এসব উৎসব উপলক্ষে শহরটিকে অনেকটা নিরাপত্তার চাদরে ডেকে ফেলা হয়। এ সময় পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা এসে শহরকে করে তোলে আরও প্রাণবন্ত।
তবে এখানকার আবহাওয়া অনেকটা বেমানান। আজ ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তো কাল ১৮ ডিগ্রি! সাথে মৃদু হাওয়া কিংবা বর্ষণ। একেক দিন আবহাওয়া একেক রকম। তাই পর্যটকদের একটু বেগ পেতে হয়।
শহরের বাইরেও অবকাশ যাপনের মত আরও কিছু দৃষ্টিনন্দন জায়গা আছে। সময়ের সাথে রুটিন মেপে চলা ব্যস্ত জীবনে ছুটির দিনগুলোই দীর্ঘ নাভিশ্বাসের প্রেরণা যোগায় সবার। তাই লম্বা ছুটিতে সবাই যার যার মতো করে ট্যুর প্ল্যান মোতাবেক ছুটে যাচ্ছে গন্তব্যে। আমিও সবার থেকে আলাদা নই।
প্লেন থেকে দেখা যায় এর অন্যরকম ভিউ। এক কথায় অসাধারণ। দীর্ঘ এই রোডের মাঝে যে জায়গাটা সবচেয়ে আকর্ষণীয়, তা হল আইকনিক পিলার নামে খ্যাত 'টুয়েলভ অ্যাপস্টল'। সাগরের ঢেউ আর লবণাক্ততার কারণে এই পাথরগুলোর ফরমেশন প্রতিনিয়ত ক্ষয় হচ্ছে। প্রায় প্রতি বছর দুই সেন্টিমিটার করে।
শুরুতে ১২টি থাকলেও সময়ের সাথে সাথে ক্ষয় হয়ে এখন দাঁড়িয়েছে আটটিতে। ভবিষ্যতে এগুলোর অস্তিত্বও হুমকির মধ্যে পড়বে। এই টুরিস্ট স্পটটিকে বহিঃর্বিশ্বে আরও বেশি বেশি করে তুলে ধরার জন্য গত কয়েক বছর ধরে আয়োজন করা হয় 'ক্যাডেল ইভান গ্রেট ওসান রোড রেস' (সাইক্লিং)।
অন্য জায়গাটির নাম 'ফিলিপ আইল্যান্ড'। সারাদিন গ্রেট ওসান রোডে ঘুরে তার পাশেই ছোট শহর টরকিতে রাত্রিযাপন করলাম। পরদিন সকালে কুইন্সক্লিপ থেকে ফেরি করে ফিলিফ আইল্যান্ডের উদ্দ্যেশে যাত্রা শুরু করলাম। আনুমানিক ঘণ্টাখানেকের ফেরি যাত্রায় সাগরের মাঝে সিল আর ডলফিনের বাহারি কসরত এবং সাঁতার দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল।
পর্যটন শিল্পকে কীভাবে আয়ের উৎসে পরিণত করা যায় তার একটা বড় উদাহরণ ভিক্টোরিয়ার এই পর্যটন কেন্দ্রগুলো। আমাদের দেশেও আছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার এবং একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। কিন্তু দেশের লোকজন ছাড়া বাইরের কয়জন মানুষ জানে এর কথা, তা নিয়ে সন্দেহ আছে!
শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ আর পণ্য থাকলেই হয় না, বহিঃর্বিশ্বে সেই পণ্য প্রচারের জন্য কৌশলগত কিছু পদক্ষেপও নিতে হয়। পোশাক শিল্পে যদি বাংলাদেশ সারাবিশ্বের কাছে ঈর্ষার পাত্র হয়ে থাকে, তাহলে চেষ্টা করলে এই শিল্পেও আমরা সবার কাছে আকর্ষণীয় হতে পারি।
বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন কেন পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাথে যুক্ত, তা বোঝা মুশকিল। পর্যটনের সাথে সরাসরি ব্যবসা এবং বিনিয়োগ জড়িত। সিভিল এভিয়েশনকে পর্যটনের সাথে যুক্ত করে পর্যটন শিল্পকে গৌণ বিষয় ভাবা ছাড়া কিছুই দেখি না। এখন পর্যন্ত কোন সরকারই এই মন্ত্রণালয়ে একজন দক্ষ, গতিশীল এবং পর্যটনবান্ধব মন্ত্রী দিতে দেখা যায় নাই।
পরিশেষে বলব, এই খাতকে ভিন্নচোখে দেখার জন্য শুধু সরকারের উপলব্ধির প্রয়োজন। বহিঃর্বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে পর্যটন শিল্পকে দেশের অর্থনৈতিক খাত হিসাবে বিবেচনা করে বড় এবং বাস্তবসম্মত কর্ম-পরিকল্পনা হাতে নেওয়া জরুরি।
লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |