শেখ হাসিনাকে বোন বলে মানি: এরশাদ

দেশে সাম্প্রতিক সময়ের জঙ্গি হামলা ও সন্ত্রাস দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফল হবেন প্রত্যয় ব্যক্ত করে সব সময় তার পাশে থাকার কথা বলেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।

নিউইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 July 2016, 02:05 PM
Updated : 22 July 2016, 02:07 PM

নিউ নিউর্কে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টি আয়োজিত এক সভার শুরুতে প্রবাসীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি জানি, আপনারা কিছুটা উদ্বিগ্ন। দেশে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যে জন্যে উদ্বিগ্ন হবার কথা।

“তবে একটি অভয় দিতে পারি- চিন্তার কোনো কারণ নেই, উদ্বেগের প্রয়োজন নেই। জননেত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস দমনে সক্ষম হবেনই। আমরা তার সঙ্গে আছি, সব সময় পাশেই থাকব।”

জঙ্গি ও সন্ত্রাসে আক্রান্ত বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীদের সরকারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান এরশাদ।

“আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্য… যে যেখানেই আছেন, আসুন এমন পরিস্থিতির উত্তরণে সকলে মিলে সরকারের পাশে দাঁড়াই।”

এসময় শেখ হাসিনাকে ‘বোন বলে’ মানেন জানিয়ে সব সময় আওয়ামী লীগের পাশে থাকার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ, যিনি এক সময় বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে চার দলীয় জোটেও ছিলেন।

“আমি শেখ হাসিনাকে বোন বলে মানি। এজন্যে সব সময় শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পাশে ছিলাম, এখনও আছি এবং সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখতে সবসময় আওয়ামী লীগের পাশেই থাকব।

“বর্তমান সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর। তিন বছর অতিবাহিত হচ্ছে। অবশিষ্ট সময়ও তারাই দায়িত্ব পালন করবেন। এটিই গণতন্ত্রের রীতি, জাতীয় পার্টি সব সময় গণতন্ত্রের পক্ষে।,” বলেন সামরিক বাহিনী থেকে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসা সাবেক এই লেফটেন্যান্ট জেনারেল।

নিউ ইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টি আয়োজিত সভায় প্রবাসীদের একাংশ। ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

ঢাকার গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাস দমনে প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন বলে বক্তব্যে জানান জাতীয় পার্টির এই চেয়ারম্যান।

“জাতীয় পার্টি কখনোই সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না, জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতিও করেনি। জাতীয় পার্টি উন্নয়ন আর শান্তিতে বিশ্বাসী।

“সন্ত্রাস নির্মূলের জন্যে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়েছি জাতীয় ঐক্য গড়ার জন্যে। আশা করছি শেখ হাসিনা সেটি মানবেন এবং সে পথ বেয়েই বাংলাদেশে বর্তমানের অশুভ শক্তির চির অবসান ঘটবে।”

নিউ ইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে আয়োজিত ওই সভায় বিএনপির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে আগামীতে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন এরশাদ।

“অর্থ পাচার মামলায় তারেক রহমানের সাত বছরের জেল এবং ২০ কোটি টাকা জরিমানা হয়েছে। ১১ জন লোক পায়নি বিএনপি বিক্ষোভের জন্যে, মাঠেও নেই বিএনপি। এভাবেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে বিএনপির অস্তিত্ব। তাই ক্ষমতায় যাবার স্বপ্ন দেখছে জাতীয় পার্টি।

“আওয়ামী লীগ যদি সন্ত্রাস দমনে সক্ষম না হয়, আওয়ামী লীগ যদি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ইমেজ অটুট রাখতে না পারে, তাহলে আগামী নির্বাচনে মানুষ আবারও জাতীয় পার্টিকেই ক্ষমতায় নেবে।”

মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা প্রদানের কার্যক্রম চালু করায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে এরশাদ বলেন, ‍“আমি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রধান উপদেষ্টা থাকাকালে তাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে সম্মান দিয়েছি। তাদের প্রাপ্য অনেক বেশী।

“জীবন বাজি রেখে তারা যুদ্ধ করেছেন বলেই আমরা ক্ষমতা পেয়েছি, পাচ্ছি।”

যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির সভাপতি হাজী আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারসহ এরশাদের সফরসঙ্গীরা বক্তব্য রাখেন।

মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার তার বক্তব্যে সাবেক সেনাশাসক এরশাদের নয় বছরের শাসনকালের প্রশংসা করে তার ক্ষমতার মেয়াদ দীর্ঘায়িত না হওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করেন।একইসঙ্গে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসাও করেন তিনি।

নিউ ইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টি আয়োজিত সভায় প্রবাসীদের একাংশ। ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

হাওলাদার বলেন, “এরশাদ যদি নয় বছরের স্থলে ২৫ বছর ক্ষমতায় থাকতেন, তাহলে বাংলাদেশ আজ মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে যেত। তবুও উন্নয়ন থেমে নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

“উন্নয়নের এই গতি অব্যাহত রাখতে চাই জাতীয় ঐক্য আর রাজনৈতিক স্থিতি। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রবীণ রাজনীতিক হিসেবে এরশাদ সাহেব শেখ হাসিনার পাশে রয়েছেন জাতির অভিভাবক হিসেবে। এরশাদের আমলে সৃষ্ট অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের সমাপ্তি ঘটাচ্ছেন শেখ হাসিনা।”

সভায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানও বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আবু তালেব চৌধুরী।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীতের পর জাতীয় পার্টির দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছান। আগামী ২৪ জুলাই বাংলাদেশের উদ্দেশে তার নিউ ইয়র্ক ছাড়ার কথা রয়েছে।

সফরকালে প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ দূত ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে বৈঠকে করবেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির নেতারা।