পরিবেশবান্ধব ‘রিপেয়ার ক্যাফে’

জার্মানরা পরিবেশ সচেতন জাতি বলে পরিচিত৷ আবর্জনা পৃথকীকরণ ও রিসাইক্লিং-এর ব্যাপারে তাদের জুড়ি নেই৷

রায়হানা বেগম, জার্মানির ডুইসবার্গ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2015, 11:28 AM
Updated : 1 August 2015, 11:28 AM

আবার পশ্চিমা অনেক দেশের মতো জার্মানিতেও পুরানো জিনিসপত্র ফেলে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়৷ মেরামতের খরচ অনেক বেশি বলে ভাঙা বা পুরানো জিনিসপত্র ফেলে দেওয়া ছাড়া অনেক সময় উপায়ও থাকে না৷

তাই মাঝে মাঝে বিভিন্ন বাড়ির সামনে পড়ে থাকতে দেখা যায় বিবর্ণ আসবাবপত্র, ভাঙা সোফা, চেয়ার, টেবিল, টিভি, ফ্রিজ, ওভেন, কফি মেশিন, টোস্টার ইত্যাদি৷ ভারপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ ওইসব সামগ্রী নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দেয়৷ তবে সব কিছুই যে ভাঙাচোরা তা নয়, কোনো কোনো জিনিস আবার ব্যবহার করার মতো৷ অনেকে বেছে বেছে কিছু জিনিস কুড়িয়েও নিয়ে যায়৷ তবে বেশিরভাগের স্থান হয় আবর্জনার কন্টেইনারে৷ ফলে অর্থ ও সম্পদের যেমন অপচয় হয়, তেমনি পরিবেশ দূষণও কম হয় না৷

ছোটখাট আসবাবপত্র ভেঙে গেল, ইলেক্ট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি বিগড়ে গেলে কিংবা কাপড়-চোপড় একটু ছিড়ে গেলে সস্তায় আবার ঠিক করা যায় কিনা তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন নেদারল্যান্ডস-এর কয়েকজন উদ্যোগী ব্যক্তি৷ গড়ে তোলেন ‘রিপেয়ার ক্যাফে’। ২০১০ সালে আমস্টারডামে যাত্রা শুরু হয় এই প্রকল্পের৷ এরপর বিশেষ করে ব্লগারদের মাধ্যমে এই আইডিয়া ছড়িয়ে পড়ে নানা দেশে৷ ইতোমধ্যে বেলজিয়াম, ফ্রান্স, কানাডা, অ্যামেরিকা ও জার্মানিসহ বিশ্বের ১৮টি দেশে ৭৫০টি ‘রিপেয়ার কাফে’ গড়ে উঠেছে৷ জার্মানিতে এই ধরনের উদ্যোগ রয়েছে ৫০টির মত৷ ২০১২ সালে প্রথম কোলন শহর এই ধরণের ‘মেরামত প্রকল্প’শুরু হয়৷
ডুইসবুর্গ শহরও এক্ষেত্রে খুব পিছিয়ে নেই৷ ২০১৪ সালের ৩১ জানুয়ারি রুরঅর্ট এলাকায় ফ্রিচার্চ কমিউনিটির একটি ভবনে উদ্বোধন করা হয় ‘রিপেয়ার ক্যাফে’র৷ সাধারণত উপাসনা ও সমাজকল্যাণমূলক কর্মতৎপরতা চলে এই বাড়িতে৷ প্রতি মাসের শেষ শুক্রবার বসে অচল জিনিসপত্র সারাবার ‘আসর’৷ কফি মেশিন, ভ্যাকিউম ক্লিনার, ইলেকট্রিক শেভার, টোস্টার, ভিডিও প্লেয়ার, ল্যাপটপ, একটু নষ্ট হয়ে গেলে কিংবা পোকায় কাটা কাপড় চোপড় ফেলে না দিয়ে এখানে নিয়ে আসেন অনেকে ৷ বিভিন্ন জিনিস মেরামতে অভিজ্ঞ ও দক্ষ কিছু স্বেচ্ছাসেবী নিজেদের সময় ব্যয় করে এই কাজে এগিয়ে আসেন৷ ত্রুটিপূর্ণ ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি ঠিক করার চেষ্টা করেন৷ কেউ বা সেলাইর মেশিন নিয়ে পোশাককে আগের রূপ দেওয়ায় ব্যতিব্যস্ত হন৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সফলও হন৷ ‘সাহায্যপ্রার্থী’দের এজন্য কোনো মজুরি দিতে হয় না৷ যন্ত্রাংশ কেনার জন্য অল্পস্বল্প খরচ হয় মাত্র৷
এসবের পাশাপাশি থাকে চা, কফি ও কেকের আয়োজন৷ দর্শনার্থীর ভিড়ও কম থাকে না৷ সব মিলিয়ে পরিবেশ জমজমাট হয়ে ওঠে৷ এই সবের জন্য স্বেচ্ছায় কেউ অর্থ দান করতে চাইলে করতে পারেন৷ এজন্য কোনো বাধ্যবাধকতা নেই৷ এই ধরনের তৎপরতায় একদিকে যেমন অর্থ ও সম্পদের অপচয় রোধ হয় অন্যদিকে পরিবেশ দূষণও হ্রাস পায়৷

আর তাই পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় অবদানের জন্য ডুইসবুর্গ শহরের পক্ষ থেকে ‘রিপেয়ার ক্যাফে’ প্রকল্পটিকে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হল এই বছর৷

প্রবাস জীবনের গল্প ও অভিজ্ঞতা এখন থেকে আমাদের সরাসরি জানাতে পারেন। পুরো নাম ও সংশ্লিষ্ট ছবিসহ লেখা পাঠিয়ে দিন এই ঠিকানায়  probash@bdnews24.com