‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই’- মোদীকে বললেন খালেদা

বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে বাংলাদেশে ‘গণতন্ত্রহীনতার’ কথা তুলে ধরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2015, 09:58 AM
Updated : 8 June 2015, 05:01 AM

সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রোববার বিকালে দেখা করেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তিনি প্রায় ১৫ মিনিট নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একান্ত আলোচনা করেন বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।

প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার বৈঠক থেকে বেরিয়ে খালেদা সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শুধু বলেন, “সুন্দর আলোচনা হয়েছে।” পরে বিএনপি নেতা মঈন খান সাংবাদিকদের কাছে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরেন।

৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের পর বিএনপি বলে আসছে, আওয়ামী লীগের শাসনে বর্তমানে বাংলাদেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। 

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে ভারতের ‘আশীর্বাদ’ রয়েছে বলেও ওই নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে আসছিলেন।

দুই বছর আগে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ঢাকা সফরে তার সঙ্গে দেখা না করার পর তা নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা শুনতে হয় খালেদাকে।

তার মধ্যে এবার মোদীর এই সফরকে শুরু থেকে স্বাগত জানিয়ে আসছিল বিএনপি। সেইসঙ্গে বলে আসছিল, তারা কখনও ভারতবিরোধী ছিল না।

সফরের দ্বিতীয় ও শেষ দিন সোনারগাঁও হোটেলে খালেদা জিয়ার পাশাপাশি বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে সাক্ষাৎ দেন মোদী।

রওশন এরশাদ, ইনু ও মেনন দেখা করে আসার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যান খালেদা। তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিন সদস্য তরিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম খান ও মঈন খান এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সাবেক দুই কূটনীতিক রিয়াজ রহমান ও সাবিহ উদ্দিন আহমেদ।

মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, “কথা হয়েছে দেশের যুব সমাজ নিয়ে, শিশুদের নিয়ে, সর্বোপরি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তথা গণতন্ত্র অনুপস্থিতির বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে।”

খালেদা জিয়ার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর ১৫ মিনিট একান্ত আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা ওয়ান টু ওয়ান কথা বলেছেন।”

মঈন খান বলেন, বৈঠকের শুরুতে খালেদা জিয়া তার বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। এরপর নরেন্দ্র মোদীও তার বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। চমৎকার ও খোলামেলা পরিবেশে ‍দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে কী বলা হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা বলেছি, দুটি দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে হলে দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

“দেশে কোন সরকার আছে, তা মূল কথা নয়। সরকার আসবে, যাবে। কিন্তু জনগণ চিরদিনই থাকবে। সেজন্য দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বপূর্ণ ও আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হলে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।”

বাংলাদেশে বর্তমানে ‘গণতন্ত্র নেই’ দাবি করে বিএনপির পক্ষ থেকে মোদীকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যদি গণতন্ত্র না থাকে তা দক্ষিণ এশিয়ার জন্যও অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে।

‘গণতন্ত্রহীনতার’ বিষয়টি কেন ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলা হল- জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রী মঈন খান বলেন, “তিনি (মোদী) গণতন্ত্রে বিশ্বাসী একজন নেতা। তার জীবন-আর্দশ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ভারতের তৃণমূল থেকে আজ তিনি সর্বোচ্চ পদে এসেছেন।

“এটা সম্ভব হয়েছে, ভারতের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করার জন্য। যারা গণতন্ত্রকে মূল্য দেয়, তাদের সঙ্গেই গণতন্ত্রের কথা বলা যায়। তাই আমরা বলেছি।”

মধ্যবর্তী নির্বাচনের যে দাবি বিএনপি জানিয়ে আসছে, সে বিষয়ে মোদীর সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না- সাংবাদিকদের প্রশ্নে মঈন খান বলেন, “তার কাছে তো আমাদের দাবি-দাওয়ার বিষয় নয়।

“নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন সরকারের কথায় চলে...পুলিশ রাজনৈতিকভাবে বিরোধী দলের উপর হয়রানি-অত্যাচার করে, ব্যবসা-বাণিজ্য দলীয়ভাবে চলে, সে দেশে যে গণতন্ত্র নেই, তা আলোচনায় উঠে এসেছে।”

বাংলাদেশে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াও একইভাবে চলতে দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ বলে তা আলোচনায় এসেছে, বলেন মঈন খান।

মোদী আঞ্চলিক উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “সেটাকে যদি বাস্তবায়িত করতে হয়, গণতন্ত্রের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করে উন্নয়ন করতে হবে। আমরা স্পষ্ট করেছি, গণতন্ত্র ব্যতিরেকে উন্নয়ন টেকসই হতে পারে না।

“মধ্যম আয়ের দেশে যেতে চাইলে ঢাকা শহরে শুধু বড় বড় বিল্ডিং তৈরি করলে হবে না, মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা দিতে হবে। মানুষের অধিকার মানুষকে ফিরিয়ে দিতে হবে।”

এই প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিএনপি নেতা বলেন, “যারা গণতন্ত্রকে ধুলিস্যাৎ করেছে, তাদের সঙ্গে গণতন্ত্রের আলোচনা করা অত্যন্ত কঠিন।

“যদিও আমরা বার বার প্রস্তাব দিয়েছি, কয়েক বছর ধরে, আসুন আমরা আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক অচলাবস্থার নিরসন করি।”

ভারতের প্রধানমন্ত্রী এসব শুনে কী বলেছেন- জানতে চাইলে মঈন খান বলেন, “এটা তারা বলবে। আমার বলাটা যুক্তিসঙ্গত হবে না।”

বৈঠকে মোদীর সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর এবং ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার পংকজ শরণও ছিলেন।

মোদীর আগে ২০১১ সালে ঢাকা সফরকালে এই হোটেলেই ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে খালেদা জিয়া দেখা করেছিলেন। গত বছর নরেন্দ্র মোদীর সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গেও খালেদার বৈঠক হয়েছিল।

মোদীকে খালেদার উপহার

সাক্ষাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মা হীরাবাইয়ের জন্য তাঁতের বোনা জামদানি শাড়ি ও চাদর উপহার দেন খালেদা জিয়া। এছাড়া মোদীকে উপহার দিয়েছেন পাঞ্জাবি ও কটি।

বিএনপি নেতারা জানান, শনিবার রাতে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে এসব উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়।

গত বছরের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর মোদীর মায়ের জন্য শাড়ি উপহার পাঠিয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় মোদী তখন টুইটারে  লিখেছিলেন, “নওয়াজ শরিফজী আমার মায়ের জন্য সাদা রঙের একটি শাড়ি পাঠিয়েছেন। আমি সত্যিই তার প্রতি কৃতজ্ঞ। এই উপহার আমি শিগগিরিই মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেব।”