আমাদের দেশেও এ দিনটি হয়তো বুঝে কিংবা না বুঝেই পালন করা হয়। দেশে থাকাকালীন এ দিনটি নিয়ে তেমন একটা কিছু জানতে পারিনি,শুধু জেনেছিলাম এটিকে পাম্পকিন ফেস্টিভ্যালও বলা হয়। আর বাংলাদেশের ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলগুলোতে এ উৎসব বেশ আনন্দ-আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়।
ব্রিটেনে আসার সুবাদে এ উৎসবটি একেবারে চোখের সামনে দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। তবে এ উৎসবে কী কী করলাম আর দেখলাম তা বলার আগে একটু জানিয়ে রাখি দিবসটির উৎপত্তি ও পালনের মর্মার্থ।
স্কটিশ শব্দ 'অল হ্যালোজ ইভ' থেকে 'হ্যালোউন' বা 'হ্যালোউইন' শব্দটি এসেছে। এ হ্যালোউইন শব্দটির অর্থ দাঁড়ায়- পবিত্র বা শোধিত সন্ধ্যা। এই 'হ্যালোজ ইভ' শব্দটি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়ে হ্যালোউইনে এসে রূপান্তরিত হয়।
শুধু তাই নয়, এ দিনটিকে তারা গ্রীষ্মের শেষ আর শীতকালের শুরুও মনে করতো। সেই সাথে অক্টোবরের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ অক্টোবরকে তারা মনে করতো অন্ধকার রাত, যেখানে সকল অতৃপ্ত আত্মা ও প্রেতাত্মা আবারও লোকালয়ে ফিরে আসে।
কেল্টিক জাতি বিশ্বাস করতো, সেই সকল অতৃপ্ত আত্মা মানুষের ক্ষতি করবে। তাই তাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য মানুষেরা বিভিন্ন করমের ভূতের পোশাক আর মুখোশ পরে ঘুরে বেড়াত। অনেকটা প্রেতাত্মাদের বোকা বানানোর মতন!
বলা বাহুল্য, এখনকার হ্যালোউইন উৎসব মূলত ব্যবসায়িক ফন্দি থেকেই পালিত হয়। কারণ এ উৎসব পালন করতে ব্রিটেনসহ ইউরোপের নানা দেশে বিকোয় বিভিন্ন ধরনের কস্টিউম, মুখোশ, মেক-আপ প্রসাধনী, চকোলেট, পাম্পকিন (মিষ্টি কুমড়া)আর নানা ধরনের মোমবাতি কিংবা জ্যাকের বাতি।
আরেকটা কথা তো বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম- শিশুদের ট্রিক অর ট্রিট খেলা। এ উৎসবের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটা বিষয়। এ খেলাটিতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা হাতে ঝুলি নিয়ে বিভিন্ন বাড়ি ও এলাকা ঘুরে বেড়ায়। তারা দরজা নক করে বলবে ট্রিক অর ট্রিট।
এতক্ষণ তো জানালাম হ্যালোউইন উৎসবের আদ্যোপান্ত।
ব্রিটেনে কেমন হয় উৎসবটি?
বছর চারেক হলো, এ উৎসব অনেকটা কাছ থেকে দেখে আসছি। এ দিনটি উপলক্ষে সুপার স্টোরগুলোতে দেয়া হয় বিশেষ ছাড়। এখানকার নামকরা সুপার স্টোর আসদা, টেসকো, মরিসন, ওয়েট্রস সবগুলোতে দেখা মেলে ছাড়ের বাহার। পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয় বাড়তি সতর্কতা। কারণ হ্যালোউইনের রাতে নানা ধরনের দুর্ঘটনা এমনকি মারামারির ঘটনাও ঘটে থাকে।
এবারের হ্যালোউইন দেখার জন্য নিমন্ত্রণ পেলাম আমার স্কুল-বান্ধবীর কাছ থেকে। সে লন্ডনের বাইরে সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় থাকে বলে একবাক্যে রাজি হয়ে গেলাম। হ্যালোউইনের পাশাপাশি সমুদ্র দেখার লোভ কোনোভাবেই সামলাতে পারলাম না। অনেকটা রথ দেখা আর কলা বেচার মত অবস্থা।
নিজেকে শুধু বুঝাচ্ছিলাম, এরা কেউই ভূত-প্রেত নয়, সবাই মানুষ। গ্রেট ইয়ারমাউথে বেশ কিছু ভূতের কাহিনী আর প্যারানরম্যাল অ্যাক্টিভিটিজ আগে থেকে জানার কারণে এমন ভয় লাগছিল। সেই কাহিনীতে আরেকদিন আসবো, আপাতত হ্যালোউইনের পর্ব শেষ করি।
গ্রেট ইয়ারমাথের সৈকতে এসে দেখা হলো আমার স্কুল বান্ধবীর সাথে। জমজমাট তখন বিচের পরিবেশ। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে গ্রেট ইয়ারমাউথ কাউন্সিল আয়োজন করেছে নানা ইভেন্টসের। সার্কাস, নাটক, ফায়ারওয়ার্কস, কনসার্ট, বর্ণিল আলোকচ্ছটা- সবই ছিল এ আয়োজনে। যদিও সময় স্বল্পতার কারণে সবগুলো ইভেন্ট দেখা সম্ভব হয়নি।
সবচেয়ে ভালো লেগেছে বিভিন্ন বয়স, শ্রেণি আর পেশার মানুষ। সব বয়সের মানুষের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে মনেই হয়নি এ উৎসবে শুধুমাত্র তরুণরাই আনন্দ উপভোগ করে।
তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে সবার মতো আমার মনেও জায়গা করে নিল ফায়ারওয়ার্কসের অপূর্ব প্রদর্শনী। সব ধরনের কলুষতা আর অশুভ চোখের রাঙানি বর্ণিল আলোর ঝলকানিতে যেনো জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে যায়-এমনটিই প্রার্থনা ছিল আগত অতিথিদের মনে।
লেখক: সাংবাদিক ও নিউজ প্রেজেন্টার
ছবি কৃতজ্ঞতা: পিনাকী দেব ও সাইফুল ইসলাম
লেখকের অন্যান্য লেখা: