যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন ‘অসম্মানজনক’: বিএনপি

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে মানবাধিকারের যে পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে, তাকে ‘অসম্মানকজনক’ বলে আখ্যায়িত করেছে বিএনপি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2015, 03:33 PM
Updated : 27 June 2015, 03:33 PM

শনিবার দুপুরে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ মন্তব্য করেন দলের মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন।

তিনি বলেন, “এই প্রতিবেদনকে আমরা সাদুবাদ জানাই না এই কারণে যে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা- ইত্যাদি নানা বিষয়ে নেতিবাচক কথাগুলো একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে সম্মানজনক নয়। নাগরিক হিসেবে আমরা একে সম্মানজনক বলে মনে করি না।

“আমরা বিরোধী দলের আছি, বাংলাদেশ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে বলে আমরা খুব পুলকিত, তা কিন্তু আমরা বলছি না। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ইতিবাচক ধারার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। সেজন্য আমরা বলছি এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার কারণে বিএনপি উল্লসিত নয়।”

২০১৪ সালে বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়। এতে বাংলাদেশের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, কারখানার ‘দুর্বল’ কর্মপরিবেশ ও শ্রম অধিকার লঙ্ঘন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ওপর ‘নিয়ন্ত্রণ আরোপ’কে বাংলাদেশের মানবাধিকারের অন্যতম সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এতে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর ‘নির্যাতন’, সরকারি খাতে ‘বিস্তৃত দুর্নীতি’, ‘নির্বিচারে’ আটক, ‘দুর্বল’ বিচার ব্যবস্থা এবং বিচার চলাকালে দীর্ঘ সময় আটক রাখার মতো বিষয়কেও ‘গুরুতর সমস্যা’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কাযার্লয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রিপন বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর যে কান্ট্রি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তাতে বাংলাদেশের ব্যাপারে যেসব কথা তুলে ধরা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে বাস্তব পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ।

“প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার চিত্র, সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার চিত্র, মৌলিক অধিকারের চিত্র, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক দলের ওপর দমন-পীড়নের কিয়দংশের চিত্র প্রকাশিত হয়েছে বলে আমরা মনে করি। প্রকৃত অবস্থা অনেক বেশি জটিল ও ভয়াবহ।”

তিনি বলেন, প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকারের যে চিত্র প্রকাশিত হয়েছে, তা ইতিমধ্যে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে যে কথাগুলো প্রতিবেদনে উঠেছে, মূলত তা নেতিবাচক।

দেশের মিডিয়া ও সংবাদপত্রগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে রিপন বলেন, “আমাদের মধ্যে একটা সেলফ সেন্সরশিপ কাজ করছে। অথচ দেশের কোনো জরুরি অবস্থা নেই। দেশে কোনো বিশেষ ফরমান কিংবা এক্সিকিউটিভ আদেশ কিংবা রাষ্ট্রপতির বিশেষ কোনো ফরমান জারি করে মিডিয়ার স্বাধীনতা হরণ করা হয়নি।

“তা সত্ত্বেও মিডিয়ার মধ্যে এক ধরণে ভীতির পরিবেশ বিরাজ করছে। যার জন্য এই পেশার লোকেরা সেলফ সেন্সরের মুখোমুখি হয়ে পড়েছি কিংবা আমরা সেলফ সেন্সর্ড হয়ে পড়েছি। এটা যুক্তরাষ্টের মতো দেশেও তারা অনুভব করেছে, আমাদের দেশের মিডিয়া রিপোর্টের নেচারটা দেখে।”

দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে বিরোধী দলকে বাধার অভিযোগ

রিপন অভিযোগ করে বলেন, “খাগড়াছড়িতে আমাদের সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভুঁইয়া বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে গিয়েছিলেন, সেখানে তিনি বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। আমাদের দলের লোকেরা যাতে দুর্গতদের পাশে নির্বিঘ্নে দাঁড়াতে পারে, মানবিক তৎপরতায় বাধার সম্মুখীন না হয়- সরকারের কাছে এই দাবি জানাব।”

সংবাদ ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, কেন্দ্রীয় নেতা শাহজাদা মিয়া, আসাদুল করীম শাহিন, সেলিম রেজা হাবিব, হেলেন জেরিন খান ও শাম্মী আখতার উপস্থিত ছিলেন।