অর্পিত সম্পত্তি: আমলাদের দুষলেন সুরঞ্জিত

সরকার চাইলেও আমলাদের কারণে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণের কাজ দ্রুত শেষ করা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

লাবলু আনসার, নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2016, 06:40 AM
Updated : 8 Feb 2016, 02:05 PM

রোববার নিউ ইয়র্কে প্রবাসীদের এক অনুষ্ঠানে আইন ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত বলেন, “শত্রু সম্পত্তি আইন বাতিল করা হলেও তা কার্যকর হয়নি আমলাদের কারণে। নানা ঝক্কিঝামেলার দোহাই দিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সে সব সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ কার্যকর হচ্ছে না।”

১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যেসব নাগরিক এ দেশ থেকে ভারতে চলে যান, তাদের স্থাবর সম্পত্তি তৎকালীন পাকিস্তান সরকার শত্রু সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত করে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে নাম পরিবর্তন করে অর্পিত সম্পত্তি করা হয়। সরকারি হিসেবে বাংলাদেশে অর্পিত সম্পত্তির পরিমাণ ছয় লাখ ৬০ হাজার একর।

প্রত্যর্পণযোগ্য অর্পিত সম্পত্তির তালিকা থেকে সরকারের দখল বা ইজারার বাইরে থাকা সম্পত্তি বাদ দিয়ে ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর জাতীয় সংসদে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (সংশোধন) আইন পাস করা হয়।

কিন্তু মাঠ পর্যায়ের এক শ্রেণির দুর্নীতিগ্রস্ত ভূমি কর্মকর্তার ‘অসাধু তৎপরতার কারণে’ প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়ন জাতীয় নাগরিক সমন্বয় সেল’ এর।

সংগঠনটির অভিযোগ, অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে মামলায় আপিল ট্রাইব্যুনালে সরকার হেরে গেলে সম্পত্তি প্রত্যর্পণে গড়িমসি করা হচ্ছে। এর ফলে সম্পত্তি পেতে ভুক্তভোগীদের অনেক সময় লাগছে।

নিউ ইয়র্কে রোববার এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুক্তরাষ্ট্র শাখার নতুন কমিটির শপথ হয়।

নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুক্তরাষ্ট্র শাখার নতুন কমিটির শপথ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক ইচ্ছা ও আগ্রহ থাকলেও ‘প্রশাসনের সহযোগিতার অভাবে’ ওই আইনের সুফল মানুষ পাচ্ছে না।

সরকার ও প্রশাসনের সর্বস্তরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্যে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “দুজন প্রতিমন্ত্রী বানিয়ে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৯ শতাংশের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।”

এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘বিশ্বের ক্ষমতাধর অনেকের’ টেলিফোন এবং অনুরোধকে পাত্তা না দিয়ে একাত্তরের ঘাতকদের বিচারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবিচল রয়েছেন, যা তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের কোনো সরকারপ্রধানের জন্যে ‘খুবই চ্যালেঞ্জের বিষয়’।

“শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেই এটি সম্ভব হয়েছে। এ থেকেই বুঝতে হবে- বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কতোটা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ,” বলেন তিনি।

বিএনপির রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সমালোচনায় সুরঞ্জিত বলেন, “বুদ্ধি আসে লন্ডন থেকে, কার্যকর হয় ঢাকায়। এভাবে কী একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল চলতে পারে?”

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন না করলে বিএনপিকে ‘আজকের নাজুক পরিস্থিতির’ শিকার হতে হতো না বলেও মত দেন সুরঞ্জিত।

নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুক্তরাষ্ট্র শাখার নতুন কমিটির শপথ অনুষ্ঠানে অতিথিরা।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন এবং নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসানও নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস সংলগ্ন গুলশান টেরেস পার্টি হলে এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি নব্যেন্দু বিকাশ দত্তের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠান অন্যদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র শাখার বোর্ড অব গভর্নরসের চেয়ারম্যান অশোক কর্মকার ও সদস্য-সচিব চন্দন সেনগুপ্ত বক্তব্য দেন। সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক স্বপন কে দাস।

বিদায়ী কমিটির আহ্বায়ক অশোক কর্মকার শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।

জাতিসংঘের আয়োজনে মাদকবিরোধী একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে রোববার নিউ ইয়র্কে পৌঁছান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

সোম ও মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) চেয়ারম্যান সাবের হোসেন চৌধুরী।