‘মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাই দুর্নীতিতে জড়িত’

দুর্নীতি দমনে সরকারের কঠোর পদক্ষেপের ঘোষণা থাকলেও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাই দুর্নীতিতে জড়িত বলে দাবি করেছেন বিরোধী দলের এক সংসদ সদস্য।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2015, 11:21 AM
Updated : 30 June 2015, 11:21 AM

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরের বাজেট পাসের প্রক্রিয়ায় ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন জাতীয় পার্টির সাংসদ মাহজাবীন মোরশেদ।

তিনি বলেন, “দুর্নীতি দমনে সরকার অনেক পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সরকারি কর্মকর্তারা দুর্নীতি করেও পার পেয়ে যাচ্ছে।”

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, “যেখানেই হাত দেন সেখানেই দুর্নীতি। হাজার কোটি টাকা কীভাবে লুট হয়? এ দুর্নীতির সঙ্গে দুয়েকজন রাজনীতিবিদও জড়িত।”

সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মিলন বলেন, স্বাধীনভাবে দুদক কাজ করতে পারে না। এ সংস্থার কোনো ক্ষমতা নেই।

ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপন করতে গিয়ে মাত্র এক মিনিট সময় দেওয়ারও সমালোচনা করেন হাজী সেলিম, শওকত চৌধুরী, ফখরুল ইমাম ও আব্দুল মতিন।

তারা বলেন, এতো কম সময়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা সম্ভব হয় না। আরো সময় দেওয়া দরকার।

পরে সংসদ কাজে দুদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, “ছাঁটাই প্রস্তাবের এসব আলোচনা সবার জন্য উপকারী। আশা করি, এ আলোচনা থেকে দুদক আরো বলীয়ান হবে। এখন সংস্থাটি স্বাধীনভাবে কাজ করছে।”

মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় রাজাকারের সন্তান ও ভুয়া

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে এখনো তালিকাভুক্ত না হওয়া ও ভাতা না পাওয়ার সমালোচনা করে তালিকায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারের ছেলেরা রয়েছে বলে দাবি করেছেন একাধিক সংসদ সদস্য।

নুরুল ইসলাম মিলন বলেন, “রাজাকারের সন্তানেরা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রয়েছে। এখনো সঠিক তালিকা হচ্ছে না। বাদ পড়েছে অনেকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা।”

চাকরির মেয়াদ বাড়াতে সরকারি চাকুরেদের মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেওয়া ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তুলে ধরেন নুরুল ইসলাম ওমর।

বয়স বিবেচনায় ভাতা না দিয়ে সব মুক্তিযোদ্ধাকে সমান ভাতা দেওয়ার দাবি জানান মাহজাবীন মোরশেদ।

মু্ক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেওয়ায় বয়সের কারণে বিভাজন হবে না।”

শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি

ছাঁটাই প্রস্তাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করতে গিয়ে বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব দিলেও আলোচনায় অংশ নিয়ে এ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি করেছেন সংসদ সদস্যরা।

স্বতন্ত্র সদস্য হাজী সেলিম, জাতীয় পার্টির মাহজাবীন মোরশেদ ও এম এ হান্নান কোচিং ব্যবস্থা বন্ধ না হওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করেন।

শওকত চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মিলন, ফখরুল ইমাম, নুরুল ইসলাম ওমর এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন।

তাদের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী দাবি করেন, উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এখন শিক্ষাখাতে বরাদ্দ অর্থের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করছে।

তিনি জানান, গত বছরের তুলনায় শিক্ষা খাতে উন্নয়ন বরাদ্দ মাত্র ৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ বেড়েছে। কিন্তু অনেক মন্ত্রণালয় আগের বছরের চেয়ে ৮ হাজার কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ পেয়েছে।

“এখন দেড় টাকা নিয়ে দুই টাকার কাজ করতে হচ্ছে। যাতে কম টাকা দিয়ে বেশি সম্পদ পেতে পারি-সে চেষ্টাই করা হচ্ছে। শিক্ষার মান বৃদ্ধি এক/দুই বছরের বিষয় নয়। তা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে।”

শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, “শিল্পখাতের উন্নয়নে কাজ চলছে। দূষণমুক্ত রাখতে অবৈধ দখলমুক্ত করতে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে, সরকারকেও সহায়তা করতে হবে।”

আগামী অর্থবছরের বাজেটের ওপর সংসদে উত্থাপিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খাতের ৫৬টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে সাতটি মন্ত্রণালয়-সংস্থার বিষয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সাংসদেরা বিভিন্ন ধরনের ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন।

ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো ছিল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, জনপ্রশাসন, শিক্ষা, শিল্প, স্বাস্থ্য, দুর্নীতি দমন কমিশন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নামে মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে।

তবে বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের আলোচনার পরেও ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে বাতিল হয়। 

সকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়।