টিউলিপের জয় ঠেকাতে হামলাও চালান তারেক: শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের জয় ঠেকাতে তারেক রহমান হামলাও চালিয়েছিলেন।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2015, 11:39 AM
Updated : 7 July 2015, 05:16 PM

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে বিজয়ী টিউলিপসহ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিন নারীকে অভিনন্দন জানিয়ে মঙ্গলবার সংসদে উত্থাপিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের উপর আলোচনায় একথা বলেন তিনি।

গত মে মাসের যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনের সময় বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপের জয় ঠেকাতে নানা ষড়যন্ত্রের কথা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছিলেন।

সংসদে শেখ হাসিনা বলেন, “তাকে (টিউলিপ) সেখানে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে। আপনারা জানেন, রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে খালেদা জিয়ার ছেলে ওখানে সব রকমের চেষ্টা করেছে টিউলিপ যেন জিততে না পারে। এমনকি ভোটারদের ওপর লোক পাঠিয়ে হামলা পর্যন্ত করিয়েছে।”

শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা মামলায় অভিযুক্ত বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক সাত বছর ধরে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। তাকে দেশে ফেরত এনে আদালতে দাঁড় করানোর দাবি জানিয়ে আসছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।     

যুক্তরাজ্যের হাউস অফ কমন্সে টিউলিপের সঙ্গে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী ও রূপা হকও নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের অভিনন্দন জানাতে বাংলাদেশের আইনসভায় ধন্যবাদ প্রস্তাবটি তোলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি।

ওই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় টিউলিপের খালা শেখ হাসিনা আরও বলেন, “শুধু ইংল্যান্ড নয়, ইউরোপের সব প্রবাসী বাংলাদেশি টিউলিপের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাকে সমর্থন জানিয়েছে। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি।

“আমরা তো সব হারিয়েছি। এই বাংলার মানুষের মাঝেই আমরা পিতা-মাতা-ভাই-বোন খুঁজে পেয়েছি। আমাদের লক্ষ্য দেশের মানুষের জন্য কাজ করা।”

এমপি হিসেবে খালার হাত থেকে শুভেচ্ছার ফুল নিচ্ছেন টিউলিপ সিদ্দিক (ফাইল ছবি)

বিজয়ী হওয়ার পর হাউস অফ কমন্সে ভাগ্নির প্রথম বক্তৃতার দিন সেখানে উপস্থিত হন বাংলাদেশের সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। 

তিনি সংসদে বলেন, “খুবই অবাক লাগে সেই ছোট্ট টিউলিপ আজ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে। সেখানে বক্তৃতা দিয়েছে, এত সাবলীলভাবে, চমৎকারভাবে কথাগুলো বলেছে, গর্বে আমাদের বুক ভরে গেছে। জয়-পুতুল-ববি আমরা সবাই উপস্থিত ছিলাম। এটা বিরল সম্মান সেখানে বসে দেখেছি।”

১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্ট পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরে টিউলিপের মা শেখ রেহানার প্রসঙ্গে বোন হাসিনা বলেন, “বাবা সততার সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। আমাদের এমন কোনো আর্থিক সঙ্গতি ছিল না বিদেশে পড়াশোনা করার।

“রেহানার বিয়ের ব্যাপারে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সাহেব আগেই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমাদের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল। আমাদের তখন কিছু নেই, কেউ নেই। পড়াশোনার খরচ দেওয়ার মতো কেউ ছিলেন না। আমার বাবার একজন বন্ধু, তিনি রেহানাকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দিলেন।”

“দুটি ছেলে-মেয়ে নিয়ে লন্ডনে যাওয়ার সঙ্গতি আমার ছিল না। সেখানে গিয়ে কোথায় থাকব? সম্পূর্ণ একা একা ওর (শেখ রেহানা) বিয়ে হয়। চাকরি করেই জীবন কাটায়। নিজের স্বামীর পড়াশোনার ব্যাপারে সহযোগিতা করে।”

১৯৮২ সালে টিউলিপের জন্মের সময় বোন রেহানার কাছেই ছিলেন শেখ হাসিনা। ওই সময়ের স্মৃতিচারণও করেন তিনি।

“ছোট্ট টিউলিপ লেখাপড়া শিখেছে, নিজে চাকরি করেছে। অতটুকু একটা ছোট মানুষ কী যে কষ্ট করতে পারে, ভাবলে অবাক লাগে!”

বাবার ছবির সামনে দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা (ফাইল ছবি)

বোন সম্পর্কে হাসিনা আরও বলেন, “আমার বাবা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, রেহানা প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে। এরপর আমি দুই বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছি, প্রধানমন্ত্রীর বোন। 

“রেহানা কিন্তু তার কষ্টের জীবন সেভাবেই কাটিয়েছে। কোনো সময় এতটুকু সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার কথা চিন্তাও করেনি। এখনও সে বাসে ঝুলে অফিসে যায়, এখনও সে নিজে উপার্জন করে চলে।”

১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফেরার পর নিজের ছেলে-মেয়েদের দেখভাল করার ক্ষেত্রে বোনের অবদানের কথাও বক্তব্যে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

“সে (রেহানা) শুধু নিজের ছেলে-মেয়ে নয়, আমার দুই সন্তানকেও মানুষ করেছে। আমি যখন দেশে ফিরে এসেছি, জয়-পুতুলকে ওই মানুষ করেছে। পাঁচটা বাচ্চার গার্জিয়ান রেহানা।”

ভাগ্নি টিউলিপের জন্য দোয়া চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর আমাকে আর রেহানাকে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে চলতে হয়েছে। রেহানা রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে লন্ডনে থেকেছিল বলেই আজ টিউলিপ নির্বাচিত হতে পেরেছে। এর মাধ্যমে তার যাত্রা শুরু হল। সকলের কাছে, দেশবাসীর দোয়া চাইব, যেন সে আরও সাফল্য অর্জন করতে পারে।” 

পাবনার মেয়ে রূপা হক এবং সিলেটের মেয়ে রুশনারা আলীও বাংলাদেশের মানুষের মুখ উজ্জ্বল করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

দীপু মনির আনা এই প্রস্তাবের উপর বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজসহ কয়েকজন সংসদ সদস্য আলোচনা করেন।

আলোচনা শেষে ধন্যবাদ প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে সংসদে গ্রহণ করা হয়।