নতুন শার্ট কিনব ভেবে শপিংমলে কয়েকদিন গেলাম। শপিংমলগুলোতে শীতের বড় বড় মোটা মোটা জামার ভিড়ে শার্ট,টি-শার্ট কোনটাই নজরে আসছে না। শার্ট ডিসপ্লে করার অর্ধেক জায়গা দখল করে রেখেছে নানা ফ্যাশনের, নানা ডিজাইনের শীতের জামা।
আকর্ষণীয় বাহারি শীতের জামা সাজিয়ে রাখা কুয়ালালামপুর শহরের সব শপিংমলে। মালয়েশিয়ায় এতো শীতের কাপড় কারা কেনে? এই দেশে তো শীত নেই!
মধ্য অক্টোবরে থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গভীর রাতে সামান্য ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। এই কারণেই কি এতো শীতের কাপড়! নাকি শীতের দেশ থেকে আসা ট্যুরিস্টদের জন্যে।
হ্যা,এগুলো প্রধানত বিদেশি পর্যটকদের কেনার জন্য। এছাড়া মালয়েশিয়ার নাগরিক যারা বেড়াতে,ব্যবসার কাজে,অফিসের দায়িত্বে বাইরের দেশে যাবেন, তারাও এসব কিনছেন।
গত সাড়ে তেরো বছর ধরে মালয়েশিয়ায় প্রবাসী হয়ে আছি। যতবার দেশে বেড়াতে গেছি, শীতকাল পাইনি কখনও। তাই নিজের হাতে শীতের জামাও কেনা হয়নি গত এক যুগের বেশি সময়।
মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশি প্রবাসীরা শীত মৌসুমে দেশে বেড়াতে গেলে কেউ কেউ পছন্দমত শীতের জামা কিনে নেয়। তাও ওজনে ভারী বলে সবাই নিতে চায় না। দেশে আরো সুন্দর ও সস্তায় পাওয়া যাবে বলে শীতের জামা কেনা এড়িয়ে যায়।
শীত,বর্ষা,গ্রীষ্ম,বসন্ত-দেশে যে ঋতুই থাক, শীতের একটা জিনিস অবশ্যই কম-বেশি যে কোনো মৌসুমে নিয়ে যায় অধিকাংশ বাংলাদেশি। সেটা হলো প্যাকেটের গায়ে 'মেইড ইন কোরিয়া'লেখা শীতের কম্বল। প্রতিবার দেশে যাওয়ার সময় কম্বল না নিলে অনেকের কেনাকাটা পরিপূর্ণই হয় না।
তো শীতহীন দেশে এতো শীতের কাপড় কেন- সেই আলাপে ফিরে যাই আবার। মালয়েশিয়ানরা এ সময়ে, বিশেষ করে নভেম্বর-ডিসেম্বরে বিদেশে বেড়াতে যান বেশি। এই দু’মাস এখানে স্কুল হলিডে থাকে। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে মালয়েশিয়ানরা দেশের বাইরে বেড়াতে যান।
অনেকেই সপরিবারে বিভিন্ন দেশে ঘোরার জন্য যান। ওই যে বললাম,পূর্ব এশিয়ার কয়েকটা দেশ ছাড়া বাকি পুরো বিশ্বেই তো শীতকাল। তাই তো শপিংমলে এতো শীতের কাপড়।
মালয়েশিয়ায় শীত নেই,তেমন কুয়াশাও নেই। তুষার বা বরফ থাকার তো কারণই নেই। তাই তো এ সবের প্রতি মালয়েশিয়ানদের ভীষণ আগ্রহ।
মালয়েশিয়ার মানুষের সাথে আমাদের দেশের শীতকালের গল্প করলেই ওরা জানতে চান, বাংলাদেশে তুষারপাত হয় কিনা? কুয়াশা কেমন পড়ে? ইত্যাদি। প্রকৃতির অন্য কোনো ঋতুতে এদের এতো আগ্রহ দেখি না।
বাংলাদেশের মানুষের একেক জনের কাছে একেক ঋতু প্রিয়। ঋতু বৈচিত্রহীন দেশ মালয়েশিয়ার মানুষের বাংলাদেশের শীত ঋতু নিয়ে আগ্রহ দেখে গর্বে বুক ভরে ওঠে। আমরা ঋতু বৈচিত্রের দেশের মানুষ। গ্রীষ্ম,বর্ষা,শরৎ, হেমন্ত,বসন্তের সাথে আমাদের কুয়াশার চাদরে ঢাকা শীতকালও আছে।
নদীর পাড়ে,খালের পাড়ে,মেঠোপথের বাঁকে খেঁজুরের গাছ আছে। গাছের আগায় কলসি ভরা খেঁজুরের রস আছে। শুধু শীতকালেই আলাদা রকমের মজাদার সবজি আছে, যা অন্য ঋতুতে পাওয়া যাবে না।
কণকণে শীতে হাঁড়কাপানো ঠাণ্ডার কষ্টও আছে। শীতের কাপড় গায়ে মুড়িয়ে ওম নেওয়ার আনন্দ আছে। ধান ক্ষেতের নাড়া পুড়িয়ে আগুন পোহানোর দৃশ্য আছে। কুয়াশায় আচ্ছন্ন হওয়া দূরের মেঠোপথ আছে।
পাতাঝরা গাছ,ধূলিমাখা পথ-এমন শত বৈচিত্র্যময় শীত ঋতু আছে আমাদের। পূর্ব এশিয়ার পাহাড় ঘেরা দেশ মালয়েশিয়ায় এসব নেই। এ দেশে আছে শুধু শপিংমলে সাজানো শীতের জামা।
আর হ্যা,আমাদের দেশের প্রধান শীতের পিঠা যেটি, তা এই দেশে আছে। শুধু আছে নয়,সারা বছরই আছে- ভাপা পিঠা। আমাদের ঘরে ঘরে ভাপা পিঠা বানায় মা-বোনেরা। মালয়েশিয়ায় ভাপা পিঠা বানানো হয় হাটে-বাজারে। পথের ধারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিক্রি করে ছোট ছোট ভাপা পিঠা।
পিঠার ভেতর গুড় ও নারকেলের গুড়া দিয়ে বানানো ছোট আকারের ভাপা পিঠা সারা বছরই খায় মালয়েশিয়ানরা। ভাপা পিঠা খেলেও খেঁজুরের রসের স্বাদ সম্পর্কে ধারণা নেই ওদের।