রোববার উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী যুক্তরাজ্য শাখার ৮ম প্রযোজনা ‘ইঁদারা’ মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ‘সিজন অব বাংলা ড্রামা’র ১৩তম আসর।
মাসব্যাপী চলা বিলেতে বাংলা নাটকের সবচেয়ে বড় এই উৎসবের আয়োজক পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল।
উৎসবের শেষ দিন বৈরী আবহাওয়া মাড়িয়ে ব্রাডি আর্ট সেন্টার মিলনায়তন পূর্ণ করে তুলেন ভিন্ন ভাষাভাষীর নাট্যপ্রাণ দর্শক। চল্লিশের দশকে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার ঘুণেধরা বৈষম্যপূর্ণ সমাজের চিত্র নিয়ে নাট্যকার মান্নার হীরার সৃষ্টি ইঁদারা।
অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও সেই একই সমাজ, একই সুবিধাভোগী মানুষ এবং সেই ধর্মীয় বিভাজন টুঁটি চেপে ধরে আছে বিশ্ব মানবতার। বিশ্বজুড়ে ধর্মীয় আগ্রাসনে বিপন্ন আজ মানবতা। অবিশ্বাস্যভাবে এই আধুনিক বিশ্বেও মানুষের পরিচিতির মূল আধার হয় তার ধর্ম, বর্ণ অথবা প্রতিপত্তি। ধর্ম বৈষম্যের বেড়াজাল থেকে বাদ যায় না নিষ্পাপ শিশুও। উগ্র ধর্মান্ধ মানুষদের মাঝে রক্তের হোলি খেলা নিয়েই ইঁদারা।
দর্শকদের সঙ্গে মঞ্চায়ন পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় নাটকটির নির্দেশক উজ্জ্বল দাশ বলেন, ‘ধর্ম বর্ণ নিয়ে বৈষম্যহীন পৃথিবী চায় শান্তিকামী মানুষ, অন্যদিকে উগ্র ধর্মান্ধগোষ্ঠি বিভেদের দেয়াল তৈরিতে মত্ত। চারপাশে প্রযুক্তির বিকাশ ঘটলেও আমাদেও মানস চৈতন্যের বিকাশ ঘটেনি। ইঁদারার প্রেক্ষাপট আর আজকের পৃথিবীর ফারাক কোথায়!’
লন্ডনের বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রেস মিনিষ্টার নাদিম কাদির তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘নাটকটি আমাকে গভীর ভাবে ছুঁয়ে গেছে। ১৯৭১ সালে আমার বাবাকে যখন পাকিস্তানিরা ধরে নিয়ে যায় সেদিন আমার মাকে প্রথম প্রশ্ন করেছিল হিন্দু না মুসলমান? সেই একই অবস্থা থেকে আমরা এখনো বের হয়ে আসতে পারিনি।’
দর্শকদের ভালবাসা আর উপস্থিতিতে উচ্ছসিত যুক্তরাজ্য উদীচীর নাট্য সম্পাদক অসীম চক্রবর্তী। তিনি বলেন ,‘উদীচী গণমানুষের কথা বলে। আমরা স্বপ্ন দেখি ভেদাভেদহীন অসাম্প্রদায়িক পৃথিবীর। ভিনদেশে নাট্যচর্চা অনেক কষ্টসাধ্য বিষয়। প্রাণের তাগিদে আমরা চেষ্ঠা করি আর দর্শকদের অকুন্ঠ সমর্থন আগামীর প্রেরণা।’
নাটকটিতে অভিনয় করেছেন উজ্জ্বল দাশ, নুরল ইসলাম, অসীম চক্রবর্তী, জুয়েল রাজ, ফিরোজ আলী, নজরুল ইসলাম, সামসুদ্দীন, শাহ রাসেল, মুসলেহ জাহিন এনামুল, প্রশান্ত দাশসহ আরও অনেকে। শাগুফতা শারমিন তানিয়ার পোশাক পরিকল্পনা ও মঞ্চসজ্জা আর প্রযোজনাটির সমন্বয়কারী ছিলেন অসীম চক্রবর্তী।
প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা সরাসরি আমাদের জানান। নাম, ঠিকানা ও সংশ্লিষ্ট ছবিসহ লেখা পাঠিয়ে দিন এই ঠিকানায় probash@bdnews24.com