্ববোধ করি।
আমি হয়তো একদিন এখানে আর থাকবো না, কিন্তু যে কাজটি করে গেলাম তার সুফল ভোগ করবে বাংলাদেশ থেকে আসা শ্রমিকরা। ভাবতেই ভীষণ ভালো লাগছে।
লেখক: সাংবাদিক
ই মেইল: rokeya.lita@hotmail.com
রোকেয়া লিটার আরও লেখা