কানাডায় মেলায় মিলিয়ন ডলার গার্মেন্ট অর্ডারের প্রতিশ্রুতি

কানাডায় পোশাকের একটি মেলায় অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো প্রায় সাড়ে চার মিলিয়ন ডলার রপ্তানির স্পট অর্ডারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে।

সদেরা সুজন, কানাডা থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2016, 12:51 PM
Updated : 30 August 2016, 12:51 PM

নিশ্চিত করা হয়েছে তিন লাখ ডলারের অর্ডার।

‘দি এ্যাপারেল টেক্সটাইল সোর্সিং কানাডা এক্সপো (২০১৬)’ শিরোনামে ২২ থেকে ২৪ অগাস্ট কানাডার টরন্টোয় পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে এই মেলা হয়।

১৪টি বুথ নিয়ে মেলায় অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশি বিভিন্ন তৈরি পোশাক কোম্পানি।

এই মেলায় ক্রেতাদের সঙ্গে যে যোগাযোগ গড়ে উঠেছে তাতে আগামী দুই বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি হবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা। 

গার্মেন্টস ও নিটওয়্যার শিল্পের বৃহৎ পরিসরের এই সোর্সিং মেলা কানাডায় এই প্রথম আয়োজিত হল। বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, তাইওয়ান, পেরু, জর্ডান, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ১৮৫টি রপ্তানিমুখী শিল্পদ্যোক্তা, ক্রেতা প্রতিষ্ঠান, ট্রেড ফ্যাসিলিটেটর ও বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা এ মেলায় অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং বিজিএমইএ'র সমন্বয়ে গঠিত ৩২ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যু্গ্ম-সচিব প্রাণেশ রঞ্জন সূত্রধর। কানাডার অটোয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশন এ বাণিজ্য মেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় করে।

বাংলাদেশের অংশগ্রহণকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে ছিল- অ্যান্থনি ইয়াং গার্মেন্টস, আরএস স্যুয়েটার্স, চরকা টেক্সটাইল, হবিগঞ্জ টেক্সটাইল, মারমেইড স্যুয়েটার্স, স্যাটকো বাংলাদেশ, ইউনাইটেড এ্যাপারেল, মেট্রো নিটিং অ্যান্ড ডাইং মিলস, জাবন এ্যাপারেলস, রাজধানী এ্যাপারেলস, আইএল বাংলা, জ্যানটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, ডাল নিটওয়্যার, আএসটি ফ্যাশনস ও মার্লিন নিটওয়্যার।

কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মিজানুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে রপ্তানি মেলায় যোগ দেন। তিনি বাংলাদেশ থেকে আসা অংশগ্রহণকারী কোম্পানির বুথগুলো ঘুরে দেখেন এবং রপ্তানিকারকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

বাংলাদেশ দূতাবাসের বাণিজ্যিক শাখার প্রথম সচিব দেওয়ান মাহমুদ এবং বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার অব কানাডা'র সভাপতি সুবীর কুমার দে, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি জাফর ওসমান, ওয়ার্ল্ডওয়াইড রেসপনসিবল এ্যাক্রেডিটেশন প্রোডাকশনের সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী এ্যভেডিস সেফারেইন, মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষ জেপি কমিউনিকেশনস ইনক ইউএসএ'র প্রধান নির্বাহী জেসন প্রেসকট ও মেলা পরিচালক জন ব্যাংকার উপস্থিত ছিলেন।

রপ্তানি মেলার প্রথম দিনে লিড টাইম অপটিমাইজেশন, সোর্সিং, কাস্টমার এঙ্গেজমেন্ট, সাপ্লাই চেইন এবং রিটেইল বিজনেস সংক্রান্ত ছয়টি বিজনেস সেশন অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও চীন থেকে আসা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা এ সেশনগুলোতে বক্তব্য রাখেন ও বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। দুপুরে এক ফ্যাশন শো'র মাধ্যমে কানাডী মডেলরা মেলায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের তৈরি পোশাক দর্শকদের সামনে তুলে ধরেন। 

আয়োজক সংস্থার প্রধান নির্বাহী জেসন প্রেসকট, টরন্টোর মিসিসাগার সাবেক মেয়র হেজেল ম্যাককালিয়ন, চীনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শাখার পরিচালক চেন এবং অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর রপ্তানিমুখী শিল্পদ্যোক্তারা এবং আন্তর্জাতিক ক্রেতা গ্রুপ ও মিডিয়া'র প্রতিনিধিরা একটি নৈশভোজে যোগ দেন।

মেলার দ্বিতীয় দিনে অংশগ্রহণকারী রপ্তানিকারকদের সঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্রেতা কোম্পানিগুলোর ওয়ান-টু-ওয়ান ম্যাচমেকিং বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ক্রেতা কোম্পানিগুলোও বিভিন্ন স্টল ঘুরে স্পট অর্ডার প্লেস করেন।

এ দিন আটটি বিজনেস সেশন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের উপর অনুষ্ঠিত ‘লিস্ট ডেভেলডপড কান্ট্রিজ- হাউ কানাডিয়ানস ক্যান বেনেফিট’ শিরোনামের সেশনে প্যানেল বক্তা হিসেবে অংশগ্রহণ করেন কানাডার ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন বিভাগের প্রধান নির্বাহী স্টিভ টিপম্যান, মন্ট্রিয়েলের গার্মেন্টস বিশেষজ্ঞ এ্যাবি লিপম্যান এবং অটোয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) দেওয়ান মাহমুদ।

বক্তারা কানাডায় স্বল্পন্নোত দেশগুলোর কোটামুক্ত বাজার সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) দেওয়ান মাহমুদ বাংলাদেশের সর্বশেষ শ্রম পরিস্থিতি, রানা-প্লাজা ধসের পর  উদ্ধার, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের সরকারি উদ্যোগ, শ্রমিক অধিকার রক্ষায় বর্তমান সরকারের কার্যক্রম, তৈরি পোশাক কারখানা পরিদর্শন, কর্মপরিবেশের মান উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী শ্রমিকের অধিকার সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় (এসইজেড) দেওয়া সুবিধা এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কর রেয়াতের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য কানাডীয় ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। 

মেলার তৃতীয় দিনে অনলাইন সোর্সিং, সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স, টার্কিশ ইকনমি অ্যান্ড এ্যাপারেল, কনজ্যুমার ও ব্রান্ড সাসটেইনেবিলিটি, নাফটা চুক্তির প্রভাব, গ্লোবাল এথিক্যাল মানুফ্যাকচারিং, ফ্যাশন এডুকেশন এবং মাল্টি চ্যানেল ও সেকেন্ডারি মার্কেট বিষয়ক আটটি আলাদা প্যানেল আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা এতে বক্তব্য রাখেন ও অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্নের জবাব দেন। 

মেলার শেষ দিনে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পোশাকসামগ্রী অনুদান হিসেবে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ‘ব্র্যান্ডস ফর কানাডা’র নির্বাহী পরিচালক হেলেন হ্যারাকাসের কাছে হস্তান্তর করেন, যা কানাডায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।