‘দেশে একটা বিশ্ববিদ্যালয়েও যদি এমন হত’

ফলাফল বিশেষ ভালো না থাকায় ‘নামিদামি’ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির জন্য আবেদন করার সাহস পেলাম না।  

রাশেদ খান, যুক্তরাজ্যের বোল্টন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2015, 03:31 PM
Updated : 29 July 2015, 03:31 PM

গবেষণার বিষয় ও সুযোগ-সুবিধা মাথায় রেখে চলে এলাম যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার শহরের কাছেই ছোট শহরে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব বোল্টনে।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতি দেখেছি আর এই যুক্তরাজ্যের ছাত্র রাজনীতিও দেখলাম এখানে আসবার পরে। ক'বছর এই দেশে থাকার কারণে এখানকার জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতি দেখার সুযোগও হল। 

বোল্টনে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরুর মাসখানেক পরই পেলাম ছাত্র ইউনিয়নের নির্বাচন। পিএইচডি করছি বলে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাটা ঠিক মনেই ধরল না। তবে নির্বাচনের পরিবেশ বেশ মনে ধরল। তেমন একটা রাজনৈতিক প্রভাবও চোখে পড়ল না। প্রচারণাও যেমন তেমন।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কিছুদিন পর এক সপ্তাহজুড়ে নির্বাচন হল, খুব বেশি শিক্ষার্থীকে ভোট দিতে দেখলাম না। ভাবতে থাকলাম আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের অবস্থা নিয়ে। যে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনের পরিস্থিতিটা কেমন আর নির্বাচনই বা কেমন, কখন কীভাবে হয় এবং তার ভবিষ্যতই বা কী?

এর কয়েক মাস পর এল বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্নিং বডিতে শিক্ষার্থী সদস্য পদের নির্বাচন। এটা শুধু পিএইচডি করছেন এমন শিক্ষার্থীদের জন্য সীমাবদ্ধ। যথাসময়ে সব শিক্ষার্থীর কাছেই ইমেইল এল।

খেয়াল করলাম এই ব্যাপারে আগ্রহীর সংখ্যা খুবই কম। এদিকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়ে আসছে। যেহেতু একজনের নাম দিতেই হবে, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কয়েকজন আলোচনা শেষে অবাক করে দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন আমার নাম!

অন্য কোনোও মনোনয়নপত্র জমা না পড়ার কারণে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আমি ‘প্রথম’ বাংলাদেশি হিসাবে ইউনিভার্সিটি অব বোল্টনের শিক্ষার্থী সদস্য হিসাবে গভর্নর নির্বাচিত হয়ে গেলাম!

যা হোক বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইটে নিজের ছবি, প্রোফাইল দেখে কার না ভালো লাগে! আমারও লাগল! প্রথম মিটিংয়ে যখন আমি গেলাম সবাই অভিনন্দন এবং স্বাগত জানালেন। বাকি সদস্যদের সঙ্গে পরিচিত হলাম, নিয়ম-কানুন ও নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে পারলাম। জানলাম আমি নাকি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারকদের একজন!

এবার ভাবলাম আমাদের দেশের স্কুলের গভর্নিং বডি নির্বাচনের কথা, যাতে অভিভাকদেরও পদ থাকে, তাই নিয়েই কিছু তুলকালাম কাণ্ডের কথা পত্রিকায় আমরা পড়ি।

আর আমার এক বছরের অভিজ্ঞতা বলে এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের স্বার্থই আগে এবং ব্যক্তি স্বার্থ খুবই কম। এরইমাঝে গত এক বছরে কতগুলো সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি, কতগুলো বাদ দিয়েছি আর কতগুলো বিবেচনাধীন রয়েছে। কোড অব কন্ডাক্টের কারণে এরচেয়ে বেশি আমি বলতেও পারছি না।

দেখতে দেখতে একটি বছর শেষ হয়ে গেল। আবারও নির্বাচন। যথারীতি সবার কাছে ইমেইল এল। আমার মেয়াদ শেষের পর্যায়ে। তাই আবারও সবাই মিলে ঠিক করলাম কে হবে এবারের কার্যকর প্রতিনিধি।

মিটিং শেষে বেরিয়ে ভাবলাম আমার দেশে যদি অন্তত একটা বিশ্ববিদ্যালয় এমন হত!

প্রবাস জীবনের গল্প ও অভিজ্ঞতা এখন থেকে আমাদের সরাসরি জানাতে পারেন। পুরো নাম ও সংশ্লিষ্ট ছবিসহ লেখা পাঠিয়ে দিন এই ঠিকানায়  probash@bdnews24.com