গত ৩০ অক্টোবর ফেইসবুকে ‘ইসলাম অবমাননার’ অভিযোগ তুলে নাসিরনগরে ১৫টি মন্দির এবং হিন্দুদের শতাধিক ঘরে ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এর পাঁচ দিনের মাথায় একই এলাকার কয়েকটি হিন্দু বাড়ি ও মন্দিরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
এছাড়া বছরজুড়ে যশোর,নেত্রোকোণা,গাজীপুর,ঝালকাঠি,সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
গত ৬ নভেম্বর রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ও সাঁওতালদের সংঘর্ষ থামাতে গুলি চালায় পুলিশ। এতে তিন সাঁওতাল নিহত হন,আহত হন অনেকে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওপর এই নির্যাতনের ঘটনায় প্রতিবাদ করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরাও। বিশ্বের নানা দেশে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশের কিছু চিত্র তুলে দেওয়া হলো-
২ নভেম্বর
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের জ্যাকসন হাইটসে ডাইভার্সিটি প্লাজায় একটি প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
একইদিন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের পররাষ্ট্র সম্পর্কিত কমিটির সদস্য গ্রেস মেং এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা-সহিংসতার নিন্দা জানান।
৭ নভেম্বর
কানাডার টরন্টোয় 'বাঙালি পাড়া' হিসেবে পরিচিত ড্যানফোর্থ এলাকায় সমাবেশ করে 'কানাডা উদীচী'।
সমাবেশ থেকে হামলায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হকের পদত্যাগ দাবি করা হয়।
৯ নভেম্বর
কানাডার সাস্কাচুয়ানে সাস্কাতুন শহরে সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে একটি মৌন মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
মিছিল পরবর্তী সমাবেশে নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলাসহ ১৯৭১ পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার নিন্দা জানানো হয়।
১২ নভেম্বর
যুক্তরাষ্ট্র নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি শেষে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বরাবর একটি স্মারকলিপি দেয় ‘বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র শাখা'।
স্মারকলিপিতে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অবস্থা যাচাইয়ের জন্যে উচ্চ পর্যায়ের একটি ‘জাতিসংঘ প্রতিনিধি দল’ পাঠানোর আহ্বান, আইসিটি অ্যাক্ট-৫৭ ধারা বাতিলসহ সাত দফা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়।
১৩ নভেম্বর
অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের কুইনল্যান্ড শহরের সেন্ট লুসিয়ায় বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী হিন্দু সম্প্রদায় এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন।
১৫ নভেম্বর
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের সাউথ জার্সিতে প্রবাসী বাংলাদেশি হিন্দুরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। নির্যাতিত হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও সাঁওতালদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের জন্য 'জাগরণী কালচারাল সোসাইটি ইনক' এর উদ্যোগে সাউথ জার্সির পোমনায় এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
২০ নভেম্বর
ফ্রান্সের প্যারিসের প্লাস দো লা রিপাবলিক চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি পালন করে 'বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পরিষদ'।
একই দিন টরন্টোর ডানডাস স্কোয়ারে মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচিতে অংশ নেয় টরন্টোর বাংলাদেশ কানাডা হিন্দু কালচারাল সোসাইটি,বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ,বাবা লোকনাথ আশ্রম,বাংলাদেশ মাইনরিটি রাইটস অ্যালায়েন্স, হিন্দু ধর্মাশ্রম,জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এবং টরন্টো দুর্গাবাড়ি।
কানাডার রাজধানী অটোয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের মানবিক সংহতি সভা অনুষ্ঠিত হয় ওভারব্রুক কমিউনিটি সেন্টারে।
এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন শহরের ফরেস্ট লেক সাবার্বের কলেজ অ্যাভিনিউয়ের এক কমিউনিটি হলে 'বাংলাদেশ পূজা অ্যান্ড কালচারাল সোসাইটি,ব্রিসবেন' প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে।
২৭ নভেম্বর
অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডেলেইডে 'বাংলাদেশ পূজা ও কালচারাল সোসাইটি অব সাউথ অস্ট্রেলিয়া' প্রতিবাদ র্যালি এবং মানববন্ধন করে। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টের সামনে ও ভিক্টোরিয়া স্কয়ারে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
একইদিন অস্ট্রেলিয়ার সিডনির মার্টিনপ্লেসে মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করে 'বাংলাদেশি হিন্দু অ্যাসোসিয়েশন'।
১১ ডিসেম্বর
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি'তে হোয়াইট হাউজের পাশে লাফায়েত পার্কে বিক্ষোভ সমাবেশ করে 'বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র শাখা'।
সমাবেশ থেকে ১৯৭২ সালের সংবিধান ফিরিয়ে আনা, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকে ধর্মনিরপেক্ষতা বিষয়ে পাঠদান বাধ্যতামূলক করা এবং জামায়াতে ইসলামসহ ধর্মভিত্তিক সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়।