খাদ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চায় বিএনপি

ব্রাজিল থেকে ‘পচা গম’ আমদানির জন্য খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামকে দায়ী করে তার পদত্যাগ চেয়েছে বিএনপি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2015, 08:56 AM
Updated : 30 June 2015, 11:43 AM

মঙ্গলবার দুপুরে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে দলের মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, এই গম কেলেঙ্কারির হোতা খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। একজনকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দিলে সরকারের ভাবমূর্তি কমে না, বরং বাড়ে।

“আমরা মনে করি, গম কেলেঙ্কারির হোতা খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সাহেবের লাজ-লজ্জার বালাই থাকলে অনতিবিলম্বে তার পদত্যাগ করা উচিৎ।”

একই সঙ্গে ‘কার স্বার্থে ব্রাজিল থেকে পচা গম আমদানি করা হয়েছে’- সরকারের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেন রিপন।

সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রণালয় ব্রাজিল থেকে ২ লাখ টন গম আমদানি করে, যা ‘মানহীন’ ও মানবদেহের জন্য ‘ক্ষতিকর’ বলে গণমাধ্যমেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এই গম নিতে পুলিশ ও বিজিবি অস্বীকৃতি জানানোর পর প্রধানমন্ত্রী এনিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বলে সংবাদ মাধ্যমের খবর।

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে ব্রাজিলের গম বিষয়ে সরকারি তদন্তের ফলাফল নিয়েও প্রশ্ন তুলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রিপন।

তিনি বলেন, “কয়েকদিন আগে আমরা বলেছিলাম কামরুল ইসলাম স্বপদে বহাল থাকলে তদন্ত সঠিক হবে না। সেদিন তার পদত্যাগ দাবি করিনি। বলেছিলাম, তিনি পদ থেকে সরে গেলে তদন্তটি সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।

“কিন্তু কামরুল ইসলাম নিজের পদে থেকে জনগণের চাপে তথাকথিত একটি তদন্ত করেছেন, তাতে করে প্রকৃত পক্ষে তদন্তের ফলাফল প্রভাবিত হয়েছে, নিরপেক্ষ হয়নি।।”

তদন্তের ফল তুলে ধরে তিনি বলেন, ৩১টি গুদামের গম পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে ৮টি গুদামের ফলাফল খুব খারাপ এসেছে, ২৩টি গুদামের ফলাফল ভালো এসেছে।

“আমরা জানি না, ২৩টি গুদামের প্যাকেটে ভালো গম দেওয়া হয়েছিল না ব্রাজিলিয়ান গম দেওয়া হয়েছিল। ব্রাজিল থেকে আনা গম দেওয়া হলে ফলাফল একই হওয়ার কথা।”

তিনি বলেন, যে গম সরকার আমদানি করেছে, তা খেলে পেটের পীড়া হয়, শরীর দুর্বল হয়ে যায়, মাথা ঘুরে। ৩/৪ দিন ওই গম রাখা হলে তা থেকে কীটের জন্ম হয়।

“পত্রিকান্তরে দেখলাম-খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বললেন, ‘পুলিশকে এই গম দেওয়া হয়েছিল, তারা সেই চালান ফেরত দিয়েছে। এখন আমরা বিভিন্ন প্রকল্পে দিচ্ছি।’

“প্রকল্পগুলো কি? কাজের বিনিময়ে খাদ্য, বিভিন্ন সৃজনশীল প্রকল্প, বয়স্ক ও যুদ্ধাহতদের প্রকল্পগুলোতে দেওয়া হচ্ছে। যে গম পুলিশ খেতে অস্বীকৃতি জানায়, তা গরীব মানুষের কাছে বিতরণ করা হচ্ছে- এটা অত্যন্ত পরিতাপের।”

গম ফেরত পাঠানোর জন্য পুলিশ বাহিনীকে সাধুবাদ জানিয়ে রিপন বলেন, “পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সাহসের সাথে ওই পচা গম ফেরত পাঠিয়েছেন। এই গম যে পচা, এটা খেলে শরীর খারাপ হয়, স্বাস্থ্যহানি ঘটতে পারে- এই নিমর্ম সত্য উচ্চারণ করেছেন, সেজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই।

“সরকার ওই গম প্রত্যাহার করে গরিব মানুষের কাছে বিতরণ করছে। আমরা বলতে চাই, গরিব মানুষ কি দেশের মানুষ নয়, তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের কি ভাবনা নেই? এই সরকার কি শুধু বড় লোকের সরকার।?

“সরকার গরিবদের স্বাস্থ্য নিয়ে টালবাহানা করছে। তারা মনে করেছে, পচা গম ও পচা আটা খাওয়ার লোক হচ্ছে গরিবরা। এটা অত্যন্ত পরিতাপ ও লজ্জার।’

প্রশাসনের হাত লম্বা

উচ্চ আদালত থেকে জামিন দেওয়ার পরও বিএনপি নেতারা মুক্তি না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, “প্রথম দফায় উচ্চ আদালতে পার্টির মহাসচিবের জামিন হলেও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে তা আটকে যায়। এরপর মাননীয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে বেঞ্চ থেকে আবারো অভিমত দেওয়া হলো, তার জামিনে মুক্ত হতে আর কোনো বাধা নেই। তারপরও আমরা দেখলাম সরকারের তরফ থেকে আবারও চেম্বার জজের কাছে আবেদন করা হয়েছে।’

“আইনের হাত বড়। এখন দেখা যাচ্ছে প্রশাসনের হাত তার চেয়েও বড়। আইন স্বাভাবিক গতিতে চলছে না। স্বাভাবিকভাবে আইনকে চলতে দেওয়া হচ্ছে না। যার কারণে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ আমাদের নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, শামসুজ্জামান দুদু ও রুহুল কবির রিজভী মুক্তি পাচ্ছেন না। আমরা সরকারের কাছে প্রত্যাশা করেছিলাম, এই রোজার মাসে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মুক্তি পাবেন।

“আমরা বলতে চাই, বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলায় জর্জরিত করে যদি সরকার মনে করে থাকেন, তারা ফায়দা পাবেন, বিরোধী দলকে দুর্বল করা যাবে, এটা সঠিক নয়। বিরোধী দলকে এভাবে দুর্বল করা যাবে না।”

সংবাদ ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান, আবদুস সালাম আজাদ, আবদুল লতিফ জনি, ফোরকান ই আলম ও মাহবুবুল হক নান্নু উপস্থিত ছিলেন।