চোখে জল নিয়ে দেশ ছেড়ে

উচ্চ শিক্ষা কিংবা আর্থিক অনটন দূর করার জন্য বিদেশের উদ্দেশ্যে বিমানে উঠে চোখের জল আর আটকানো যায় না। জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকার এই নাম প্রবাস।

রাশিদুল ইসলাম জুয়েল, সিঙ্গাপুর থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Jan 2017, 11:03 AM
Updated : 7 Jan 2017, 01:07 PM

হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে অন্য দেশে বাস করা, একটু সচ্ছল জীবন প্রত্যশার নাম হল প্রবাস। নিজের দেশ থাকলেও জীবিকার তাগিদে অন্য দেশে বসবাস করার নাম প্রবাস। আমাদের দেশে বেকারত্ব ও পর্যাপ্ত পরিমান কর্মসংস্থান না থাকার কারণে আমরা দূর প্রবাসে পাড়ি দেই।

দেশের মায়া মমতা ও আদর ভালবাসা ছেড়ে নূন্যতম জীবিকার তাগিদে আমাদের প্রবাস জীবন বেছে নিতে হয়। আমাদের চোখে জল,বুকে ব্যথা,তবুও মুখে থাকে হাসি,আমরা প্রবাসী।

এই প্রবাসীদের অবস্থা অনেকটা চার দেয়ালের মতো। প্রবাসীরা যেমন রাষ্ট্রীয় সুবিধা থেকে বঞ্চিত,তেমনি বঞ্চিত পারিবারিক সুবিধা থেকেও। পাসপোর্ট দিয়ে বিমান বন্দরের সীমানা পার করে দেওয়ার পর এদের আর খবর নেওয়ার কেউ থাকে না।

সেই সাথে দেশে বসবাসকারীদের মনেও প্রবাসীদের জন্য খুব একটা শ্রদ্ধা নেই। কিন্তু এই প্রবাসীরাই নিজের জীবনের সব সাধ-আহ্লাদ বাদ দিয়ে দেশ আর পরিবারের জন্য অক্লান্ত শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। একদিকে যেমন দেশের জন্য রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন,অন্যদিকে এক একজন প্রবাসী এক একটি পরিবারকে সচ্ছলভাবে চালিয়ে নিচ্ছেন।

এই প্রবাসীরা আমাদের জন্য কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করেন সেটা অনেকেরই অজানা।
প্রবাস মানেই কি নিঃসঙ্গতা? নাকি প্রবাস মানেই হাড়ভাঙা পরিশ্রম? কেমন কাটে প্রবাস জীবন? কেউ বলে মলিন নয়তো ফ্যাকাশে,কেউ বলে পানসে।

কারও কাছে রোমাঞ্চকর,অতি মাত্রায় স্বাধীনতা। কারও কাছে জীবনের সোনালি অধ্যায়ের যাত্রা শুরু। কেউ ভাবছে,এই তো চলছি সোনার হরিণের পেছনে।

আবার কেউ প্রবাসে এসে দালালের কবলে পড়ে হচ্ছেন প্রতারিত। ভিটেমাটি বিক্রি করে এসে হচ্ছেন নিঃসঙ্গ। দালালের সঙ্গে কোন ধরনের চুক্তিপত্র না করায় দূতাবাস থেকেও কাঙ্খিত সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না প্রবাসী বাঙালিরা।

আবার কেউ ফেলেন দীর্ঘশ্বাস। যেন কোনো এক নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত। এই ভিন্ন ভিন্ন ভাবনাগুলো তাদের,যারা প্রবাসী। তবে পুরো বিষয়টাই নির্ভর করছে কর্মস্থল,কাজের পরিধি, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও ব্যক্তির ওপর। ব্যক্তিজীবনের দৃষ্টিভঙ্গি ও তার মানসিকতার ওপর। যাপিত জীবনের রীতি,কাজকর্মের শ্রেণিভেদ,পারিবারিক ঐতিহ্য ও রুচিবোধের ওপর।

আর যারা প্রবাসী নন,প্রবাসীদের সম্পর্কে তাদের ধারণা হলো,প্রবাসীরা হলেন টাকার মেশিন। এখানে শুধু টাকা আর টাকা। প্রবাসীদের সম্পর্কে অন্যদের এই ধারণা পুরো অর্থকেন্দ্রিক। অর্থাৎ,প্রবাসী মানে অঢেল অর্থ উপার্জনের কারিগর। স্বজনেরা অন্তত এই একটি বিষয়ে পুরোপুরি সজাগ। প্রবাসী মানেই তার থাকবে আর্থিক সচ্ছলতা। উন্নত জীবন ধারা।

এটি নির্জলা সত্য যে,বাংলাদেশের সমৃদ্ধ অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর চাবিকাঠি হলো প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যন্স । বাংলাদেশ ব্যাংক বছর ঘুরে গুনছে হাজার কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা! তাই কারও বুঝতে কষ্ট হয় না,প্রবাসী মানে একদল হাড়ভাঙা পরিশ্রমী খেটে খাওয়া মানুষ।

বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবাসীদের যাত্রা ভিন্ন ভিন্ন কারণে। কেউ আসছেন অর্থ উপার্জনের জন্য। এদের অনেকেই দক্ষ,কেউ অদক্ষ। কেউ আসছেন আবার উচ্চশিক্ষার্থে। এদের কেউ দীর্ঘমেয়াদি, আবার কেউ স্বল্প সময়ের জন্য।

উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন আমরা সবাই প্রবাসী। সবাই চলছে ওই সোনার হরিণের পেছনে,  এটাই বাস্তব। স্বজনদের নিয়ে যদি কিছুটা ভালো থাকা যায়! হোক না সে দক্ষ কিংবা অদক্ষ, স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী, অথবা কোনো বিশেষ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ।

আমরা প্রবাসীরা সবাই তো বাঙালি। বিদেশে থাকলেও আমাদের একমাত্র পরিচয় আমরা বাঙালি। আমরা বাংলাদেশি।

লেখক: সিঙ্গাপুর প্রবাসী

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!