সিঙ্গাপুরে ভাল আছে নিহত সাংবাদিক পুত্র রিপন

বাবা ছিলেন সাংবাদিক আর তার ছেলে রিকশাওয়ালা। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে আলোচনার ঝড় উঠেছিলো একসময়।

একেএম মোহসীন, সিঙ্গাপুর থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Jan 2017, 11:36 AM
Updated : 1 Jan 2017, 12:39 PM

আসাদুজ্জামান রিপন ওরফে রিপন শেখের বাবা নহর আলী। খুলনা থেকে প্রকাশিত 'দৈনিক অনির্বাণ' পত্রিকার ডুমুরিয়া প্রতিনিধি ছিলেন। ২০০১ সালের ১৭ এপ্রিল রিপনের বাবাকে নিজ বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে হত্যা করে।

এরপর থেকে পরিবারে দুর্ভোগ নেমে আসে। নহর আলীর স্ত্রী আসমানী বেগম ছেলে আসাদুজ্জামান রিপন, মেহেদী হাসান রানা, মেয়ে রেহেনা পারভীন ও হীরা খাতুনকে নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েন।

এ অবস্থায় বড় ছেলে রিপন কিছুদিন খুলনায় এবং পরে ঢাকা শহরে রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। বিষয়টি একজন সংবাদ কর্মীর নজরে আসে। তিনি রিপনকে নিয়ে ২০১৪ সালের ১৬ই নভেম্বর 'নিহত সাংবাদিকের ছেলে ঢাকায় রিক্সা চালক!' শিরোনামে ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করেন।

'দিবাশ্রম' সংগঠনের সদস্যদের সাথে রিপন

রিপোর্টটি দৃষ্টি আকর্ষণ করে দেশের খ্যাতনামা সাংবাদিকদের। তাদের কয়েকজন মিলে রিপনের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেন। দেশের সিনিয়র সাংবাদিকরা সম্পূর্ণ বিনা খরচে সিঙ্গাপুরে 'হুন্দাই কনস্ট্রাকশন কোম্পানি'তে রিপনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে। সকলের সম্মিলিত উদ্যোগে আসাদুজ্জামান রিপন গত বছর জানুয়ারিতে সিঙ্গাপুরে পৌঁছে কাজে যোগ দেন।

সিঙ্গাপুর থেকে প্রকাশিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অভিবাসীদের বাংলা কাগজ 'বাংলার কণ্ঠ'-এর প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাংবাদিকপুত্র রিপন জানান, তার বাবাকে হত্যা করার পর খুলনার সাংবাদিকরাও ভয়ে তাদের খোঁজ নিতেন না। খোঁজ নিতেন একজন, তিনি 'খুলনা মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন'-এর তৎকালীন সভাপতি বেলাল হোসাইন। তিনিও পরে সন্ত্রাসী হামলায় মারা যান।

রিপন শেখ জানালেন, সিঙ্গাপুরে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়ে এখন তিনি খুবই ভালো আছেন। নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন। গত এক বছরে কর্মকালীন সময়ে আনুষাঙ্গিক খরচের পর সাড়ে চার লক্ষাধিক টাকা দেশে পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন রিপন। সেই টাকায় তাদের খুলনার ডুমুরিয়ার বাড়িতে তিন রুমের ইটের পাকা ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।

হুন্দাই কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে কর্মরত অন্যান্য বাংলাদেশিরা জানান, কোম্পানির একজন কর্মঠ ও নিয়মনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে কোম্পানির কর্তৃপক্ষসহ রিপন সকলের কাছেই খুব সমাদৃত। পরবর্তী বছরের জন্য তার কাজের চুক্তির মেয়াদও নবায়ন করা হচ্ছে।

ছুটির দিনগুলোতে রিপন সিঙ্গাপুরে শ্রমজীবী অভিবাসীদের অবসর যাপন ও বিনোদন কেন্দ্র বাংলাদেশ সেন্টারে নিয়মিত উপস্থিত হন। তাছাড়া রিপন সিঙ্গাপুরে শ্রমজীবী অভিবাসীদের সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র 'দিবাশ্রম'-এর একজন নিয়মিত সদস্য হিসেবে সিঙ্গাপুরে শ্রমজীবী অভিবাসীদের কবিতা চর্চা ও সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশ নেন। নতুন বছরের ছুটির দিনে রিপন এসেছিলেন 'দিবাশ্রম'-এর সম্মিলনীতে। সেখানেই এসব বলেন আসাদুজ্জামান রিপন।

লেখক: একেএম মোহসীন, সম্পাদক 'বাংলার কণ্ঠ'

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ, আড্ডা, আনন্দ বেদনার গল্প, ছোট ছোট অনুভূতিদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!