ভোট আছে, ভোটের আঁচ নেই

ক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে আলোচনা। ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন দেশের মিডিয়ায় ফলাও করে স্থান পাচ্ছে এই নির্বাচনের খবর।

আবদুর রহিম হারমাছি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2016, 06:32 PM
Updated : 22 Oct 2016, 03:52 PM

পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। প্রায় প্রতিদিনই সব জাতীয় পত্রিকায় গুরুত্বের সঙ্গে দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী— ডেমোক্রেট পার্টির হিলারি ক্লিনটন ও রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন নতুন খবর প্রকাশ হচ্ছে। টেলিভিশনগুলোও প্রচার করছে সে খবর।

তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে-যে দেশে এই ‘ঝড় তোলা’ নির্বাচন সেই দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে যেন উত্তেজনা নেই। নেই কোনো প্রচার-প্রচারণা, পোস্টার-ফেস্টুন-ব্যানার-মাইকিং। নির্বাচন বলতে বাঙালির মনে যে উৎসাহ, উদ্দীপনা, জমজমাট প্রচারের চিত্র ভেসে ওঠে তার সঙ্গে এর যেন কোনো মিল নেই।

বিভিন্ন রাজ্যে বড় সমাবেশে দুই প্রার্থী ভোট চাইলেও এর বাইরে কোথাও কোনো সমাবেশ বা জমায়েতে ভোট প্রার্থনা নেই। রাস্তাঘাট, বাস-ট্রেন, হোটেল-রেস্তোরাঁয় নির্বাচন নিয়ে তেমন আলোচনা নেই; নেই বিতর্ক। সবকিছুই মিডিয়ায়…।

প্রতিদিন নামি-দামি পত্রিকায় দুই প্রার্থীকে নিয়ে বিভিন্ন জরিপ-বিতর্কের খবর প্রকাশিত হলেও এর বাইরে সাধারণের মধ্যে তেমন আলোচনা চোখে পড়েনি।

গত ৬ থেকে ১৩ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি, ভার্জিনিয়া, বাল্টিমোর ও নিউ ইয়র্ক রাজ্য ঘুরে কোথাও কোনো প্রার্থীর পোস্টার চোখে পড়েনি। দেখা যায়নি ফেস্টুন-ব্যানার-দেওয়াল লিখন বা অন্য কোনো প্রচারণা। কানে আসেনি কোনো প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার আবেদন। একটি সমাবেশও দেখা যায়নি। হিলারির ‘গাধা’ বা ট্রাম্পের ‘হাতি’ প্রতীকে ভোট চেয়ে মিছিলও করতে দেখা যায়নি কাউকে।

১১ অক্টোবর নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো বেশ কিছু লোককে নিয়ে কী যেন বিলি করছেন।

নিজের দল ডেমোক্রেট পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের পক্ষে ভোট চাইছেন বলে মনে হলেও কাছে গিয়ে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র।

৮ নভেম্বরের নির্বাচনে যে সব ভোটার এখনও রেজিস্ট্রেশন করেননি, তাদের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে অনুরোধ করছেন, হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন ফরম।

১৪ অক্টোবর ছিল ভোটার রেজিস্ট্রেশনের শেষ দিন। রেজিস্ট্রেশন না হলে ভোট দেওয়া যায় না।

ভোটারদের রেজিস্ট্রেশনের অনুরোধ করার নামে নিজ দলের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইছেন কি না-সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো বলেন, “না, আমি কারও পক্ষে ভোট চাচ্ছি না। রেজিস্ট্রেশনের জন্য অনুরোধ করছি। মেয়র হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব।”

বাংলাদেশ থেকে ডিভি লটারিতে নির্বাচিত হয়ে বছর পাঁচেক আগে নিউ ইয়র্কে গেছেন শাহ ফারুক। থাকেন শহরের জ্যামাইকা এলাকায়। কিছুদিন আগে স্ত্রীকে নিয়ে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন ফারুক। অন্য পেশার সঙ্গে সাংবাদিকতাও করছেন।

আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এখানকার নির্বাচন এমনই; উত্তেজনা নেই। কোনো প্রচার-প্রচরণা নেই। পোস্টার নেই। মাইকিং নেই। দেওয়াল লিখন নেই। মনেই হয় না কয়েক দিন পর নির্বাচন।

“বাঙালিদের মধ্যে ভোট বা নির্বাচন নিয়ে কিছুটা আলোচনা হলেও আমেরিকানদের মধ্যে এ নিয়ে তেমন আগ্রহ লক্ষ করা যায় না। মিডিয়াতেই তাদের যত আগ্রহ।”

আলী রেজা নামের আরেক প্রবাসী বলেন, “শুধু এখন নয়, নির্বাচনের দিনও এখানে মনে হয় না ভোট হচ্ছে। কে কখন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে আসে টেরই পাওয়া যায় না।”

৬ থেকে ৯ অক্টোবর ওয়াশিংটন ডিসি ও ভার্জিনিয়া শহর ঘুরেও একই চিত্র চোখে পড়ে। নিউ ইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে কিছুটা নির্বাচনী আমেজ লক্ষ করা গেলেও এই দুই শহরে যেন কোনো ‘আওয়াজই’ নেই।

আমেরিকার প্রেসিডেন্টের অফিস ‘হোয়াইট হাউজ’ যে শহরে সেই ওয়াশিংটন ডিসির আশপাশেও নেই কোনো উত্তেজনা।

জাম্বিয়া থেকে ১৭ বছর আগে ওয়াশিংটন ডিসিতে এসেছেন ইদ্রিস মুলে। পেশায় হিসাবরক্ষক। পাশাপাশি গাড়ি ভাড়ায় খাটান, চালান নিজেই।

আমেরিকার নাগরিক হয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগেই। গত নির্বাচনেও ভোট দিয়েছেন। এবারও দেবেন।

কাকে ভোট দেবেন- জানতে চাইলে মৃদু হেসে ইদ্রিস বলেন, “অবশ্যই হিলারি ক্লিনটনকে ভোট দিব। ডোনাল্ড ট্রাম্প হাস্যকর।”

নির্বাচন ঘিরে কোনো প্রচার-প্রচারণা নেই কেন-এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “এখানকার ভোটাররা সচেতন। টিভি বিতর্ক, জরিপের ফলাফল এবং পত্রিকার খবর থেকেই ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।”

৯ অক্টোবর রাতে ওয়াশিংটন শহরের কেন্দ্রে এম্বেসি স্যুটস হোটেলের লবিতে হিলারি-ট্রাম্প দ্বিতীয় দফা টিভি বিতর্ক দেখতে দেখা যায় বেশ ‍কিছু আমেরিকানকে।

তাদের একজন লেটিসা জেমস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি। তৃতীয় দফা বিতর্ক দেখব… তারপর সিদ্ধান্ত।”

৮ অক্টোবর ভার্জেনিয়ায় কাবাব প্যালেসে দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় আলাপ হয় মায়া উইলির সঙ্গে। তিনি বলেন, “এবারের নির্বাচনটা কেমন যেন মনে হচ্ছে। এতো বিতর্ক-সমালোচনা আগে কখনও হয়নি। খুব দুঃখজনক (ভেরি স্যাড)।”

১০ অক্টোবর ওয়াশিংটন থেকে নিউ ইয়র্ক আসার পথে বাসে সাড়ে চার ঘণ্টার যাত্রায় বাল্টিমোর রাজ্যের কোথাও কোনো পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুন চোখে পড়েনি।