প্রিয় গন্তব্য সেন্ট্রাল পার্ক

গাছ আমার সবসময়ই প্রিয়। সারি সারি বৃক্ষরাজি আমাকে সবসময়ই কাছে টানে। সেকারণে ঘন বনের মাঝে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেলে, কখনোই তা থেকে দূরে থাকি না।

আশরাফুন নাহার লিউজা, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2016, 12:40 PM
Updated : 18 Nov 2016, 12:40 PM

সেন্ট্রাল পার্ক সেই অর্থে ঘন বনাঞ্চল নয়। এরপরও, এমন নাগরিক উদ্যান কোথাও দেখিনি আমি। বিশেষ করে নিউ ইয়র্কেরম্যানহাটনের মতো একটি জায়গায়, চারিদিকে উঁচু উঁচু দালানের মধ্যে, অসাধারণ সবুজ এক জমিন যেন। গালিচা বিছানো মাঠ, নানান জাতের গাছ, স্বচ্ছ পানির লেক। এখানেই শেষ নয়, ছেলে-বুড়ো সবার জন্যই রয়েছে নানা ধরণের বিনোদনের ব্যবস্থা।

চারটি ঋতুতে চার ধরনের রঙ নিয়ে, নিউ ইয়র্কারদের গর্বের একটি স্থান হয়ে আছে, সেন্ট্রাল পার্ক। বছরের যে সময়ই আপনি সেখানে যান কেন, মানুষের আনাগোনা লেগেই আছে। এমনকি তীব্র তুষারপাতের পরও, সাধারণ মানুষের প্রিয় জায়গা হয়েই থাকে এটি। বরং তুষারে ঢাকা পড়ে থাকা পার্কের লনে তখন চলে আইস স্কেটিংয়ের উৎসব। চমৎকার!

৩ দশমিক ৪১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পার্কটি সবার জন্যই। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের পার্কগুলোর মধ্যে এই আরবান পার্কটিতেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থীর সমাগত ঘটে।

পার্কটির প্রধান বৈশিষ্ট্য ঘন সবুজের সমাহার। সেই সাথে পার্কের ভেতরের রাস্তাগুলো এমন, দেখলেই মনে হবে হেঁটে অনেক দূরে চলে যাই। শরীর এলিয়ে দিয়ে সামারের রোদ পোহাবেন, কোন অসুবিধা নেই। চাদর বিছিয়ে শুয়ে পড়ুন, পার্কের ভেতরের মাঠে।

বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য। মাঝে মাঝে চোখে পড়ে বড় বড় পাথুরে খণ্ড। উঁচু নিচু পথ, সংযোগ সেতু দেখতে ভালো লাগে।

একটু পেছনে তাকানো যাক। উদ্যানটির জন্যে ১৮৫৩ সালে জায়গা কেনা হয়েছিল। তখন এই জায়গাটিকে নতুন রূপ দিতে, লাগানো হয় হাজারো বৃক্ষ। পরিবর্তন আনা হয় অবকাঠামোতে। আর এই কাজে নেতৃত্ব দেন, ভূপ্রাকৃতিক পরিকল্পনাবিদ ফ্রেডেরিক ল্য ওল্মস্টেড এবং স্থাপত্যবিদ কালভার্ট ভৌক্স। তাদের তত্বাবধানেই, পার্কটি হয়ে ওঠে অনন্য।

সেন্ট্রাল পার্কের মূল আকর্ষণ ঘোড়ার গাড়ি। রাজকীয় কায়দায় যদি কেউ পার্কটিকে ঘুরে দেখতে চান, তাহলে এই ঘোড়ার গাড়িগুলো দেবে সেই অনুভূতি। তবে কিছুদিন আগে সেন্ট্রাল পার্কের কাছ থেকে ঘোড়ার গাড়ি তুলে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। গাড়িচালকদের আন্দোলনের মুখে তা শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি।

এছাড়া বাংলাদেশের আদলে না হলেও, সেন্ট্রাল পার্কে গিয়ে আপনি চাইলে রিক্সায় চড়ার আনন্দ অনুভূতিও পেতে পারেন। কেবল তাই নয়, সাইকেল ভাড়া করে, যে কেউ মনের আনন্দে ঘুড়ে বেড়াতে পারবেন পার্কজুড়ে। লেকে নৌবিহারে নেমে যেতে চাইলেও, বাধা নেই।    

বিভিন্ন ঋতুতে নানা ধরণের বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে পার্কটিতে। এই যেমন স্ট্রোলিং, আইস স্ক্যাটিং, রোলার ব্ল্যাডিংসহ আরও অনেক কিছু। এখানে রয়েছে কয়েকটি শান্ত ও নির্মল জায়গা। এসব জায়গা একেক ঋতুতে, একেক রকম।

তবে সামারে এসব জায়গায় মানুষের ঢল নামে। পার্কের বিভিন্ন জায়গার নামগুলোও বেশ আকর্ষণীয়- ইস্ট গ্রিন, স্ট্রবেরি ফিল্ড, শেক্সপিয়ার গার্ডেন, শিপ মিডোও, টার্টেল পন্ড এবং কনসার্ভেটোরি গার্ডেন। শিশুদের বিনোদনের জন্য বেশ কিছু স্থান।

যেমন সেন্ট্রাল পার্ক চিড়িয়াখানা, সেন্ট্রাল পার্ক কেরৌসেল, বেলভেডেয়ার ক্যাস্টেলে জল প্রদর্শনী। সেই সাথে সামারে খোলা হয় অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ভিক্টোরিয়ান গার্ডেনস। শীতে এই অ্যামিউজমেন্ট পার্কটি বন্ধ থাকে।

পার্কটিতে বিভিন্ন মৌসুমি আয়োজন রয়েছে। গ্রীষ্মকালীন মঞ্চে নিউ ইয়র্ক অপেরা কার্যক্রম ছাড়া জগৎ বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পীদের পরিবেশনা থাকে। বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি চর্চার অনন্য একটি স্থান এটি।

নিউ ইয়র্ক সিটির, ম্যানহাটনের কেন্দ্রে অবস্থিত এই পার্কটি। উত্তরে, ফিফটি নাইন স্ট্রিট থেকে ১১০ স্ট্রিট পর্যন্ত বিস্তৃত। অন্যদিকে পূর্বদিকে ফিফথ অ্যাভিনিউ থেকে পশ্চিম দিকে বিস্তৃত হয়েছে পার্কটি।

যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভালো। রয়েছে পাতাল রেল স্টপেজ। ফলে নিউ ইয়র্কের যেকোন প্রান্ত থেকে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় সেখানে। এছাড়া পেন স্টেশন বা গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল থেকে বাস ধরেও যাওয়া যায়, পার্কটিতে।আগেই বলেছি, সারা বছর ধরেই সেন্ট্রাল পার্কে যাওয়া যায়।

তবে সামারে পার্কটির রূপ হয় ভূবন ভোলানো। আর ফল সিজনে পাতার রঙ বদলানো এবং ঝড়ে পড়ার দিনগুলোতে, এখানকার গাছগুলো দেয় অসাধারণ সৌন্দর্যের এক অনুভূতি। দেখতে ভালো লাগে।

পার্কের দরজা বলতে গেলে বন্ধই হয় না। রাতে অল্প সময়ের জন্যে বন্ধ রাখা হয়। যখন খোলা থাকে, ভেতরে ঢুকতে কোন ফিস দিতে হয় না। তবে ঘোড়ার গাড়ি, সাইকেল রাইড, নৌবিহার, অ্যামিউজমেন্ট পার্কে প্রবেশসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা অর্থ গুনতে হবে।

পার্কটিকে ঘিরে হরেক রকম খাবারের দোকান রয়েছে। ফুটপাতে রয়েছে, বাহারি পণ্যের পসরা। বিশেষ করে পেইন্টিংগুলো মন কেড়ে নেয়। প্রকৃতির সাথে, সেই পেইন্টিংসগুলোই আমাকে সেন্ট্রাল পার্কে টেনে নিয়ে যায়।

লেখক: ইয়োগা আর্টিস্ট, লেখক ও উপস্থাপক

ইমেইল: Leuza.yoga@gmail.com

আরও পড়ুন: