চিংডাও, চীনের শ্যাংডং প্রদেশে অবস্থিত ইয়েলো সাগরের কুল ঘেঁষে গড়ে উঠা একটি সুন্দর শহর। এই শহরে আছে সমুদ্র সম্পর্কিত নানান বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য সুপরিচিত 'ওশান ইউনিভার্সিটি অব চায়না'। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমিও একজন পিএইচডি রিসার্চ ফেলো হিসেবে আছি।
বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে বিশ্বের অনেক দেশের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে আসেন। চীন সরকারের বৃত্তি নিয়ে বাংলাদেশ থেকে গত তিন বছরে মোট দশজন শিক্ষার্থী এখানে উচ্চশিক্ষা নিতে আসেন। তারা মূলত পিএইচডি এবং মার্স্টাস কোর্সে ভর্তি হয়েছেন।
চিংডাও শহরটিতে ক্রিসমাস পার্টির প্রচলন সর্বপ্রথম শুরু করেন জার্মানরা। এই শহরটা একসময় ছিল জার্মানিদের দখলে। তাই এই শহরে ঘুরতে বের হলে দেখা মিলবে জার্মানদের তৈরি নানা ধরনের স্থাপনার।
নয়নাভিরাম এই শহরের রাতের দৃশ্যগুলো জানান দেয় বর্তমান অর্থনীতির অন্যতম পরাশক্তি চীনের শৌর্যবীর্যের। সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শ হওয়া সত্ত্বেও চীনে অবস্থানরত বিদেশিদের ধর্ম পালনে তেমন কোন বিধি-নিষেধ নেই। বরং অনেকক্ষেত্রে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়ে থাকে।
আগে বিদেশি শিক্ষার্থীদের চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নের সুযোগ ছিল সীমিত। কিন্তু বর্তমানে চিত্রটা সম্পূর্ণ অন্যরকম। চায়না সরকারের বিভিন্ন ধরনের বৃত্তি নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা অধ্যয়নের সুযোগ পাচ্ছে।
ওশান ইউনিভার্সিটির 'স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন'-এর পৃষ্ঠপোষকতায় গত ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে গেল 'মেরি ক্রিসমাস' অনুষ্ঠান। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে ওই অনুষ্ঠানে আমিও গিয়েছিলাম।
সেখানে তিন পর্বের অনুষ্ঠানের একটি পর্বে ছিল বিদেশি অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের নিজ দেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরার পর্ব। এই মোক্ষম সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশের দশজন শিক্ষার্থী এই পর্বে অংশ নেয়। তারা হলেন- মোস্তফা শামছুজ্জামান, নুসরাত জাহান তানিয়া, মো. ওহিদুল আলম, এহসানুল করিম, হালিমা খাতুন, তরিকুল ইসলাম রানা, মো. মনজুর হাসান, মুহাম্মদ ফররুখ রহমান, আবদুল্লাহ আল মামুন এবং মাহদী হাসান।
মো. মনজুর হাসানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত 'তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দিবরে' গানটির দলীয় সঙ্গীতে অংশ নেন তরিকুল ইসলাম রানা, মুহাম্মদ ফররুখ রহমান, আবদুল্লাহ আল মামুন এবং মাহদী হাসান। এছাড়া ছিল আরও নানা আয়োজন।
দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনের সময় ব্যাকগ্রাউন্ড স্ক্রিনে প্রদর্শিত হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, কৃষ্টি-কালচার, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ইত্যাদি সম্বলিত নানা ফুটেজ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা তা দেখে বিমোহিত হন এবং বাংলাদেশের পরিবেশনার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
নিজের দেশকে বিদেশের মাটিতে এভাবে তুলে ধরতে দেখে গর্বে বুকটা ভরে গিয়েছিল সেদিন।
লেখক: এহসানুল করিম, পিএইচডি রিসার্চ ফেলো, ওশান ইউনিভার্সিটি অব চায়না