একবার মনের চোখে দেখুন, বলিউডের হিট নায়ক সালমান খান আর সুপার হেরোইন ক্যাটরিনা কাইফ পোস্টারে দাঁড়াবেন, নাকি চিৎকাত হবেন, নাকি পিস্তল হাতে ধরে চুমু খাবেন- তা ঠিক করে দিচ্ছেন একজন বাংলাদেশি।
শাহরুখ-ক্যাটরিনা’র হিট জুটি ‘জাব তাক হ্যায় জান’-এর লন্ডনভিত্তিক প্রচারণার পোস্টার করেছেন যিনি তার নাম জাফরিন সাদিয়া।
তার ডিজাইন করা পোস্টার সাটানো হচ্ছে দেয়ালে দেয়ালে। লন্ডনের এপার-ওপার দু’পার বাংলা, এমনকি হিন্দি সিনেমার দর্শকরাও জানতে পারছেন নতুন ফিল্মের খবর।
সাদিয়া এক ব্যতিক্রমী গ্রাফিক্স আর্টিস্ট। দেশি-বিদেশি চলচ্চিত্রের পোস্টার, বিভিন্ন ইভেন্টের লোগো ও কনসেপ্ট ডিজাইন, সার্ভার সাপোর্ট, ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন, ওয়েবসাইট ডিজাইন, অ্যানিমেশন তৈরিসহ বহুমুখী ধারায় উজ্জ্বল তার কর্মজীবন।
আর এসব কাজের জন্য গড়ে তুলেছেন 'লন্ডন ডিজাইন হাউজ' নামে একটি গ্রাফিক্স ডিজাইন স্টুডিও।
দেশের মিডিয়া জগতেও সাদিয়া নাম লিখিয়েছেন চিত্রনাট্যকার হিসেবে। নিজের কর্মদক্ষতা ও সৃজনশীলতা দিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়ে চলেছেন বাংলাদেশের মেয়ে সাদিয়া।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাথে যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাদিয়ার কথা হয়েছিল তার পথচলা, কর্মজীবন ও স্বপ্ন নিয়ে।
চট্টগ্রামের মেয়ে সাদিয়া এরপর চলে যান লন্ডন। লেগে পড়েন নিজের পছন্দের গ্রাফিক্সের কাজে। সার্ভার হোস্টিং দিয়ে শুরু হয় তার পথচলা। ধীরে ধীরে ওয়েবসাইট ডিজাইন করতে থাকেন সাদিয়া। এরপর অ্যানিমেশন ও লোগো ডিজাইনও যুক্ত হয় তার কাজের পরিধির মধ্যে।
বলা যায়, ইন্টারনেটে থেকে খেটেখুটে দাঁড় করিয়েছেন নিজেকে।
পিঁপড়াবিদ্যা, অনেক সাধের ময়না, পোড়ামনসহ বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের প্রচারণামূলক পোস্টার তৈরি করেছেন সাদিয়া।
এছাড়া যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রচারণার জন্য বলিউডের ছবি 'এক থা টাইগার', 'জাব তাক হ্যায় জান', 'ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি' সহ আরও অনেক সিনেমার পোস্টারের ডিজাইন করেছেন তিনি।
বলিউডের 'ইয়াশ রাজ ফিল্মস’র প্রচারণা, পোস্টার ও লোগো তৈরির বেশ কয়েকটি প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সাদিয়া।
এর আগে বৃটিশ মিউজিয়াম, মাদাম তুসো ও এনএইচএস'র বেশকিছু প্রচারণামূলক ও সাংস্কৃতিক ইভেন্টের লোগো ও কনসেপ্ট ডিজাইনের কাজ সফলতার সাথে করেছেন সাদিয়া জাফরিন।
বাঙালি কমিউনিটি চ্যানেলের লোগো ও কনসেপ্ট ডিজাইনিং-এর কাজও করেছেন তিনি। ফলে প্রবাসী বাঙালিদের মাঝে সাদিয়া জাফরিন খুবই পরিচিত একটি নাম।
সম্প্রতি সাদিয়ার সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হয়েছে আরেকটি নতুন পালক, চিত্রনাট্য লেখা। 'তুমিময়' ও 'আকাশ মেঘে ঢাকা' নাটক দুটির চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছে সাদিয়ার কলমের খোঁচায়।
সাদিয়া বলিউড চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত ২০১১ সাল থেকে। ব্যবসায়িক যোগাযোগের সূত্র ধরেই বলিউড-ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে তার গ্রাফিক্স ডিজাইন স্টুডিও’র কাজ শুরু।
কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে নয়, অনলাইনে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল, প্রজেক্টের কাজ দেখে নিজেই গ্রাফিক্সের কাজ শিখেছেন বলে জানালেন সাদিয়া।
প্রথম তার বানানো সিনেমার পোস্টার নির্বাচিত হবার অনুভুতি বললেন সাদিয়া।
অনেকেই তাদের পোস্টার জমা দিয়েছিল, এর মধ্য থেকে তার পোস্টারটি নির্বাচিত হবে তা তিনি ভাবতেই পারেননি। তবে নির্বাচিত হবার পর তার বানানো পোস্টার যুক্তরাজ্যের বড় বড় বিলবোর্ডে দেখে খুবই ভাল লেগেছিল তার।
তবু ইয়াশ চোপড়া, আদিত্য চোপড়া, করণ জোহর, রাণী মুখার্জি, শাহরুখ খান, ঋত্বিকসহ অনেক তারকাকেই কাছ থেকে দেখেছেন। লোকেশনে বেশি সময় থাকা হয় না বলে তারকাদের সাথে উল্লেখ করার মতো তেমন কোনো মজার ঘটনা নেই বলে জানালেন সাদিয়া।
সাদিয়ার মতে, মাতৃভূমি থেকে ভিন্ন দেশে এসে নিজের অবস্থান তৈরি করা বেশ কষ্টসাধ্য। তবে সৃজনশীলতা আর দক্ষতা থাকলে সব বাঁধাই পার হওয়া যায়। সেজন্য পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই।
আর সেইসঙ্গে নেটওয়ার্কিং এর প্রয়োজনীয়তাও অনেকখানি বলে মনে করেন সাদিয়া।
তিনি বলেন, লক্ষ্যে পৌঁছাতে গেলে বাঁধা আসবেই, কিন্তু তাতে জেনারেশন বিচ্যুত হওয়া যাবে না। সময় যদি বেশি লাগলেও ঘাবড়ানো যাবে না। এগিয়ে যেতে হবে দৃঢ় পদক্ষেপে।
লেখক: সাংবাদিক ও নিউজ প্রেজেন্টার