আইজিপির বক্তব্যে প্রভাবিত হবে তদন্ত: বিএনপি

খালেদা জিয়ার কথা নিয়ে পুলিশ প্রধানের বক্তব্যে নাশকতার মামলাগুলোর তদন্ত প্রভাবিত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2015, 12:28 PM
Updated : 6 July 2015, 12:28 PM

পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হকের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই আশঙ্কার কথা জানান বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন।

তিনি বলেন, “পত্রিকায় দেখলাম শহীদুল হক সাহেব বলেছেন, কারা পেট্রোল বোমা মেরেছে, গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে, তা সূর্যের আলোর মতো স্বচ্ছ।

“এরকম বক্তব্য দিয়ে আইজিপি কী বোঝাতে চেয়েছেন, আমরা তা জানি না। উনি যদি বিরোধী দলকে উদ্দেশ্য করে ওই কথা বলে থাকেন। তাহলে আমরা মনে করি, পুলিশ প্রধানের মুখ থেকে যখন এই ধরনের বক্তব্য আসে, তখন স্বাভাবিকভাবে তদন্ত প্রক্রিয়া প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। অধস্তন কর্মকর্তারা যখন বাহিনী প্রধানের মনোভাব অনুধাবন করেন, তখন সেখান নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করাটা কঠিন হয়ে যায় চাকরি বাঁচানোর স্বার্থে।”

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের অবরোধ-হরতালে গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার অনেক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় খালেদাসহ বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আসামি করেছে পুলিশ। তবে বিএনপি নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

এর মধ্যেই গত শুক্রবার এক ইফতার অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেন, “পুলিশই আমাদের আন্দোলনের সময় পেট্রোল বোমা মেরেছে। শুধু বোমা নয়, বাসে আগুনও দিয়েছে তারা।”

এর প্রতিক্রিয়ায় আইজিপি শহীদুল হক শনিবার বলেন, “পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য কেউ রাজনৈতিক বক্তব্য দিলে তা দুঃখজনক। উনার (খালেদা জিয়া) বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা চাইব সমাজে যারা দায়িত্বশীল, তারা দায়িত্বশীল কথা বলুক।”

দলীয় প্রধানের বক্তব্যের পক্ষে রিপন বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া যেই অভিযোগটি করেছেন, তার পেছনে নিশ্চয়ই যুক্তি আছে, তার পর্যবেক্ষণ আছে। তবে তার ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ প্রধানের বক্তব্য একেবারেই অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত।

“একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধানকে যখন সরকারের কোনো বাহিনী প্রধান বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) বক্তব্য দেবেন দায়িত্বশীল হয়ে। এটা কী খুব শোভন? আমি এই প্রশ্নটি জনাব শহীদুল হক সাহেবকে করতে চাই।”

আসাদুজ্জামান রিপন (ফাইল ছবি)

শহীদুল হকের ‘রাজনৈতিক’ বক্তব্যে রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনী বিরোধী দলের উপর খড়গহস্ত হয়ে উঠতে পারেন বলেও শঙ্কার কথা জানান বিএনপি নেতা।   

“আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যদি বিরোধী দলের প্রতি বিরূপ মনোভাপন্ন হয়ে ওঠেন, তাহলে গণতান্ত্রিক স্পেস তো দূরের কথা, লাইভ স্পেসই সংকটে পড়ে যাবে। এতে আমরা আতঙ্কিত।”

পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় যে কোনো বাহিনীর প্রধানরা বক্তব্যের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল হবেন বলেও প্রত্যাশা করেন রিপন।

“রাজনীতিকদের মতো কথা-বার্তা বলা তাদের জন্য শোভন নয়। তাদের দেখভাল করার জন্য মন্ত্রী আছেন। তাদের সঙ্গে রাজনীতিকদের বাহাস হবে। কেন পুলিশ প্রধান বাহাসে জড়িয়ে যান, তা আমাদের বোধগম্য নয়।”

শিক্ষা সচিবের সমালোচনা

একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি জটিলতা নিয়ে শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খানের বক্তব্যের সমালোচনাও করেন বিএনপি নেতা রিপন।  

তিনি বলেন, “একজন মন্ত্রী হচ্ছেন মন্ত্রণালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সচিব নন। অথচ আমরা দেখলাম শিক্ষামন্ত্রীর সামনে একজন সচিব টি-টোয়ান্টি, ছক্কা মারার কথা বলেন, জিরোতে আউট, রান আউটের কথা বলেন। একটা অদ্ভুত দেশে আমরা বাস করছি। আমরা জানতে চাই, মন্ত্রীর সামনে একজন সচিবের এধরনের বক্তব্য দেওয়া সরকারি চাকরিবিধির মধ্যে পড়ে কি না।”

সচিবের সমালোচনা করলেও ভর্তি জটিলতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে সাধুবাদ দিয়েছেন বিএনপির মুখপাত্র।

তবে তিনি সেই সঙ্গে বলেন, “বিনা ভোটের এমপি-মন্ত্রীরা সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর আইনানুগ কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে পারছেন না। এজন্য একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।”

নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা সাখাওয়াত হোসেন জীবন, জন গোমেজ, আসাদুল করীম শাহিন, সেলিম রেজা হাবিব, সুলতানা আহমেদ, শামসুল আলম তোফা উপস্থিত ছিলেন।