একটু রোদের জন্য হাহাকার

এক বছর আগে, প্রায় এই সময়ে আমি সুইডেনে আসি। বাংলাদেশের হিসেবে তখন শরতের শেষ, হেমন্তের শুরু। একটা ঝকঝকে আকাশ, মাঠ ভরা সবুজ ফসল আর নদীর তীর জুড়ে কাশফুলের সমারোহ ছেড়ে আমি যখন স্টকহোমের আকাশে, তখন প্লেনের জানালা দিয়ে দেখতে পাচ্ছিলাম ভেজা মাটি।

ফাতেমা-তুজ-জোহরা, স্টকহোম সুইডেন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2016, 12:08 PM
Updated : 20 Oct 2016, 12:08 PM

গ্রীষ্ম প্রধান দেশ থেকে আসা আমাকে স্বাগত জানিয়েছিল স্টকহোমের মেঘলা আকাশ আর ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। কিন্তু সেই বৃষ্টির সাথে আসা ঠাণ্ডা বাতাসে আমার প্রায় জমে যাবার দশা। আমার প্রতি করুণা করেই কিনা জানিনা, পর পর কয়দিন রোদ উঠলো, ভীষণ রোদ। আর তারপরে শুরু হলো এদেশের শরৎ।

আমাদের শরতের সাথে এদের কোনো মিলই নেই! সবুজ তরুণ প্রকৃতি কি করে জরাগ্রস্ত হয়ে পড়ে সে এক দেখার মত বিষয়। প্রকৃতির সাথে মানুষের মনের যোগ আছে এটা আগেও জানতাম। কিন্তু নতুন করে উপলব্ধি করলাম।

প্রতিদিন একটু একটু করে গাছের পাতার রং বদলে যেতে দেখি। হলুদ থেকে শুরু করে কমলা,  লাল- এই রংগুলোর যে কতো রকম শেড হতে পারে তা দেখে বিস্ময় জাগে! সময় সময় মনে হয় খ্যাপাটে কোনো চিত্রকর রেগে মেগে তার ক্যানভাস জুড়ে হলুদ আর লাল রং ছড়িয়ে দিয়েছে। আলোর সাথে সাথে এই রংও বিচিত্র সব বর্ণ ধারণ করে।

তিন সপ্তাহেরও বেশি হলো সুইডেনে রোদ ওঠেনি। রোদের দেশের মানুষ আমি, একটুখানি রোদের জন্য বুকের মধ্যে রীতিমত হাহাকার চলছে। ঠাণ্ডা বাতাস সাথে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, মন ভার হবার জন্য একেবারে আদর্শ আবহাওয়া। কিছুই ভালো লাগে না, না মন, না শরীর। সারাদিন ঘুম ঘুম,আলসেমি,অকারণ কান্না পায়। অথচ এই মুখভার দিন বদলে যেতে একমুহূর্তও লাগবে না রোদ উঠলে! বাতাসে ঝরে পড়া পাতার শব্দ তখন সত্যিই নুপূরের ঝঙ্কার মনে হয়। প্রকৃতির এই রংয়ের পরত উপভোগ করা যায় প্রাণ ভরে।

যারা ছবি তুলতে ভালোবাসেন তাদের জন্য এই সময়টা ভীষণ কাঙ্খিত। ক্যমেরার লেন্সে,মুহূর্তের রং বদলের খেলা ধরে রাখা আসলেই উপভোগ্য। প্রকৃতির এই রংয়ের খেলা উপভোগ করতেই হয়তো এসময় এখানকার মানুষ রংহীন কাপড় পরে। এদের পোশাকের দোকানগুলোতে অটাম কালেকশন দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন কালো থেকে সাদা এবং সাদা থেকে বাদামী, ধূসরের কত রকম শেড হতে পারে! তবে এ সময় রং-বেরংয়ের মোমবাতি খুঁজে পাবেন প্রায় সব দোকানে। ভিন্ন ভিন্ন তাদের সুবাস। দিন ছোট হতে শুরু হয়েছে আগেই, এছাড়া হ্যালোউইন এবং ক্রিসমাস সামনে রেখে এই সময় প্রচুর মোম বিক্রি হয়।

ঋতুর এই পরিবর্তন উপভোগের আরো একটি মাধ্যম হলো খাবার। বলা হয়নি,শরতের সুইডিস নাম 'হোস্ত'। হোস্তে অবশ্য প্রয়োজনীয় জিনিস হলো মিষ্টিকুমড়া! হ্যালোউইনের পাম্পকিন লাইট ছাড়াও এ সময় মিষ্টি কুমড়ার তৈরি বিভিন্ন খাবার খায় এরা। এছাড়াও এ সময় এক ধরনের বিস্কিট খাওয়া হয়,যার নাম পিপারককা। বিভিন্ন মশলার মিশ্রণ ব্যবহার করে তৈরি এই বিস্কিট খাওয়া হয় ক্রিসমাসের আগ পর্যন্ত।

লেখক: প্রবাসী ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট