আগের পর্বেই জাহাজের ছাদে ড্রাগন দুর্গের পথে বলেছিলাম তনুদি’র পরিবারের সঙ্গে বন ঘুরছি আমি। সঙ্গে আছে দেবারতিদি’র হবু বর গাব্রিয়েল (যাকে আমি গডজিলা বলে ডাকি) আর সঞ্জীবদা।
তনুশ্রীদি ভীষণ মায়াবতী। তিনি এবং সুমনদা দু’জনেই খুব সহজে মানুষকে আপন করে নিতে পারেন। আমাদের পুরো দলটির যাত্রাপথে নেতৃত্ব দিচ্ছে সঞ্জীবদা আর সার্বিক নেতৃত্ব দিচ্ছিলো দেবারতিদি।
১১৩৮ থেকে ১১৬৭, এর মধ্যে কোনও এক সময় কোলনের প্রথম আর্চ বিশপ এটি নির্মাণ করেছিলেন৷ কোলন এলাকা ও এর আশপাশের অঞ্চলের প্রতিরক্ষার জন্য এটি নির্মাণ করা হয়েছিল৷ ১৬৩৪ সালে এক খণ্ড যুদ্ধের সময় সুইডিশ প্রটেস্টানদের দ্বারা দুর্গটি আক্রান্ত হয়৷ পরে আর সংস্কার করা হয়নি এটি৷ ১৮৮৩ সালে পর্যটক আকর্ষণের জন্য এখানে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়৷
ড্রাখেনফেলস নিয়ে বেশ কিছু কিংবদন্তি শোনা যায়৷ তার মধ্যে সবচেয়ে যেটি প্রচলিত তা হলো- নিবেলউঙ্গেনলিডের বীর সিগফ্রিড, ড্রাগন ফাফনিরকে হত্যা করে তার রক্ত দিয়ে স্নান করেছিলেন। ড্রাগনটি থাকত ওই পাহাড়ের গুহায়৷ তাই ঐ গুহার নাম হয়েছে ‘ড্রাখেনফেলস’৷
সঞ্জীবদা তখন তাকে কাঁধে উঠিয়ে নিয়ে বললো, “চল, তোমাকে ড্রাগন দেখিয়ে আনি।”
আমারও ভীষণ কৌতুহল হল। আমিও চললাম পিছু পিছু। ক্যাফের পাশ দিয়ে একটা সরু পাহাড়ি পথ দিয়ে উঠে দেখি অনেক ছোট বাচ্চা-কাচ্চা ভিড় করে আছে। আর খুব গম্ভীর একটা স্বরে জার্মান ভাষায় কে যেন কথা বলছে, অনেকটা গল্প বলার মত। উঁকি দিয়ে দেখি একটা কাঁচের বাক্সের ভেতর ড্রাগন বসে আছে, আর তার মুখ থেকেই বের হচ্ছে আওয়াজ।
দাদা জানালেন, ড্রাগন তার দুর্গের গল্প শোনাচ্ছে। কবে এখানে কি ছিল? সে কার সঙ্গে যুদ্ধ করেছে এসব।
এমন সময় সঞ্জীবদা হিয়াকে বললেন, “তুমি কি জানো ড্রাগনের মুখ দিয়ে কেন আগুন বের হয়?”
হিয়া বললো, “হ্যাঁ, জানি তো। যখন ড্রাগন রেগে যায়, তখন ওর মুখ দিয়ে আগুন বের হয়।”
হিয়া ছোট্ট মানুষ। সে বিনা দ্বিধায় সে কথা বিশ্বাস করলো। তারপর পুরোটা সময় ড্রাগন নিয়ে নানা প্রশ্ন করতে লাগলো আর দাদা তেমনি নির্দ্বিধায় তার মনের মত উত্তর দিয়ে গেলো।
নীচে নামার পথে ড্রাখেনফেলস প্রাসাদ। ট্রেন সেখানে বিরতি নিয়ে একেবারে নিচে নেমে যায়। তাই ট্রেন থামলে আমরা নেমে পড়লাম। টিকেট কেটে ভেতরে ঢুকতেই দেখি বাগানে ঘেরা একটা প্রাসাদ। প্রাসাদের ভেতর আগের রাজ-রাজরাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, খাট, পোষাক-আশাক, তৈলচিত্র- এসব। এসব দেখে ছাদে উঠে গেলাম। দেখলাম পাশেই বিয়ে হচ্ছে।
এরপর ইউরোপের বহু জায়গায় এমন দেখেছি। প্রাসাদ বা দুর্গের মধ্যে বিয়ের অনুষ্ঠান বা ফটোসেশন। কিন্তু এখানে বিয়ের ভোজ এবং বর কনের ছবি তোলা দুটোই হচ্ছিল। খ্রিস্টানদের বিয়ের এই সাদা গাউন আমার ভীষণ পছন্দের। আমার বিয়েতে এমন পোষাক পরার ভীষণ ইচ্ছে ছিল।
সঞ্জীবদা আমাকে ট্রাম লাইন পর্যন্ত এগিয়ে দিলো। তাকে বিদায় জানিয়ে উঠে পড়লাম ট্রামে। ভীষণ সুন্দর একটা দিনের সুন্দর পরিসমাপ্তি ….
(চলবে)
লেখক:
এডিটর অ্যান্ড মডারেটর, ডয়েচে ভেলে, বাংলা বিভাগ
ইমেইল: amrita.modak81@gmail.com
ছবি কৃতজ্ঞতা: অমৃতা পারভেজ
অমৃতা পারভেজের আরও পড়ুন:
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ, আড্ডা, আনন্দ বেদনার গল্প, ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |