রাজপ্রসাদ, রক্ষীবাহিনী কিংবা রূপকথার সেই ড্রাগনদের নিয়ে এই যেন কোন বরফের শহর!
কোন ভিনগ্রহের জায়গা নয়। প্রায় দুই শতাধিক শিল্পকর্ম নিয়ে জাপানের হোক্কাইডো প্রদেশের সাপ্পোরোতে গড়ে উঠেছে এই বরফের শহর। ইট-সুড়কি আর পাথরের পরিবর্তে জাপানিরা এই বরফের শিল্পকর্মকে উদযাপন করে ‘আইস ফেস্টিভাল’ হিসেবে।
ইন্টারনেটে দেখে এবং প্রবাসীদের কাছে গল্প শুনে সদ্য জাপানে আসা আমি সেই উৎসবেই যোগ দিতে গিয়েছিলাম। দিনব্যাপি সাপ্পোরোর ওই ভাস্কর্য দেখে বিমোহিত হলাম।
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে সাপ্পারোর এই বরফ উৎসব চলে। ৬৭ বছরের পুরনো এই উৎসবে এতে অংশ নিতে ভিড় করেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা।
এখানে রয়েছে বরফের তৈরি রাজপ্রাসাদ, যা দূর থেকে দেখতে অনেকটা ভারতের আগ্রার তাজমহলের মত মনে হয়। তবে এর উচ্চতা তাজমহলের তুলনায় কম, ১৭ মিটার।
ঘুরতে ঘুরতে পেয়ে সুবিশাল এক গির্জা। দুই হাজার চারশো মিটারের একটি বরফ খণ্ডে নির্মিত ওই গির্জাটি ‘সাউর্দান পল’ নামের প্রাচীন ও বিলুপ্ত এক গির্জার আদলে বরফ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। ৩ হাজার শ্রমিক টানা ৩০ দিন কাজ করে বরফের ওই গির্জা তৈরি করেন।
ছোটদের প্রিয় ‘ড্রাগনবল জি ফ্যাকডস’ সিরিজের একটি চিত্র উঠে এসেছে বরফ শিল্পীদের তৈরি করা চিত্র কর্মে। জাপানিদের প্রাচীন বিশ্বাসী মতবাদের বিভিন্ন চরিত্র রূপায়িত হয়েছে বরফ ভাস্কর্যে। রয়েছে ‘অ্যাটাক অন টাইটান’ মতো বিষয়।
ঘুরতে ঘুরতেই হামারি হিমুরু নামের এক জাপানির সঙ্গে পরিচয় হল। উৎসবে আসার ব্যাপারে তার মত জানতে চাইলাম।
তিনি বললেন, "এটি আসলে আমাদের মনের খোড়াক জোগায়। সারা বছরই অপেক্ষায় থাকি এই উৎসবটির জন্য। এখানে আসলে মনে হয় না আমি পৃথিবীর কোন দেশে আছি।"
'বরফের দেশ' আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, "বরফ যে একটি শিল্পকর্ম উৎস হতে পারে তা এখানকার শিল্পীরা প্রমাণ করে দিয়েছে।"
সাপ্পোরো জাপানের সবচেয়ে নিম্ন তাপমাত্রার শহর। সারা বছরই তুষারপাত হয় এই অঞ্চলে। তাই তাপমাত্রা অনুকূলে থাকায় বরফ ভাস্কর্যগুলো থাকে অটুট।
এক জায়গায় দেখলাম হলিউডের ‘স্টার ওয়ার্স’ সিরিজের সিনেমার অংশ বিশেষও উঠেছে বরফের শিল্পকর্মে।
যুক্তরাজ্য থেকে আসা পর্যটক জিমনি এইচ মার্জেন্ডা জানালেন তার অভিব্যক্তি, "অপূর্ব সুন্দর এই শিল্পকর্ম। আমি গত বছরই শুনেছিলাম এই সাপ্পারোর বরফ শিল্পকর্ম উৎসবের বিষয়ে।
হোক্কাডো মূল জাপানের একটু বাইরে হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা মূলত দ্রুতগামী সিনকানসেন (আধুনিক প্রযুক্তির দ্রুতগামী ট্রেন) আর আকাশপথ। দেশের সব অঞ্চলের মানুষ এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে তা বিবেচনা করে স্থানীয় প্রশাসন ইতোমধ্যে একটি অতিরিক্ত সিনকানসেন যুক্ত করেছে।
লেখক: প্রবাসী সাংবাদিক
ইমেইল: nadim.ru@gmail.com