শুক্রবার রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে অস্ত্রধারীরা ঢুকে দেশি-বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করার পর থেকেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে সময় পার করেন রোমের বাসিন্দারা। শনিবার তাদের দেশের নাগরিকদের মৃত্যুর খবরে অশ্রু ঝরে অনেকের চোখে।
ঢাকায় নিহতদের স্মরণে জার্মানির বিপক্ষে ইউরোর কোয়ার্টার-ফাইনাল ম্যাচে কালো ব্যাজ পরে খেলতে নামে ইতালির খেলোয়াড়েরা।
গত সেপ্টেম্বরে এই গুলশানে সন্ত্রাসী হামলায় ইতালির নাগরিক চেজারে তাভেল্লা খুন হওয়ার পর বছর না হতেই শুক্রবারের ঘটনা রোমের বাসিন্দাদের ওপর যে প্রতিক্রিয়া ফেলেছে তা তুলে ধরেছেন প্রবাসী হাসান মাহমুদ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শুক্রবার রাতে গুলশানে হামলার পর থেকেই ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সার্বক্ষণিক ঢাকায় ইতালীয় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যোগাযোগ বলে সর্বশেষ অবস্থা দেশের মানুষকে জানাচ্ছে।
“এ ঘটনায় ইতালির ৯ জন নাগরিকের মৃত্যুতে গোটা রোম শহর যেন শোকের চাঁদরে ঢেকে আছে। নাগরিকদের মুখের দিকে তাকালে তা স্পষ্ট বোঝা যায়। জিন্সের প্যান্ট ও গেঞ্জি গায়ে ছেলে-মেয়েদের অনেককে আমি কাঁদতে দেখেছি।”
রোমের বাসিন্দাদের শোকার্ত অনুভূতি তাকেও ছুয়ে গেছে বলে জানান।
তিনি “দুপুরে সিএনএন’র উপস্থাপক যখন ইতালীয়দের মৃত্যু সংবাদ জানাচ্ছিল, তখন ইতালীয় নাগরিকদের কান্নার মর্মস্পর্শী দৃশ্য দেখে আমি নিজেই অশ্রুসজল হয়ে পড়েছিলাম। অনেককে দেখেছি সে সময় একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে।”
এরপরেও ঢাকার সর্বশেষ অবস্থা জানতে অনেকেই টিভি পর্দায় চোখ রাখছেন বলে জানান তিনি।
গুলশানের এই হত্যাকাণ্ড রোম প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও বিচলিত করে তুলেছে জানিয়ে হাসান মাহমুদ বলেন, “রোমে আমরা যারা বাংলাদেশিরা আছি, তারাও বাংলাদেশে এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন ও বিচলিত। মনে হচ্ছে যেন পরিস্থিতি খারাপের দিকে এগোচ্ছে।”
ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওলো জেনতিলোনিও শনিবার ঢাকায় হামলায় তাদের নয় নাগরিক নিহত এবং একজন নিখোঁজ থাকার খবর জানান।
পরে নিহত নাগরিকদের পরিচয় প্রকাশ করে ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এরা হলেন- নাদিয়া বেনেদিত্তো, ভিনসেনজো দ আলেস্ত্রো, ক্লদিও মারিয়া দান্তোনা, সিমোনা মন্টি, মারিয়া রিভোলি, আডেলে পুগলিসি, ক্লদিও চাপেলি, ক্রিস্টিয়ান রোসিস ও মারকো তোনডাট।
ঢাকার কূটনীতিকপাড়া গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে একদল অস্ত্রধারী ঢুকে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেয় নিরাপত্তা বাহিনী।
আইএসপিআর জানায়, ওই রেস্তোরাঁ থেকে ২০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়, যাদের ১৭ জন বিদেশি নাগরিক। রাতেই তাদের গলা কেটে হত্যা করে হামলাকারীরা।
নিহতদের মধ্যে নয়জন ইতালীয় ছাড়াও সাতজন জাপানি এবং একজন ভারতের নাগরিক। বাকি তিনজন বাংলাদেশি, যাদের মধ্যে একজনের যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিকত্ব রয়েছে।